আসলাম উদ্দিন আহম্মেদ,কুড়িগ্রাম প্রতিনিধিঃ
কুড়িগ্রামের ভুরুঙ্গামারীতে প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডের চলমান এসএসসি পরীক্ষার চার বিষয়ের পরীক্ষা স্থগিত করেছে বোর্ড কতৃপক্ষ।
দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডের জরুরি বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে,২০২২ সালের এসএসসি পরীক্ষার্থীসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে জানানো হচ্ছে যে, দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডের অধীন ২০২২ সালের চলমান এসএসসি পরীক্ষার গণিত,পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন ও কৃষিবিজ্ঞান বিষয়ের পরীক্ষা অনিবার্য কারণবশতঃ স্থগিত করা হলো। স্থগিতকৃত বিষয় গুলোর পরীক্ষার তারিখ যথাসময়ে জানানো হবে। তাছাড়া অন্য সব বিষয়ের সকল পরিক্ষা রুটিন মাফিক অনুষ্ঠিত হবে।
অনুসন্ধানে জানাগেছে, ভূরুঙ্গামারী উপজেলার নেহাল উদ্দিন পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও ঐ কেন্দ্রের কেন্দ্র সচিব লুৎফর রহমান ভূরুঙ্গামারী থানায় প্রশ্নপত্র বাছাই করার দিন উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আব্দুর রহমানের উপস্থিতিতে বাংলা ১ম পত্রের প্যাকেটের ভিতর বাংলা ২য় পত্র, ইংরেজি ১ম ও ২য় পত্রের প্রশ্নসহ একটি করে খাম ঢুকিয়ে নেন। এসব প্যাকেট উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা স্বাক্ষর করে সীলগালা করেন। বাংলা ১ম পত্রের পরীক্ষার দিন থানা থেকে বাংলা ১ম পত্রের প্যাকেট এনে তা খুলে বাংলা ২য় পত্র, ইংরেজি ১ম ও ২য় পত্রের খামটি সংশ্লিষ্টরা নিজেদের হেফাজতে নেন। এসময় কেন্দ্রে দায়িত্বরত ট্যাগ অফিসার বোর্ডের দেয়া তালিকা অনুযায়ী পাঠানো প্রশ্নেপত্রের খাম গণনা করার কথা থাকলেও তারা তা করেননি।
পরে প্রধান শিক্ষক কয়েকজন শিক্ষকের সহায়তায় ফাঁস করা প্রশ্নপত্রের উত্তরমালা তৈরী করে ঐ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে (চুক্তিতে) ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকায় বিতরণ করেন। প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনাটি স্থানীয় সাংবাদিকদের নজরে এলে বিষয়টি জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে অবগত করা হয়। এরপর সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ প্রাথমিক তদন্ত শুরু করেন। ইংরেজি ২য় পত্র পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ায় নড়েচড়ে বসে পুলিশ ও প্রশাসন। মঙ্গলবার (২০ সেপ্টেম্বর) ইংরেজি ২য় পত্র পরীক্ষার দিন উপজেলা নির্বাহী অফিসার দীপক কুমার দেব শর্মা, ভুরুঙ্গামারী সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার মোরশেদুল হাসান, ওসি আলমগীর হোসেনের নেতৃত্বে একটি দল প্রধান শিক্ষকের কক্ষে অভিযান চালান। এসময় ঐ কক্ষ থেকে গণিত, কৃষি বিজ্ঞান, পদার্থ বিজ্ঞান ও রসায়নের প্রশ্নপত্র উদ্ধার করা হয়।
উদ্ধার কৃত প্রশ্নের পরীক্ষা তখনও অনুষ্ঠিত হয়নি। পুলিশের গোয়েন্দা তৎপরতায় তারা নিশ্চিত হোন, ইংরেজি ১ম পত্রের পরীক্ষার প্যাকেটে এই প্রশ্নগুলো ঢুকানো ছিলো। আর এ প্রশ্নগুলো প্রধান শিক্ষকের কক্ষেই রয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পর তারা অভিযান চালান।
এরপর বিকালে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুর রহমান ও প্রধান শিক্ষক লুৎফর রহমানকে থানায় নিয়ে আসেন। কিন্তু রহস্য জনক ভাবে প্রধান শিক্ষককে রাতেই আটক করা হলেও মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারকে ছেড়ে দেয় পুলিশ।
পরবর্তীতে ইংরেজি শিক্ষক আমিনুর রহমান রাসেল ও চুক্তিভিত্তিক শিক্ষক জোবায়ের হোসাইনকে গ্রেফতার করা হয়। এছাড়াও
বুধবার ভোরে হামিদুল ইসলাম, সোহেল আল মামুনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে আসা হয়েছে।
মামলার অপর এজাহারভূক্ত আসামী ক্লার্ক আবু হানিফ এখনো পলাতক রয়েছে। প্রশ্নফাঁসের ঘটনায় মঙ্গলবার রাত সাড়ে নয়টার দিকে কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রেজাউল করিম, পুলিশ সুপার আল আসাদ মোঃ মাহফুজুল ইসলাম, দিনাজপুর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান কামরুল ইসলাম ভূরুঙ্গামারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার দীপক কুমার দেব শর্মার কক্ষে প্রায় তিন ঘন্টা রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন।
বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের কিছু না জানিয়ে সভাকক্ষ ত্যাগ করেন।
এ বিষয়ে সহকারী পুলিশ সুপার মোর্শেদুল হাসান জানান, প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনায় উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা ও ট্যাগ অফিসার আদম মালিক চৌধুরী বাদি হয়ে অভিযুক্ত শিক্ষকদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন। ভূরুঙ্গামারী থানার অফিসার ইনচার্জ আলমগীর হোসেন বলেন, আসামী তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আরো একজনকে গ্রেফতারের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। বিষয়টি গভীর ভাবে অনুসন্ধান করা হচ্ছে, অন্য কারো সম্পৃক্ততা পাওয়া গেলে তাদেরকেও গ্রেপ্তার করা হবে।