আনোয়ার হোসেন আকাশ,
রাণীশংকৈল (ঠাকুরগাঁও)প্রতিনিধি:

ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গীতে নিম্ন মানের সামগ্রী ব্যবহার করে রাস্তা মেরামতের অনিয়ম তুলে ধরে গত ০৬ নভেম্বর বিভিন্ন পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশের পর তড়িঘড়ি করে রাস্তা মেরামত কাজ শেষ করেছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানটি। কার্পেটিং এর কাজ নিম্নমানের হওয়ার কারণে মেরামত কাজ শেষ হওয়ার ২০ দিনেই উঠে যাচ্ছে পাথর।

মঙ্গলবার (২৯ নভেম্বর) সকালে উপজেলার চাড়োল ইউনিয়নের লাহিড়ী হতে পারিয়া বাজার পর্যন্ত ৫.১ কিলোমিটার রাস্তায় সরেজমিনে গিয়ে এমন দৃশ্য দেখা গেছে।

নজরুল ইসলাম নামে এক বৃদ্ধ অভিযোগ করেন, রাস্তায় যখন নির্মাণ কাজ চলতেছিল, তখন স্থানীয়রা বার বার নিম্ন মানের ইট ব্যবহারে না করতে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে অনুরোধ করেছে। সেটাতে কোন কর্ণপাত করেনি। পরে গত ০৪ নভেম্বর নিম্ন মানের কাজে বাধা দিতে গিয়ে স্থানীয় লোকজন ও ঠিকাদারের লোকজনের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে।

ঘটনাটি থানা পুলিশ, হাসপাতাল পর্যন্ত গড়ায়। তবুও বন্ধ হয়নি অনিয়ম, ঠিকাদারের লোকজন ইচ্ছেমত অনিয়ম করে গেছে। দায়িত্বে থাকা ইঞ্জিনিয়ার ও তার অফিসের লোকজন তো অন্ধ, দেখেও দেখে না।

পাড়িয়া বাজার থেকে খায়রুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তি ফিরছিলেন বাড়ীতে। বাইসাইকেল থামিয়ে তিনি বলেন, এই রাস্তার কাজ এক ঠিকাদার করে যাবেন। এরপরে ৩ মাসের মধ্যে পাথর উঠে যাবে। পরের মাসে আরেকজন ঠিকাদার এসে আবার মেরামত করে যাবেন। জনগণের টাকা এভাবে লুটপাট করে খাওয়ার জন্যই এসব নাটক। এগুলো বন্ধের দাবি জানান তারা।

বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা প্রকৌশল অধিদপ্তর সুত্রে জানা গেছে, চাড়োল ইউনিয়নের লাহিড়ী বাজার থেকে পশ্চিম দিকে পাড়িয়া বাজার পর্যন্ত ৫.১ কিলোমিটার রাস্তা মেরামতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৭৬ লাখ টাকা। ইমরান হোসেন নামে একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান কাজটি পেলেও মেসার্স রহমান এন্টারপ্রাইজের হয়ে সহকারী ঠিকাদার আসাদুজ্জামান লাভলু এ কাজটি বাস্তবায়ন করেছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আসাদুজ্জামান লাভলু নামে ওই ঠিকাদার বালিয়াডাঙ্গী উপজেলায় ২টি রাস্তা মেরামত ও ১টি রাস্তা পাকা নির্মাণের কাজ পেয়েছেন। স্থানীয়দের অভিযোগ, ৩টি রাস্তায় নিম্নমানের ইট ও সামগ্রী ব্যবহার করলেও খতিয়ে দেখার কেউ নেই।

অভিযোগ মানতে নারাজ ঠিকাদার আসাদুজ্জামান লাভলু। তিনি বলেন, নির্মাণ সামগ্রীর দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে কাজগুলো বাস্তবায়ন করতে একটু এদিক ওদিক করতে হচ্ছে। তারপরেও এ কাজে লাভ হবে না বলে জানান তিনি।

উপজেলা প্রকৌশলী মাইনুল ইসলামকে একাধিকবার ফোন করেও পাওয়া যায়নি। তাঁর কার্যসহকারী আবু সুফিয়ান বলেন, পার্শ্ববর্তী উপজেলা হরিপুরে বদলী করা হয়েছে প্রকৌশলী মাইনুল ইসলামকে। তিনি সেখানে দায়িত্ব বুঝে নিতে ব্যস্ত থাকতে পারেন।

ঠাকুরগাঁও এলজিইডির প্রধান প্রকৌশলী শাহারুল আলম মন্ডল আলম বলেন, গণমাধ্যমে প্রকাশে সংবাদগুলো আমাদের নজরে এসেছে। আমরা ওই ঠিকাদারের কাজের মান যাচাই করছি। আপাতত বিল বন্ধ রাখা হয়েছে।

এদিকে অনিয়মের সংবাদ প্রকাশের কারণে গত ২৪ নভেম্বর আজকের পত্রিকার বালিয়াডাঙ্গী প্রতিনিধি আল মামুন জীবনকে দেখে নেওয়ার হুমকি দেন ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের স্বত্ত্বাধিকারী আসাদুজ্জামান লাভলু ও তার সহযোগী ইমরান হাসান পান্না। এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে ২৫ নভেম্বর বিবৃতি দেয় ঠাকুরগাঁও রিপোর্টার্স ইউনিটি ও বালিয়াডাঙ্গী প্রেস ক্লাব।

ঠাকুরগাঁও রিপোর্টার্স ইউনিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রেজাউল প্রধান বলেন, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলে আমরা আন্দোলনে যাবো। সাংবাদিকরা অনিয়মের কাছে মাথা নত করবে না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *