আনোয়ার হোসেন আকাশ,
রাণীশংকৈল (ঠাকুরগাঁও)প্রতিনিধি:

আধুনিকতার ছোঁয়ায় হারিয়ে যেতে বসেছে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী মাটির বাড়ি। বছর কয়েক আগে কিছু ঘরের দেখা মিললেও এখন এ মাটির বাড়ির দেখা পাওয়া যেনো দুষ্কর ব্যাপার। মাটির ঘরের স্থান দখল নিয়েছে বর্তমানে নির্মিত ইট-পাথরের দালান।

শীত-গ্রীষ্ম সব ঋতুতেই মাটির ঘর আরামদায়ক বাসস্থান। গ্রাম বাংলার চির ঐতিহ্যের নিদর্শন সবুজ শ্যামল ছায়া ঘেরা শান্তির নীড় ছিল মাটির ঘর। যা এক সময় গ্রামের মানুষের কাছে ‘গরীবের এসি বাড়ি’ নামে পরিচিত ছিলো।

মানুষের অর্থনৈতিক সচ্ছলতা, প্রযুক্তির উন্নয়ন, রুচিবোধের পরিবর্তন, পারিবারিক নিরাপত্তা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে নিজেদের সুরক্ষার কারণে এখন আর কেউ মাটির ঘরে থাকতে চান না। সচ্ছল মানুষরা এখন ঝুঁকে পড়েছেন পাকা দালানের দিকে। তারপরও মানুষ যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে নগরায়ণের সাথে সাথে পাকা দালান কোঠা তৈরি করছেন।

তাই আধুনিকতার ছোঁয়ায় আর সময়ের পরিবর্তনে গ্রাম বাংলা থেকে ঐতিহ্যবাহী মাটির তৈরি ঘর আজ প্রায় বিলুপ্তের পথে। মাটির ঘরের শান্তি ইট পাথরের দালান কোঠায় খুঁজে পাওয়া যায় না। তবে এখনকার সেই মাটির ঘরটি কাল হয়তো তার স্থান হবে ইতিহাসে অথবা যাদুঘরে। নতুন প্রজন্মের ছেলে-মেয়েদের কাছে শুধু নাটক, সিনেমা ও গল্প কাহিনী রয়ে যাবে।

ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈল উপজেলার কিছু প্রত্যন্ত অঞ্চল হিন্দু সম্প্রদায়, মালদহ সম্প্রদায় এবং স্থানীয় এলাকায় হাতে‌ গোনা কয়েকটি মাটির ঘর রয়েছে। তবে সেগুলোও আর হয়তো বেশি দিন থাকবে না।

উপজেলার বাচোর ইউনিয়নের বাজেবকসা গ্রামের শিক্ষক উপেন চন্দ্র জানান, মাটির ঘর বসবাসের জন্য আরামদায়ক হলেও যুগের বিবর্তনে অধিকাংশ মানুষই মাটির ঘর ভেঙে অধিক নিরাপত্তা ও স্বল্প জায়গায় অনেক লোকের বসবাসের জন্য ইটের ঘরকে প্রথম পছন্দের তালিকা নিয়ে এসেছে। মাটির ঘর শীত গরম উভয় মৌসুমে বেশ আরামদায়ক।

তবে বন্যা, ভূমিকম্প বা প্রবল ঝড় না হলে এসব ঘর শতাধিক বছর পর্যন্ত টিকে থাকে। এ সমস্ত ঘর বেশি বড় হয় না। মা, চাচি ও গৃহিণীরা তাদের নরম হাতের কোমল ছোঁয়ায় নিপুণ ভাবে কাঁদা দিয়ে লেপে মাটির ঘরের দেয়ালগুলোর সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে। এখন আর সেই মাটির ঘর চোখে পড়ে না বললেই চলে। তবে এখনো বাপ-দাদার স্মৃতি ধরে রাখতে অনেকেই দুই একটা মাটির ঘর টিকিয়ে রেখেছেন। আমাদের বাড়িও এখানো মাটির আছে। বাড়িতে পাকা ঘর তৈরী করতে চাইলেও বাবাকে বলে এভাবে রেখে দিয়েছি।

উপজেলা ভাইস-চেয়ারম্যান সোহেল রানা বলেন, মানুষ এখন কর্মমূখী। মানুষের আয়-রোজগার বাড়ার কারণে মানুষ দিন দিন সৌখিন হয়ে উঠছে। বর্তমান সরকার যাদের ঘর নেই তাদের ঘরের ব্যবস্থা করেছে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করছে। এছাড়া এ উপজেলার অনেক মানুষ এখন বিভিন্ন দেশে গিয়ে অর্থনৈতিক ভাবে স্বচ্ছল হয়েছে।

প্রবাসীরা ও স্বচ্ছল ব্যক্তিরা তাদের সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধি পাওয়ায় ও পরিবারের নিরাপত্তার কথা ভেবে মাটির ঘরে থাকতে চায় না। এ জন্য মাটির ঘর ভেঙে বিভিন্ন ধরনের ডিজাইন করে পাকা দালান কোঠা নির্মাণ করছেন। তবে এখন মাটির ঘরের সংখ্যা কমতে কমতে প্রায় বিলুপ্তির পথে। গ্রাম গঞ্জে ছাড়া এ মাটির বাড়ি নেই বললেই চলে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *