আনোয়ার হোসেন আকাশ,
রাণীশংকৈল (ঠাকুরগাঁও)প্রতিনিধি:

সন্তানকে ভালোবেসে নিজের প্রায় কোটি টাকার সম্পত্তি লিখে দেওয়ার পরও বৃদ্ধ বাবা-মার ভরণপোষণের দায়িত্ব নিচ্ছেনা সন্তান। ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ছোট ছেলে ও ছেলের বউয়ের বিরুদ্ধে। জীবনের শেষ বয়সে শারীরিকভাবে অক্ষম অসহায় পিতা-মাতার ঠাঁই হয়েছে এখন গোয়াল ঘরে। এনিয়ে সন্তান বলছেন, বিষয়টা পারিবারিক!

ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ উপজেলার দৌলতপুর ইউনিয়নের উত্তর বালুবাড়ি গ্রামের নগেন চন্দ্র বর্মণের বয়স প্রায় ৭২ বছর ও স্ত্রী বিজয়া বালার বয়স প্রায় ৬১ বছর। একসময় নিজের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা না করে অনেক কষ্টে চার ছেলে ও এক মেয়েকে লেখাপড়া করিয়ে সুশিক্ষিত করে গড়ে তুলেন নগেন। আর সেই প্রতিষ্ঠিত সন্তানেরা পিতা-মাতার ভরণপোষণের দায়িত্ব নিতে নারাজ!

জানা গেছে, নিজের শেষ সম্বল দুটি বড় পুকুরসহ ১৪ বিঘা জমি আদরের ছোট ছেলে স্কুলশিক্ষক গনেশকে লিখে দেন নগেন। কিন্তু ছোট ছেলে গনেশ বৃদ্ধ পিতা-মাতার প্রতি খারাপ আচরণ করতে থাকেন। বৃদ্ধ বাবা-মাকে কিছুদিন বাটখারা দিয়ে মেপে মেপে ভাত খেতে দিতেন। কিন্তু গত এক সপ্তাহ ধরে তা-ও বন্ধ। পরে বাবা-মাকে বাড়ি থেকে বের করে দেন গনেশ ও তার স্ত্রী। তাই বৃদ্ধ নগেন ও তার স্ত্রী বিজয়া বালার ঠাঁই হয়েছে এখন গোয়াল ঘরের বারান্দায়।

বৃদ্ধ নগেন জানান, তার বাবা (নগেনের বাবা) বেঁচে থাকা অবস্থায় তার তিন ছেলেকে অর্থাৎ নাতিদের ভালোবেসে প্রায় ৫০ বিঘা জমি পৃথকভাবে লিখে দিয়ে যান। পরে তার বাবার মৃত্যুর পর ছোট ছেলে গনেশের জন্ম হয়। গনেশ তার দাদুর কাছ থেকে সম্পত্তি পাননি। তাই তার নামে দুটি বড় পুকুরসহ ১৪ বিঘা জমি লিখে দেন। এরপর থেকে তিনি ও তার স্ত্রী ছেলেদের বাড়িতে থাকতেন। কিন্তু ছেলেরা তাদের বাড়তি বোঝা মনে করে ভালো ব্যবহার করতেন না। শেষ পর্যন্ত ছোট ছেলে ও তার স্ত্রী তাদের বাড়ি থেকে বের করে দিলে পাশের গোয়াল ঘরে বসবাস শুরু করেন। গোয়াল ঘরে গরুর সঙ্গেই এখন তাদের বসবাস।

নগেন আরো জানান, নিজের সর্বস্ব সন্তানদের দেওয়ার কারণে জীবনের শেষ বয়সে এই করুণ পরিণতি তাদের। কোনো সন্তানই এখন তাদের দায়িত্ব নিচ্ছে না। সম্পত্তি থাকলে সব সন্তানেরই আদর যত্ন পেতেন তারা। তাই যত দিন বেঁচে থাকবেন ততদিন ভরণপোষণ চান সন্তানদের কাছে।

এবিষয়ে স্থানীয় চেয়ারম্যানের কাছে গিয়েও কোনো সুফল পাচ্ছেন না তারা। একই কথা জানান নগেনের স্ত্রী বিজয়া বালাও।

এমন ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ ও প্রশাসনের সুদৃষ্টি এবং সহযোগিতা কমনা করেছেন এলাকাবাসী। এদিকে, অভিযোগের বিষয়টি অস্বীকার করেন ছোট ছেলে স্কুলশিক্ষক গনেশ। তিনি বলেন, ‘এটি একান্ত ব্যক্তিগত ও পারিবারিক বিষয়। এটি নিয়ে বেশি বাড়াবাড়ি না করাই ভালো।’

এবিষয়ে দুঃখ প্রকাশ ও নিন্দা জানিয়েছেন পীরগঞ্জ দৌলতপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান কার্তিক চন্দ্র রায়। তিনি জানান, বর্তমান প্রেক্ষাপটে সমাজের প্রতিটি পরিবারেই এমন ঘটনা ঘটছে। এবিষয়ে বৃদ্ধ নগেন তাকে অভিযোগ করেছিলেন। বিষয়টি সমাধানে ছেলেদের সঙ্গে আলোচনা চলছে।

পীরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ( ইউএনও) মো. রেজাউল করিম জানান, এবিষয়ে তিনি অবগত রয়েছেন। অভিযোগ পেলে তাৎক্ষণিক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *