মঙ্গলবার (০৭ নভেম্বর) সকাল ১০ টায় নারায়ণগঞ্জের শেখ রাসেল নগর পার্কে স্বেচ্ছাসেবকদের নিয়ে প্যালিয়েটিভ কেয়ার বিষয়ে মুক্ত আলোচনার আসর অনুষ্ঠিত হয়েছে।

পার্কের মাঠ প্রাঙ্গণে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) ও আয়াত এডুকেশন কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন ‘মমতাময় নারায়ণগঞ্জ’ প্রকল্পের আওতায় নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন এলাকার প্যালিয়েটিভ কেয়ার স্বেচ্ছাসেবকদের প্যালিয়েটিভ কেয়ারের রোগী পরিচর্যা সংক্রান্ত কাজের বাস্তব অভিজ্ঞতা ও মতামত বিনিময়ের উদ্দেশ্যে মুক্ত আলোচনার এ আসর অনুষ্ঠিত হয়েছে।

মমতাময় নারায়ণগঞ্জ প্রকল্পের ফিল্ড অফিসার হাসান হাফিজুর রহমানের সঞ্চালনায় মুক্ত আলোচনা পর্বে অংশ নিয়ে ভলান্টিয়ার মাহমুদা আক্তার প্যালিয়েটিভ কেয়ার সহকারীদের সাথে রোগী পরিদর্শনের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, ‘প্যালিয়েটিভ কেয়ার রোগীরা এক পর্যায়ে যেন ছোট বাচ্চার মতো আচরণ করে, তারা এ সময় মানুষের সঙ্গ চায়, একটু মমতার পরশ চায়, তাদের মনের কথা অন্যের কাছে খুলে বলতে পারলে তারা খুশি হয়, আমরা একটু আন্তরিক হলেই তাদের মুখে হাসি ফুটিয়ে তুলতে পারি।

আয়াত এডুকেশনের প্রজেক্ট কো-অর্ডিনেটর সুমিত বণিক বলেন, ‘আজকে প্যালিয়েটিভ কেয়ার ভলান্টিয়ারগণ এই কাজে সম্পৃক্ততার যে অভিজ্ঞতা বিনিময় করলেন, সেখান থেকে ইতিবাচক উদাহারণগুলো আমাদেরকে সমাজের সবার মাঝে ছড়িয়ে দিতে হবে। প্যালিয়েটিভ কেয়ার রোগীদের পাশে থাকার মাধ্যমে আপনারা যে আত্মিক প্রশান্তি লাভ করেছেন সেই নির্মল আবেগীয় অনুভূতি ও অভিজ্ঞতাগুলো আমাদের যুব সমাজের মাঝে সঞ্চারিত করতে হবে।

কারণ আমরা সবাই মিলে মমতা, ভালোবাসা, স্নেহ, আদরের মতো ইতিবাচক আবেগীয় অনুভূতিগুলো নিয়ে প্যালিয়েটিভ রোগীরদের পাশে দাঁড়ালেই আমরা সহমর্মিতার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে সমর্থ হবো।’
হাসান হাফিজুর রহমান তার বক্তব্যে বলেন, ‘আমাদের সবার মাঝে স্বেচ্ছাসেবী মনোভাব থাকা জরুরি। স্বেচ্ছাসেবী কাজের অভিজ্ঞতা যেমন ব্যক্তি জীবনে সহায়ক, তেমনি প্রফেশনাল জীবনে দক্ষতা বৃদ্ধিতেও এগিয়ে থাকতে সহায়তা করে।

সর্বোপরি, একজন সচেতন মানুষ হিসেবে প্যালিয়েটিভ কেয়ার সম্পর্কে আমাদের সবার জানা প্রয়োজন। তাহলে আমাদের সমাজে বা পরিবারে এমন রোগী থাকলে আমরা নিজেরাই এই সেবা প্রদানে সহায়তা করতে পারবো।’আয়াত এডুকেশনের কমিউনিকেশন অ্যান্ড ব্র্যান্ডিং অফিসার কনক দয়া বর্মণ বলেন, ‘আমাদের জীবনে মৃত্যুই হচ্ছে একমাত্র সত্য।

আর তাই প্যালিয়েটিভ কেয়ার সম্পর্কে সবারই জানা প্রয়োজন। কারণ আমাদের অনেককেই এই বাস্তব ও সত্য অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যেতে হয় বা হয়েছে।’
উল্লেখ্য যে, তিন বছর মেয়াদী ‘মমতাময় নারায়ণগঞ্জ’ এই পাইলট প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবায় প্যালিয়েটিভ কেয়ার সংযুক্তিকরণ। নিরাময় অযোগ্য, জীবন সীমিত রোগে আক্রান্ত রোগীদের জীবনের প্রান্তিক সময়টুকু ভোগান্তি বিহীন, যন্ত্রনা বিহীন, বেদনা বিহীন ও নিরাপদ করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা প্রদান করা এবং সেইসাথে প্রকল্পটি আক্রান্ত ব্যক্তি ও তার পরিবারের শারীরিক, মানসিক, সামাজিক ও আত্মিক কষ্টগুলো কমিয়ে জীবনের গুণগত মান উন্নয়ন করার লক্ষ্যে কাজ করছে।

বক্তব্য ও অভিজ্ঞতা উপস্থাপনের পর উপস্থিত স্বেচ্ছাসেবকবৃন্দ মুক্ত আলোচনা পর্বে এ সংক্রান্ত নিজেদের মতামত ও প্রশ্নগুলো তুলে ধরেন। মুক্ত আলোচনার আসরে আরো উপস্থিত ছিলেন, মমতাময় নারায়ণগঞ্জ প্রকল্পের প্যালিয়েটিভ কেয়ার সহকারি সুরাইয়া আহমেদ চৌধুরী, মুনিয়া আক্তার, শাহজাদা হোসেন চয়ন এবং কমিউনিটি মবিলাইজার অনন্যা রহমান ও ফাহিম হোসেন প্রমুখ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *