আনোয়ার হোসেন আকাশ,
রাণীশংকৈল (ঠাকুরগাঁও)প্রতিনিধি:

ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈলে কোচিং সেন্টারের এক শিক্ষকের লাশ উদ্ধার করেছে থানা পুলিশ।

বৃহস্পতিবার (২৭অক্টোবর) সকালবেলা
উপজেলার ভরনিয়া বামনদিঘির পাশে এক আলুখেত থেকে হাতে ও শরীরে আঘাতযুক্ত শিক্ষকের লাশটি উদ্ধার করা হয়।

ওই শিক্ষক উপজেলার ধর্মগড় ইউনিয়নের ভরনিয়া সম্পদবাড়ী দক্ষিনপাড়ার নুরুল ইসলাম ও হোসনেআরা দম্পতির পুত্র হোসাইন আলী (২৮)। তিনি পেশায় একজন কোচিং শিক্ষক ছিলেন। সে একই এলাকার ভরনিয়াহাট আদর্শ কোচিং সেন্টারের শিক্ষকতা করতেন।

স্থানীয়রা ও পুলিশ জানায়, বৃহস্পতিবার ভোরে হাঁটাহাঁটি করার সময় রাস্তার ধারের আলু লাগারনোর জন্য প্রস্তুত খেতে একটি মরদেহ পড়ে থাকতে দেখেন কয়েকজন নারী। পরে স্থানীয়দের খবর দিলে তাঁরা পুলিশে খবর দেন। খবর পেয়ে মরদেহের উদ্ধার করে প্রাথমিক সুরতহাল তৈরি করে পুলিশ। এ ছাড়া ঠাকুরগাঁও জেলা পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) একটি দল ঘটনাস্থলে পরিদর্শন করেছে।

এদিকে পরিবারের দাবি, পূর্বশত্রুতার জেরে তাঁকে পরিকল্পিত হত্যা করা হয়েছে। নিহতের বোন রুমি, ছোট ভাই আব্দুর রাজ্জাক সাংবাদিকদের জানান, তাঁদের গ্রামেরই অনুকূল ও ইশার সঙ্গে তাঁর ভাইয়ের মামলা ছিল। ইশা ও অনুকূল আপন ভাই। অনুকূলের মেয়ের সঙ্গে তাঁর ভাই হোসাইনের প্রেম-ভালোবাসা থেকে বিয়ে হয়েছিল। সেই বিয়ে মেনে নেননি অনুকূল। পরে মামলা করে হোসাইনের কাছ থেকে মেয়েকে ছাড়িয়ে নিয়েছিলেন অনুকূল। কিন্তু হোসাইনকে দেখে নেওয়ার হুমকি দিয়েছিলেন তাঁরা।

নিহত হোসাইনের ভাই আব্দুর রাজ্জাক জানান, কিছুদিন আগে তাঁর ভাইকে রাস্তায় আটকান অনুকূল। এ সময় তাঁকে সপ্তাহখানেকের মধ্যেই দেখে নেবে বলে হুমকি দিয়েছিলেন তিনি।

এদিকে নিহতের বোন রুমি জানান, কোচিং সেন্টারে কিছুদিন আগে পড়ায় গাফিলতির কারণে এক শিক্ষার্থীকে শাসন করেছিলেন হোসাইন। সে কারণে তাঁকে বিভিন্ন ধরনের হুমকি দিয়েছিলেন ভরনিয়া এলাকার মুসা মাস্টার। নিহতের বোনের দাবি, অনুকূল, ইশা ও মুসা মাস্টার মিলে তাঁর ভাইকে হত্যা করে মরদেহ ধানখেতে ফেলে রেখেছেন। তাঁদের বিচারের দাবি করেন তিনি।

নিহত হোসাইনের মা হোসনা খাতুন বলেন, ‘কিছুদিন আগে এক শিক্ষার্থীকে পড়ায় গাফিলতির কারণে শাসন করার অভিযোগে মুসা মাস্টার মারের বদল মার দেওয়ার হুমকি দিয়েছিল।’ তিনি দাবি করেন, অনুকূল ও ইশার সঙ্গে ছিল মামলা। তাই অনুকূল, ইশা ও মুসা মাস্টার মিলে পরিকল্পিতভাবে তাঁর ছেলেকে হত্যা করেছেন।

এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, অভিযুক্ত মুসা মাস্টার এরই মধ্যে একটি হত্যা মামলার প্রথম আসামি হিসেবে দীর্ঘদিন কারাবাসে ছিলেন।

অভিযুক্ত অনুকূল ও ইশার বক্তব্য নিতে তাঁদের বাড়িতে গেলেও তাঁদের পাওয়া যায়নি। তবে আরেক অভিযুক্ত মুসা মাস্টার বলেন, ‘কোচিংয়ের শিক্ষার্থীকে মারধরের কারণে ওই শিক্ষার্থীর বাবা সফিকুল আমার কাছে বিচার নিয়ে এসেছিলেন। তবে কোচিংয়ের বিষয়ের কারণে সেই বিচার আমি করতে চাইনি। পরে চেয়ারম্যানকে দেখিয়ে দিয়েছিলাম।’ হুমকি প্রসঙ্গে বলেন, ‘কাউকে আমি হুমকি দিইনি।’

ধর্মগড় ইউপি চেয়ারম্যান আবুল কাশেম বলেন, ‘নিহত কোচিং শিক্ষকের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীকে মারধরের একটি বিচার এসেছিল। স্থানীয় বিএসসি শিক্ষক মোশাররফ বিষয়টির মীমাংসা করে দিয়েছিলেন। সেটি নিয়ে কোনো অভিযোগ আর ছিল না।’

রানীশংকৈল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম জাহিদ ইকবাল বলেন, ‘মরদেহের ডান হাতে ও বুকে ক্ষত পাওয়া গেছে। মরদেহের ময়নাতদন্ত হলে মৃত্যুর রহস্য উদ্‌ঘাটিত হবে।’

নিহতের স্বনদের অভিযোগের বিষয়ে ওসি বলেন, ‘নিহত শিক্ষকের পরিবার মৃতের জন্য দায়ী করে যাদের নাম বলছে, তাঁদের বিষয়েও আমরা খোঁজ-খবর নিচ্ছি।’ এটি খুন কি-না সেটিরও তদন্ত চলছে ।
লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ঠাকুরগাঁও হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *