তানোর(রাজশাহী)প্রতিনিধিঃ
রাজশাহীর তানোরে লোকশানের আশঙ্কায় আগাম আলুচাষিদের মাথায় হাত উঠেছে। গত বছর আগাম আলু উত্তোলনের শুরুতে বাজারে ভাল দাম ছিল। তবে এবার শুরুতেই আলুর ফলন ও দাম কম।
জানা গেছে, তানোরে অসময়ে বৃষ্টি ও বৈরী আবহাওয়ার কারণে চলতি মৌসুমে বড় ধরনের ফলন বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে আগাম আলুচাষ। আগাম আলু উঠানো শুরু হলেও খুশি নন তারা। আলুর গায়ে দাগ আর পচন দেখা দেওয়ায় আলু চাষিরা অনেকটা হতাশ। উপজেলার একাধিক চাষি জানান, এবার অসময়ে অতি বৃষ্টির কারণে কয়েকদিন আলুখেতে পানি জমে থাকার ফলে আলুর ব্যাপক ক্ষতির আশষ্কা করা হচ্ছে।
অসময়ের বৃষ্টিতে যেসব আলুর জমি পানিতে ডুবেছিল সেসব জমির আলুর গায়ে দাগ ও গাছপচা রোগ দেখা দিয়েছে। উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার এবার ১৩ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে আলু চাষ করা হয়েছে। যা গত বছরের থেকে বেশি। উপজেলার পাঁচন্দর ইউপির চিমনা গ্রামের কৃষক হায়দার আলী বলেন, এ বছর তিনি ডায়মন্ড জাতের আলুচাষ করেছেন। কিন্তু আলু উঠানোর পর আলুর গায়ে কালো দাগ আর পচন দেখা যাচ্ছে, আবার বিঘাপতি ৭০-৮০ মণ আলু হওয়ার কথা, কিন্তু ফলন ভালো হবে না।
চাঁন্দুড়িয়া ইউপির এলাকার আলুচাষি গোলাম রাব্বানী বলেন, এবছর আলুতে লাভ হবে না। বিঘাপ্রতি ফলন ৬৫ থেকে ৭০ মণ আশাকরা হলেও তা পাওয়া যাচ্ছে না। তিনি বলেন, একদিকে আলুর ফলন কম, গায়ে দাগ ও পচন দেখা দিয়েছে। অন্যদিকে দামও পাওয়া যাচ্ছে না। সব মিলিয়ে এবার আলুতে লোকসান গুণতে হবে। তালন্দ ইউপির লালপুর গ্রামের শরিফুল ইসলাম জানান, ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে আলু চাষ করছেন। কিন্তু আলুর গায়ে দাগ ও আলুর দাম কম থাকায় লাভ হবে না।
এতে ব্যাংক ঋণের টাকা পরিশোধ কিভাবে করবে সেটি নিয়ে চিন্তায় আছেন তিনি। জানা গেছে,গত মৌসুমে এই অঞ্চলের যেসব কৃষক কোল্ডস্টোরেজে আলু রেখেছিলেন, তারা লোকসানের ফলে তাদের বেশির ভাগই আলু এবার বের করেনি। জমির ভাড়া, সেচ, সার-বীজ-কীটনাশক, শ্রমিকসহ কোল্ডস্টোরে ৫০ কেজির প্রতি বস্তা আলু রাখার জন্য কৃষকদের ভাড়া দিতে হয় ২৬৫ টাকা, বস্তার দাম ৮৫ টাকা,গাড়ি ভাড়া ৪০ টাকা সবমিলে প্রতিকেজি আলুর উৎপাদন খরচ প্রায় ১২ টাকা, অথচ আলুর দাম প্রতি কেজি ৬ থেকে ৭ টাকা।
আলু ব্যবসায়ী মাহফুজ বলেন, গত মৌসুমের আলু কোল্ডস্টোরেজ থেকে বের করলে প্রতি বস্তায়
২৫০ থেকে ৩০০ টাকা লোকসান গুনতে হবে। তাই ৭৫ মণ আলু তিনি এখনো কোল্ডস্টোরেজ থেকে বের করেননি। এবিষয়ে তানোর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শামিউল ইসলাম বলেন,গত বছর আলু চাষ হয়েছিল প্রায় সাড়ে ১২ হাজার হেক্টর জমিতে, এবছর হয়েছে প্রায় ১৩ হাজার হেক্টর জমিতে।
এবার অসুময়ে মাঘের অতি বৃষ্টির কারণে ফলন বিপর্যয় কিছুটা হতে পারে। তিনি বলেন, যারা বৃষ্টির আগে জমিতে সেচ দেয়নি। তাদের ফলন বাম্পার হবে। আর আলুর গায়ে দাগ ও পচন রোধে কৃষিবিভাগ থেকে কৃষকদের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।