আনোয়ার হোসেন আকাশ,
রাণীশংকৈল (ঠাকুরগাঁও)থেকে:
দেশের উত্তরাঞ্চলের সীমান্তবর্তী জেলা ঠাকুরগাঁও। এ জেলার ৫টি উপজেলার ৪টিই সীমান্ত ঘেঁষা। এখানে দিন দিন যেমন বাড়ছে করোনা রোগীর সংখ্যা তেমনি বাড়ছে মৃত্যুর তালিকা ।

শহর ও গ্রাম জুড়ে করোনা শনাক্ত হচ্ছে প্রায় ৫০ থেকে ৬০ শতাংশেরও বেশি। এমন পরিস্থিতিতে হাসপাতাল গুলোতেও বেড়েই চলেছে করোনায় আক্রান্ত রোগীর চাপ।

করোনা সংক্রমন বেড়ে যাওয়ায় সারাদেশের ন্যায় ঠাকুরগাঁও জেলায় চলছে কঠোর লকডাউন কিন্তু লকডাউনে বেশিরভাগ মানুষই মাস্ক পরছেন না। কেউ কেউ মাস্ক পরলেও সঠিকভাবে পরছেননা। বেশিরভাগ মানুষ মাস্ক পড়েন থুতনিতে।

ওষুধ ও মুদি ও শিশু খাবারের দোকানপাট, কাঁচাবাজারে স্বাস্থ্যবিধি মানছে না বেশিরভাগ মানুষ। কাঁচাবাজারে মানুষের ভিড় চোখে পড়ার মতো। শহর ছাড়াও উপজেলাগুলোর সবখানে ঢিলেঢালাভাবেই পার হচ্ছে লকডাউনের ৮ম দিন।

বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত জেলায় সর্বমোট করোনা সংক্রমিত রোগীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪২৩৫জনে। সুস্থ হয়েছেন ২৬৬৫ জন। মৃত্যু একশ ছাড়িয়ে এখন ১০৫ জন।

শহরের কালিবাড়ি বাজারের মাছের পাইকারি আড়ত, মাংসের দোকান ও সাধারণ পাঠাগারের আমের বাজারে লোকজনের সমাগম প্রচুর। এছাড়াও কালিবাড়ি বাজারের বিভিন্ন দোকানে মানুষকে গাদাগাদি করে বিভিন্ন পণ্য ক্রয় করতে দেখা গেছে। শহরের কালিবাড়ি মাছের আড়তে গাদাগাদি করে মাছ কিনছেন ক্রেতারা।

মুখে মাস্ক নেই কেন জানতে চাইলে দু-একজন বলেন, “মাস্ক পকেটে আছে। বেশি ভিড় দেখলে তবে পরবেন ”। এসব দেখে মনে হচ্ছে এখানে কোন বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়নি। সকাল থেকে ঠাকুরগাঁও শহরের বিভিন্ন রাস্তায় যানবাহন ও মানুষের চলাচল রয়েছে।এমন চিত্র এখন পুরো জেলার সবগুলো উপজেলা জুড়ে।

তবে মূল সড়কে কম হরেও অলিগলিতে ও গ্রামে এর বালাই নেই। শহরের মোড়ে মোড়ে পুলিশ রয়েছে। দিনের একটা সময়ে পুলিশ যানবাহন থামিয়ে ফিরিয়ে দিচ্ছে। কিন্তু তার পরেও অনেক মানুষ বাইরে ঘুরাফেরা করছে।

অনেক দোকান হাফ সাটার খুলে পণ্য বিক্রি করতে দেখা যাচ্ছে। দোকানদারগণ সাটার বন্ধ করে বাইরে দাঁড়িয়ে থাকে, ক্রেতা আসলেই সাটার খুলে পণ্য বিক্রি করছে। পুলিশ দেখলেই আবার সাটার বন্ধ করে দেয়।

তবে স্বাস্থ্যবিধি মানতে ও লকডাউন কার্যকর করতে পুলিশ প্রশাসনের সহযোগিতায় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা বিভিন্ন স্থানে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করছেন। তবে তা আরো বাড়ানো দরকার। বিভিন্ন বাহিনীর টহলও বৃদ্ধি করা দরকার বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক কর্মকর্তা আব্দুস সালাম মুঠোফোনে বলেন, লকডাউনের এই ১৪ দিন যদি আমরা ঘর থেকে বের না হই। তাহলে সংক্রমণের ঝুঁকি কমে আসবে। তাই সাধারণ মানুষ অযথা জটলা বেঁধে আড্ডা না দিয়ে ঘরের ভেতরে থাকাটা এখন খুব জরুরি।

থানা পরিদর্শক (ওসি)এস এম জাহিদ ইকবাল বলেন, আমরা সাধ্য অনুযায়ী চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। তবে কিছু লোক অযথা ঘোরাঘুরি করছে। তবে সচেতন লোকেরা ঠিকই নাগরিক দায়িত্ব পালন করে আমাদের সহযোগিতা করছে। তারা নিজেরাও বাড়িতে থাকছে এবং অন্যকেও বাড়িতে থাকার পরামর্শ দিচ্ছে।

জেলা সিভিল সার্জন মাহফুজার রহমান সরকার বলেন, যে হারে এই জেলায় করোনা ভাইরাস সংক্রমিত হচ্ছে তা খুবই উদ্বেগজনক। কঠোরভাবে লকডাউন কার্যকর করা না গেলে সংক্রমণের হার কমবে না। মহামারির এ দুঃসময়ে জেলাবাসীকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার কোনো বিকল্প নেই, বলেন তিনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *