বটিয়াঘাটা থেকে ইন্দ্রজিৎ টিকাদার ঃ-

আজ ১ অক্টোবর মহাষষ্টীর মধ্য দিয়ে শুরু হচ্ছে বটিঘাটায় ১১৩টি পূজা মন্ডপে হিন্দু সম্প্রদায়ের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় উৎসব শারদীয়া দুর্গোৎসব । উৎসবকে ঘিরে হিন্দু জনঅধূষিত বটিয়াঘাটা এ উপজেলায় সনাতনীদের মাঝে ব্যাপক উৎসাহ ও উদ্দীপনা শুরু হয়ে গেছে ।

ইতিমধ্যে দীর্ঘ এক মাস ধরে তাঁরা সু-নিঁপুন হাতে নিঁখুত কারুকার্য দ্বারা এ শিল্প কর্মটি ফুটিয়ে তোলার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়েছেন । উপজেলা সদর সহ বেশ কয়েকটি পুঁজা পন্ডপ পরিদর্শনে গিয়ে এ চিত্র পরিলক্ষিত হয়। মূলতঃ অধর্মের গ্লানি দূর, দূর্গতি নাশ ও অসুর বধ করতেই রাজা রামচন্দ্র মাতৃশক্তি বর পেতে অকাল বোধন এর আয়োজন করেন।

সেই থেকে সনাতনীরা শরতের শুরুতে বছরে একবার সমাজের সকল জন্জাল, অন্যায়-অনিয়ম,দূর্গতি নাশ করার অভিলাষ নিয়ে এ পুঁজার আয়োজন করে থাকেন। আর এই দূর্গতি দূর করেন বলেই তিঁনি দুর্গতিনাশিনী দেবী দূর্গা। সনাতনী শাস্ত্রমতে এ বছর গত রবিবার প্রাতঃভোরে দেবী দূর্গা স্বামীগৃহ কৈলাশ থেকে মর্ত্যে বাবার বাড়ি গমণের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিয়েছেন।যে কারনেই সনাতনীরা ওই দিনটাকে ” মহালয়া ” হিসেবে খুবই ভাবগাম্ভীর্য্যের সাথে উদযাপন করেছে।

এ বছর উপজেলার সাতটি ইউনিয়নে সার্ব্বজনীন ও ব্যক্তিগত মিলিয়ে ১১৩ টি পুঁজা মন্ডপে দেবী দূর্গার এক যোগে সাড়ম্বরে পুঁজা-অর্চনা অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে ১১০ টি সার্ব্বজনীন ও ৩ টি ব্যক্তিগত। সার্বজনীন মন্ডপগুলির মধ্যে বটিয়াঘাটা বাজার,মল্লিকের মোড়,সিলিন্দামারী জগতমাতা, চক্রাখালি, মল্লিকের মোড়,কৈয়া বাজার,সাচিবুনিয়া উল্লেখযোগ্য।তবে এবছর জলমা ইউনিয়নের দাউনিয়াফাঁদ এলাকার গোলদার বাড়ি সার্বজনীন পূজাটি অনিবার্যবসত হচ্ছে না বলে জানা গেছে ।

অন্যদিকে ব্যক্তিগত তিনটি হলো ট্রাফিক পুলিশ ইনেসপেক্টর সুমন বিশ্বাসের ছিলিন্দামারী মোড়ের বাড়ী,গোপাল বিড়ি ফ্যাক্টরীতে জেলা আওয়ামীলীগের এান ও সমাজ কল্যান বিষয়ক সম্পাদক শ্রীমন্ত অধিকারী’র বাড়ি ও প্রয়াত সাবেক ইউপি সচিব মহানন্দ বিশ্বাসের বাড়ি। সময় যতই সন্নিকটে আসছে প্রতিমা শিল্পীরা তাঁদের হাতের নিঁপুন আঁচড়ে প্রতিটি বিগ্রহে দেব-দেবীর রুপ ফুঁটিয়ে তোলার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

যা কিনা পরবর্তীতে আজ ষষ্ঠীর মাধ্যমে ব্রাহ্মণ’র মন্ত্র অর্চনার মাধ্যমে প্রাণ প্রতিষ্ঠায় রুপ নেবে।অন্যদিকে আয়োজক কমিটির পক্ষ থেকে চলছে মন্ডপগুলি সাজানোর কাজ শেষে আজ ষষ্ঠীর মধ্য দিয়ে তা পূর্ণতা লাভ করেছে।

এ উপলক্ষ্যে তাঁরা নানান ধর্মীয় অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করেছেন। অনুষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে প্রতিদিন আরতি প্রতিযোগিতা, ধর্মীয় গান ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। বিগত বছরগুলির ন্যায় এবারও এ উপজেলায় বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনার সাথে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ন পরিবেশে দূর্গোৎসব অনুষ্ঠিত হবে বলে প্রশাসন এবং আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আশা প্রকাশ করছে।

থানা পুলিশের পক্ষ থেকে জেলার উর্ব্ধতন পুলিশ কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতেসনাতনীরা যাতে পুঁজা নির্বিঘ্নে পালন করতে পারে সেলক্ষ্যে প্রতিটি ইউনিয়নের মন্ডপে মন্ডপে গিয়ে বিট পুলিশিং ওপেন হাউজ ডে সভার আয়োজন চলছে। গত সোমবার প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাথে সকল পুজা মন্ডপ কমিটি, পু্ঁজা উদযাপন পরিষদ ও সুশীল সমাজের সাথে এ উপলক্ষ্যে মতবিনিময় সভারও আয়োজন করা হয়েছে।

পুঁজাকালীন সময়ে নিরাপত্তার স্বার্থে প্রতিটি মন্ডপে রাখা হয়েছে পুলিশ ও আনসার বাহিনীর বাড়তি নিরাপত্তা।প্রতিমা তৈরির শুরু থেকেই পুঁজা মন্ডপগুলিতে নাশকতা এঁড়াতে বিভিন্ন গোয়েন্দা বাহিনী ও র্যাব গোয়েন্দা নজরদারিতে নিয়েছে। পুঁজার দিন যতই ঘনিয়ে আসছে ততই গোটা উপজেলায় উৎসবের আমেজ বইতে শুরু করেছে।

বেড়েছে বিপনি বিতানগুলিতে উঁপচে পড়া ভিড়। এ ব্যাপারে থানার ওসি মোহাম্মদ শাহজালাল এ প্রতিনিধিকে জানান,শারদীয়া দুর্গোৎসবকে ঘিরে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তরফ থেকে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।কোন প্রকার বিঘ্ন ঘটলেই সাথে সাথে কঠোর ব্যবস্হা।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ মমিনুর রহমান জানান,যার ধর্ম সে নির্বিঘ্নে স্বতস্ফুর্তভাবে পালন করবে।কেউ যদি এ ক্ষেত্রে বিঘ্ন ঘটায় সরকার, প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তা কঠোর হস্তে দমন করবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *