মোহাম্মদ এরশাদুল হক লোহাগাড়া চট্টগ্রাম প্রতিনিধিঃ

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে বিএম কনটেইনার ডিপোতে বিস্ফোরণের ঠিক আগমুহূর্তে দাঁড়িয়ে ছিলেন অনেক মানুষ। খুব কাছ থেকে ফায়ার সার্ভিসের আগুন নিয়ন্ত্রণ করা দেখার চেষ্টা করছিলেন তারা। কিন্তু মুহূর্তের মধ্যে ঘটে যায় ভয়াবহ বিস্ফোরণ। এরপর আর জানা যায়নি তাদের ভাগ্যে কী ঘটেছে।

বিস্ফোরণের তিন মিনিট আগে একটি ছবি মোবাইলে ধারণ করেছিলেন ডিপোর সিএফএইচে কর্মরত মো. জীবন হোসেন (২৮)। ছবিতে দেখা যাচ্ছে, একটি কনটেইনারে আগুন লাগার খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিটের কয়েকজন সদস্য আগুন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছেন। অন্যদিকে এর সামনেই ডিপোর অন্তত একশোর বেশি কর্মচারী দাঁড়িয়ে আগুন নেভানোর কাজ দেখছেন। এর ঠিক তিন মিনিট পর আগুনলাগা কনটেইনার বিকট শব্দে বিস্ফোরিত হয়।

এখানে দাঁড়িয়ে যারা আগুন নিয়ন্ত্রণ দেখছিলেন এবং যারা আগুন নিয়ন্ত্রণের কাজ করছিলেন তাদের ভাগ্যে কী ঘটেছে কিংবা তাদের কজন বেঁচে আছেন তা জানা যায়নি।

সেদিনের ঘটনার বর্ণনা দিয়ে জীবন হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, ঘটনার রাতে আমার নাইট ডিউটি ছিল। রাত ১০টা থেকে ১১ট পর্যন্ত ছিল রাতের খাবারের বিরতি। এসময় আগুন দেখতে যাই। সেখানে গিয়ে দেখি ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা পানি ছিটাচ্ছেন। এর সামনেই একশর বেশি মানুষ দাঁড়িয়ে সেটা দেখছেন। তাদের কেউ মোবাইলে ভিডিও করছেন, কেউবা ফেসবুকে লাইভ করছেন।

কিছুক্ষণ দেখার পর পকেট থেকে মোবাইল বের করে দেখি রাত ১০টা ৩৫ বাজে। ১১টা থেকে আবার ডিউটি শুরু। এজন্য ৩-৪ জন স্টাফকে নিয়ে বাইরে হোটেলে খাবার খেতে রওয়ানা হই। গেটে পৌঁছানোর পর হঠাৎ বিস্ফোরণে পুরো ডিপো এলাকা অন্ধকার হয়ে যায়। একের পর এক কেমিক্যাল ছুটে এসে শরীরে লাগতে থাকে। সঙ্গে সঙ্গে বিদ্যুৎ চলে যায়। এরপর অন্ধকারেই সবাই ছোটাছুটি করতে থাকি। কিন্তু এতবেশি অন্ধকার ছিল, আমরা কোনদিকে যাবো তাও বুঝতে পারছিলাম না।’

তিনি বলেন, বিস্ফোরণটি এত বেশি জোরে হয়েছে যে আমি প্রায় আধঘণ্টা কানে কিছুই শুনতে পাইনি। বিস্ফোরণের পর বৃষ্টির মতো শরীরে কেমিক্যাল ছুটে আসে। আর শরীর জ্বালাপোড়া শুরু করে। কেমিক্যাল চোখে লাগার কারণে চোখ বন্ধ হয়ে কিছুই দেখতে পাচ্ছিলাম না। এরপর অনেক কষ্টে পাশের একটি বাড়িতে গিয়ে একজন বয়স্ক নারীর কাছে পানি চাই। তার দেওয়া পানি চোখে ছেটানোর পর স্বাভাবিক হয়।

কেমিক্যাল হাতে লাগায় ছোপ ছোপ দাগ হয়েছে বলে জানান তিনি। তবে তাকে হাসপাতালে যেতে হয়নি। তিনি প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন।

১৪ মাসের একটি মেয়ে বাচ্চা আছে জানিয়ে জীবন হোসেন বলেন, আল্লাহর রহমত, মেয়ের রিজিকের দায়িত্বে আমি থাকবো বলে এবং মা-বাবার দোয়া ছিল বলে আজ বেঁচে আছি। না হলে হয়তো আমার স্থান হতো ওই আগুনের মধ্যে।

বিস্ফোরণের মাত্র তিন মিনিট আগে এভাবেই দাঁড়িয়ে আগুন নেভানো দেখছিলেন ডিপোর কর্মীরা

শনিবার (৪ জুন) রাত সাড়ে ৯টার দিকে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে বিএম কনটেইনার ডিপোতে আগুন লাগে। আগুন লাগার পর রাসায়নিকের কনটেইনারে একের পর এক বিকট শব্দে বিস্ফোরণ ঘটতে থাকলে বহু দূর পর্যন্ত কেঁপে ওঠে।

অগ্নিকাণ্ড ও ভয়াবহ এ বিস্ফোরণে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে ৪১ জনে দাঁড়িয়েছে। তবে জেলা প্রশাসনের তথ্যমতে, মৃতের সংখ্যা ৪৬ জন দগ্ধ ও আহত ১৬৩ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। রাতেই শনাক্ত হওয়া নিহতদের জেলা প্রশাসনের সহায়তায় পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. মো. ইলিয়াস হোসেন চৌধুরী জানান, নিহতদের মধ্যে ডিপোর শ্রমিকদের পাশাপাশি ফায়ার সার্ভিসের ৯ সদস্যও রয়েছেন। হাসপাতালে ভর্তি অনেকের অবস্থা আশঙ্কাজনক। মৃতের সংখ্যা বাড়তে পারে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *