আসলাম উদ্দিন আহম্মেদ, কুড়িগ্রাম প্রতিনিধিঃ
কুড়িগ্রামের উলিপুরে তিস্তা নদীর করাল গ্রাসে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ বাড়ীভিটে যাচ্ছে নদী গর্ভে। খরস্রোতা তিস্তার আকর্ষিক ভাঙনে মাত্র ২৪ ঘন্টার ব্যবধানে একটি কমিউনিটি ক্লিনিক, একটি মাদ্রাসা,একটি মসজিদ ও একটি ব্রাক স্কুলসহ ৫৫ বাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। পশ্চিমবজরা ও বগলাকুড়া এলাকায় এখন ভাঙ্গন আতঙ্ক বিরাজ করছে।

এখনো ভাঙ্গনের মুখে রয়েছে শতাধিক ঘরবাড়ি।
সহায় সম্বলহীন মানুষ গুলো কোথায় আশ্রয় নিবে তার কোনো কিনারা করতে না পারায় বর্তমানে তারা দিশেহারা হয়ে পড়েছে। এ রিপোর্ট লেখার সময় বিকেল সাড়ে পাঁচটা পর্যন্ত ভাঙ্গন কবলিত এলাকায় পানি উন্নয়ন বোর্ড,জেলা প্রশাসন,উপজেলা প্রশাসন কিংবা স্থানীয় রাজনৈতিক দলের কেউ আসেননি বলে আক্ষেপ করে জানালেন ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো।

উলিপুর উপজেলার বজরা ইউনিয়নের তিস্তা তীরবর্তী পশ্চিম বজরা ও কালপানি বজরায় গেলে খরস্রোতা তিস্তার ভয়াবহ ভাঙ্গনের দৃশ্য চোখে পড়ে।পাশাপাশি এ বজরা ইউনিয়নের সাতালষ্কর, খামার দামারহাট, সাদুয়া দামার হাট মৌজা মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাচ্ছে।

নদী ভাঙ্গণে নদীগর্ভে চলে গেছে সাতালষ্কর বালিকা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ২নং খামার দামার হাট প্রাথমিক বিদ্যালয়, সাতালষ্কর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।ভাঙ্গনের মূখে বগলাকূড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বাইতুল আমান জামে মসজিদ, উত্তর সাদুয়া দামার হাট জামে মসজিদ।ভাঙ্গনের মুখে সর্বস্ব হারিয়েছে ২ শতাধিক পরিবার।বাঁধ সহ অন্যত্র আশ্রয় নিচ্ছে তারা। সেখানে শুধুই ঘরবাড়ি হারা মানুষের আর্তনাদ। সর্বস্ব হারিয়ে সহায় সম্বলহীন মানুষের আহাজারিতে সেখানকার বাতাস ক্রমাগত ভারী হয়ে আসছিল।

তিস্তার ভাঙ্গন এতটাই তীব্র ছিল যে বাড়িঘর গাছ পালা থালা-বাসন চৌকি কোন কিছুই রক্ষা করার যেন সময় ছিল না। গত দুইদিনে তিস্তা নদীর পানি সামান্য বৃদ্ধি পেলেও তা বিপদ সীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
দু’ মাস থেকে ভাঙ্সোগন শুরু হলেও গত সোমবার দিবাগত রাত বারোটার দিকে হঠাৎ করে তা তীব্র আকার ধারণ করে। ভাঙনের তীব্রতা এতটাই ছিল যে চোখের সামনে ঘর বাড়ি,গাছপালা ,সুপারি বাগান বিলীন হয়ে যাচ্ছে করার কিছুই নাই। গভীর রাতে ভাঙ্গন শুরু হওয়ায় তিনি সহ অনেকেই ঘরবাড়ি রক্ষা করতে পারেনি।

গোটা রাত জুড়ে পশ্চিম বজরা ও কালপানি বজরা গ্রামের মানুষ তাদের বাড়িঘর রক্ষার ব্যর্থ চেষ্টা চালিয়েছে। ভাঙ্গনের তীব্রতায় পার্শ্ববর্তী গ্রামের লোকজন সহযোগিতায় এগিয়ে এসেও কিছু রক্ষা করতে পারেনি বলে জানালেন রাবেয়া বেগম। খামার দামার হাট, সাদুয়া দামার হাট, বগলাকুড়া থেকে পুরাতন বজরায় চলছে আগ্রাসী তিস্তার ভয়াবহ রুপ।

এক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে এ ভয়াবহ ভাঙনে ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে বজরা পশ্চিম পাড়া দাখিল মাদ্রাসা, বজরা পশ্চিমপাড়া জামে মসজিদ, পশ্চিম বজরা কমিউনিটি ক্লিনিক, ব্রাক স্কুল সহ ১০টি পাকা ৪৫ টি আধাপাকা বাড়ি তিস্তার গর্ভে বিলীন হয়ে যায়।ভাঙ্গণরোধে পানি উন্নয়ন বোর্ড একটি বালিভর্তি জিও ব্যাগ ফেলছে, এলাকাবাসীর দাবী সব এলাকায় বালু ভর্তি জিও ব্যাগ ফেলার। এছাড়াও বিপুল পরিমাণ ফসলি জমি, সুপারির বাগান বিভিন্ন বনজ ও ফলজ গাছ তিস্তার গর্ভে গেছে।
বর্তমানে সেখানে ভাঙ্গনের মুখে রয়েছে শতাধিক বাড়ি।

ভাঙ্গন অব্যাহত থাকায় গোটা এলাকা জুড়ে আতঙ্ক বিরাজ করছে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো কোথায় থাকবে কি খাবে তা নিয়ে চরম অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে। বজরা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি রেফাকাত হোসেন অভিযোগ করে বলেন,পানি উন্নয়ন বোর্ড, উপজেলা প্রশাসন কিংবা স্থানীয় নেতারা কেউ ক্ষতিগ্রস্থ এলাকা দেখতে আসেনি।

ফোন দিলে কেউ ফোন ধরেন না। ক্ষতিগ্রস্ত মানুষগুলো এখন চরম অনিশ্চয়তার মুখে রয়েছে। অতিশীঘ্রই ভাঙ্গন কবলিত এলাকায় প্রতিরোধ ব্যবস্থা নেয়া উচিত নয় এলাকাবাসী দাবি করেছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *