স্টাফ রিপোর্টার
রাজশাহীর তানোর থানায় মামলার তদ্বির কারক প্রকাশ্যে বিষপান ও আত্নহত্যার হুমকির মাধ্যমে পুলিশকে জিম্মি করে তিন পেশাদার সাংবাদিকের বিরুদ্ধে এক হাজার টাকা চাঁদাবাজির সাজানো মামলা দেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় তিন সাংবাদিক পরিবার সরেজমিন তদন্তপুর্বক মামলার বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য স্থানীয় সাংসদ (এমপি), পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি), রাজশাহী জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও রাজশাহী পুলিশ সুপারের (এসপি) জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
তারা বলেন, পবিত্র রমজান মামলার বাদি, স্বাক্ষী, তদ্বির কারক, তদন্ত কর্মকর্তাসহ সংশ্লিস্টরা যদি পবিত্র কোরআন শরিফ হাতে নিয়ে বলতে পারেন অভিযোগের সত্যতা রয়েছে, তাহলে সাংবাদিকরা যেকোনো শাস্তি মেনে নিতে প্রস্তুত, তবে তারা সেটা পারবে না, তাহলে কেনো এমন মিথ্যা মামলা সেটা কার স্বার্থে, সাংবাদিকের যদি এই অবস্থা হয়,তবে সাধারণ মানুষের কি অবস্থা সেটা সহজেই অনুমান করা যায়।
এসব বিবেচনায় বিষয়টি অবশ্যই বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি রাখে। এদিকে কোনো তদন্ত ছাড়াই তড়িঘড়ি তিন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির সাজানো মামলা রেকর্ড করায় পুলিশের পেশাদারিত্ব ও অতি উৎসাহী প্রশ্নবিদ্ধ ভুমিকা নিয়ে উপজেলা জুড়ে ব্যাপক তোলপাড় সৃস্টি হয়েছে, উঠেছে সমালোচনার ঝড়।কারণ থানায় কেউ প্রকাশ্যে আত্মহত্যার হুমকি দিলে সেই অপরাধে তারই সাজা হবার কথা, তবে অজ্ঞাত কারণে এই ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম হয়েছে, কিন্ত্ত কেনো সেই প্রশ্নের উত্তর জানা নাই কারোর-? ।
অপরদিকে উপজেলা পরিষদ ও প্রশাসনের দায়িত্বশীল দুই কর্মকর্তা বিক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেন, তিনজন পেশাদার গণমাধ্যম কর্মীর বিরুদ্ধে কোনো তদন্ত ছাড়াই মাত্র এক হাজার টাকার চাঁদাবাজি মামলা রেকর্ড করায় পুলিশের পেশাদারিত্ব এবং দায়িত্বশীলতা নিয়ে প্রশ্ন ও বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি উঠতেই পারে সেটাই স্বাভাবিক তারাও সেটা চাই।
স্থানীয় আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল নেতারা বলেন, আওয়ামী লীগ গণমাধ্যমবান্ধব সরকার।যেখানে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বার বার বলছেন, কোনো অবস্থাতেই যেনো কোনো গণমাধ্যম কর্মীদের হয়রানি এবং বিচারের আগে কর্মরত সাংবাদিকে কর্তৃপক্ষের অনুমতি ব্যতিত আটক করা না হয়, সেখানে মাত্র এক হাজার টাকার সাজানো চাঁদাবাজির অভিযোগে তিনজন পেশাদার সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলা এটা সরকার ও গণমাধ্যমকে মুখোমুখি করার গভীর ষড়যন্ত্র, তারা বিষয়টি তদন্ত করে যারা এর সঙ্গে জড়িত তাদের দৃস্টান্তমুলক শাস্তির দাবি জানিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দৃস্টি আকর্ষণ করেছেন।
জানা গেছে, তানোরের কলমা ইউপির রামনাথপুর গ্রামের সাইদুর রহমানের পুত্র মাহাবুর রহমান (২৯) বৈধ কোনো কাগজপত্র ছাড়াই নিজেকে দন্ত চিসিৎসক পরিচয় দিয়ে দরগাডাঙ্গা বাজারে সেবা ডেন্টাল নামে চেম্বার খুলে চিকিৎসার নামে সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে হাজার হাজার টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে যার বড় অংশ যাচ্ছে আলোচিত কথিত সাংবাদিকের পকেটে বলে এলাকায় আলোচনা রয়েছে।
অন্যদিকে স্থানীয়দের অভিযোগের ভিত্তিতে গত ১৩ এপ্রিল মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০ টার দিকে এলাকার কয়েকজন বিশিস্ট ব্যক্তি নিয়ে গণমাধ্যম কর্মীরা দরগাডাঙ্গা বাজারের বঙ্গবন্ধু চত্ত্বরে কথিত দন্ত চিকিৎসক মাহাবুর রহমানের কাছে তার চিকিৎসা সম্পর্কে খোঁজ খবর নিতে গেলে তিনি বলেন, তার চিকিৎসায় রোগী ভাল হয় সেটাই বড় কথা ডিগ্রী থাকতেই হবে এমন কোনো কথা আছে না কি-? আর আপনারা এসব জানার কে-? তানোরের বড় সাংবাদিক তার খালু হয়, কিছু জানার থাকলে খালুর কাছে জানবেন, আর এসব নিয়ে বাড়াবাড়ী বা কোনো খবর করলে চাঁদাবাজি মামলা দিয়ে লাল দালানে পাঠাবো, নয় হাত-পা ভেঙ্গে দিবো- এসব কথা বলার পর সাংবাদিকরা সেখান থেকে ফিরে এসে তানোর উপজেলা চেয়ারম্যান, পৌর মেয়র ও তানোর রিপোর্টাস ক্লাব (টিআরসি) সভাপতিকে বিষয়টি অবহিত করেন।
এদিকে এই ঘটনায় একই দিন তার খালু কথিত সাংবাদিক কৌশলে কথিত দন্ত চিকিৎসক মাহাবুর রহমানকে বাদি করে তিন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে থানায় এক হাজার টাকার চাঁদাবাজি অভিযোগ করায়। অভিযোগে স্বাক্ষী করা হয় শাকিল আহম্মেদ, আমিনুল ইসলাম ও সাঈদ সাজুকে। তবে শাকিল ও আমিনুল বলেন, তারা এবিষয়ে কিছুই জানেন না, এমনকি একজন আইনজীবী ও সমাজের বিশিস্ট জনদের উপস্থিতিতে তারা ৩০০ টাকার ননজুডিশিয়াল স্ট্যামে এফিডেভিট করেও দিয়েছেন।অন্যদিকে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায় সাজানো ও ভিত্তিহীন অভিযোগের কারণে থানা তদন্ত ব্যতিত মামলা নিতে অপপারগতা প্রকাশ করেন। এ সময় তদ্বির কারক কথিত সাংবাদিক বিষের বোতল ও রশি নিয়ে ওসি সাহেবকে বলেন, সত্য-মিথ্যা বুঝি না এই মামলা না নিলে তিনি থানার ভিতরে বিষপাণ অথবা গলায় দড়ি দিয়ে আত্নহত্যা করবেন বলে ওসি সাহেবকে জিম্মি করে মামলা রেকর্ড করাতে বাধ্য করে।
এবিষয়ে জানতে চাইলে মামলার বাদি মাহাবুর রহমান বলেন, এবিষয়ে তার কোনো বক্তব্য নাই, যা বলার তার খালু বলবে। এবিষয়ে জানতে চাইলে তানোর পৌর মেয়র ইমরুল হক বলেন, পবিত্র রমজান মাসে মিথ্যা মামলা দিয়ে তিন সাংবাদিককে হয়রানি এটা অত্যন্ত দুঃখজনক ও নিন্দনীয় ঘটনা। তিনি বিষয়টি পুনঃরায় তদন্তের জন্য পুলিশের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
এবিষয়ে তানোর অনলাইন প্রেসক্লাবের সভাপতি সারোয়ার হোসেন ও সম্পাদক সোহানুল হক পারভেজ বলেন, এঘটনার নিন্দা জানানোর ভাষা তাদের জানা নাই, তারা ঘটনা পুনঃরায় তদন্তের জন্য পুলিশের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।