আনোয়ার হোসেন আকাশ,
রাণীশংকৈল (ঠাকুরগাঁও)প্রতিনিধি:

হতদরিদ্রের জন্য সরকারের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির দশ টাকা কেজি দরে চাল কার্ডে ব্যাপক অনিয়ম ও হত-দরিদ্রদের নাম বাতিল করে স্বচ্ছল ব্যক্তিদের কার্ড দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

অভিযোগকারী অভিযোগ করেন ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার চিলারং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান, ইউপি সদস্য শোভা আলী, শহীদ আলী ও ইউনিয়ন আ.লীগের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে।

এবিষয়ে চালের কার্ডে অনিয়ম ও অস্বচ্ছলদের নাম বাতিলের অভিযোগে ভুক্তভোগীরা সদর ইউএনওকে একটি লিখিত অভিযোগ দেন।

তারপরেও প্রশাসন কোন ব্যবস্থা না নেয়ায় চরম ক্ষোভ প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হস্তক্ষেপ কামনা করেন কার্ড বঞ্চিতরা।

ভেলাজান নদী পাড়া এলাকার বাসিন্দারা অভিযোগ করে বলেন, ১০টাকা চালের কার্ডের জন্য চেয়ারম্যান মেম্বার ও ইউনিয়ন আ.লীগের সভাপতি শীকেশ রায় লিটনের দুই পা ধরে যাতে কার্ডগুল বাতিল না করে। তবু বাতিল করে দিলো। একদিন কাজ না করলে স্ত্রী-সন্তাদের মুখে ভাত দিতে পারি না। গরিব-দুঃখীদের কোন দাম নাই নেতাদের কাছে। চেয়ারম্যানকে বললে তিনি বলেন আমার কিছুই করার নাই দল বাতিল করছে। এখন যে ভাত খাবো একটা দানাও চাল নাই।

ওমর ফারুক নামে আরেক ব্যক্তি বলেন, মানুষের বাড়িতে কাজ করে খাই। যাও একটা কার্ড পাইছিলাম শোভা মেম্বারের ভোট না করায় তিনি সেটা বাতিল করে দিছে।
সোবাহান নামে এক বৃদ্ধ বলেন, শোভা মেম্বার আমার কাছে ১,০০০টাকা চাইছে। টাকা দেয়নি বলে কার্ড বাতিল।

সিদ্দীকা নামে এক মহিলা বলেন, আমার স্বামী নাই। সন্তান নিয়ে খুব কষ্টে দিন পার করছি, এই কষ্টে মাঝে শহীদ মেম্বার আমার চালের কার্ড বাতিল করে দিছে।

হাসিমউদ্দীন নামে আরেক এক বৃদ্ধ বলেন, আমার অসুস্থ্য স্ত্রীকে নিয়ে খেয়ে না খেয়ে দিন কাটাচ্ছি। দিনমজুরি করে যা পাই তা ঔষুধের পেছনে চলে যায়। মেম্বারের লোক এসে বলল ১,৫০০ টাকা দিতে হবে, না হলে তোর চালের কার্ড বাতিল হয়ে যাবে। টাকা দিতে পারিনি বলে কার্ড টা বাতিল করে দিছে।

মাহাবুব ও পানাহউল্লা নামে ব্যক্তিরা বলেন, আমার ১০ টাকা চালের কার্ড যখন বাতিল করা হলো তখন আমি শোভা মেম্বারকে জানাই। তিনি বলেন এখানে আমার করার কিছু নাই দল (আ.লীগ) বাতিল করছে, দলের নেতারা বলছে আমরা বাতিল করিনি আর চেয়ারম্যান বলছেন আমি বাতিল করিনি তাহলে বাতিল করল কে?

প্রশাসনকে অভিযোগ দিচ্ছি তিনারাও ব্যবস্থা নিচ্ছেন না। তাহলে আমরা যাবো কথায় ?

অন্যদিকে, বেগম নামের এক মহিলা সহ আরো অনেকেই কেন চালের কার্ড বাতিল করা হলো তা জানতে ইউনিয়ন পরিষদে গেলে ৭,৮,৯ নং ওয়ার্ডের মহিলা ইউপি সদস্য আনোয়ারা বেগম তাদের উপর ক্ষিপ্ত হয়ে অকথ্য ভাষায় গালগালাজ করেন। ভুক্তোভোগী বেগম বলেন, ৫,০০০ হাজার টাকা না দেয়ায় আনোয়ারা (ইউপি সদস্য) আমার কার্ড বাতিল করে দিছে। আমরা গরিব এতো টাকা কথায় পাবো।

একই চিত্র সদরের ঢোলারহাট ইউনিয়নে। ওই ইউনিয়নে অনেকেরেই কার্ড বাতিল করে স্বচ্ছল ব্যক্তিদের দেওয়ার অভিযোগ তুলেন বিভিন্ন ওয়ার্ডের বাসিন্দারা। তাদের অভিযোগ স্বার্থ হাসিলের জন্য মেম্বার-চেয়ারম্যানরা দুস্থ্যদের নাম বাতিল করে স্বচ্ছলদের কার্ড দিচ্ছে।
দরিদ্রদের নাম বাতিল করে পছন্দের লোকদের কার্ড দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে সদরের আকচা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্যদের বিরুদ্ধেও।

মুঝাল (৪৫) ও শহিদুল ইসলাম (৪২) অভিযোগ করে বলেন, আমরা দিনমজুরি করে সংসার চালায়। মেম্বার-চেয়ারম্যান একতরফা তালিকা তৈরি করায় ভুমিহীন, দিনমজুর ও হত-দরিদ্র পরিবারগুলো বঞ্চিত হয়েছে বলে অভিযোগ তাদের।

এ বিষয়ে ইউপি সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা অস্বীকার করে বলেন, কারো কাছে টাকা নেওয়া হয়নি। সব মিথ্যা। অসহায়রাই কার্ড পাচ্ছে। আর চেয়ারম্যানরা বলছেন, দশ টাকা চালের কার্ডের কোন অনিয়ম হচ্ছে না। গরিব দুঃখিরাই এ কার্ড পাচ্ছে। তবে টাকা নেওয়া ও কার্ড বাতিলের বিষয়টি এড়িয়ে যান তিনারা।

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকতা (ইউএনও) আবু তাহের মোঃ সামসুজ্জামান জানান, পুরনো কার্ডগুলো বাতিল করে অনলাইন করা হচ্ছে। তবে পুরনোদের মধ্যে যদি কারো কার্ড বাতিল হয়ে থাকে তারা যেন ইউএনও অফিসে যোগাযোগ করে। টাকার বিনিময়ে কার্ড করে দেওয়া বা নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এমন অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *