বাবুল রানা মধুপুর টাঙ্গাইল প্রতিনিধি:
ভোর হতে না হতেই কনকনে শীত উপেক্ষা করে প্রতিদিন কাজের সন্ধানে শতশত দিনমজুর ছুটে আসেন মধুপুর বাসস্ট্যান্ডের আনারস চত্বরে। তাদের কারো ভাগ্যে কাজ জোটে আবার অনেকেরই নিরাশ হয়ে ফিরে যেতে হয় নিজ নিজ গন্তব্যে। এ যেন এক ভাগ্যের নির্মম পরিহাস।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, প্রায় একশো জনের উপরে দিনমজুর কাজের সন্ধানে দাঁড়িয়ে আছে মধুপুর বাসস্ট্যান্ডের আনারস চত্বরে।
তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, কাজের খোঁজে দলবেঁধে কেউ এসেছেন প্বার্শবর্তী ফুলবাড়িয়া, মুক্তাগাছা, ধনবাড়ি, ঘাটাইল ও গোপালপুর উপজেলা থেকে আবার অনেকে এসেছেন রংপুর, দিনাজপুর, রাজশাহী ও পঞ্চগর থেকে। এই হতদরিদ্র মানুষগুলোর কষ্টের কথা আমরা কেউ কি জানি?

যারা দিন এনে দিন খায়, একদিন কাজ না পেলে যাদের চুলায় আগুন জ্বলেনা, যাদের সংসার প্রতিদিনের আয় উর্পাজনের উপর নির্ভরশীল। সেই মানুষগুলোর কথা আজকাল আর কেউ ভাবেনা। এদের কেউ কেউ ছেলে মেয়েদের পড়াশোনার খরচ যোগাতে এই কনকনে শীতের মধ্যে ভোর বেলায় বাড়ি থেকে বেড়িয়ে পড়েন কাজের সন্ধানে আবার অনেকেরই দিন শেষে বাজার না নিয়ে বাড়ি গেলে সংসারের সবাইকে নিয়ে উপোষ থাকতে হয়। এমনই ভাবে জীবন যুদ্ধে মাথার ঘাম ঝরান খেটে খাওয়া এই হতদরিদ্র মানুষগুলো।

মধুপুর উপজেলার বিভিন্ন এলাকার কৃষকগন তাদের কৃষি জমিতে কাজ করানোর জন্য সকালেই ছুটে আসেন এই সকল দিনমজুরদের কাছে।
মধুপুর পৌরসভাধীন পুন্ডুরা গ্রামের কৃষক মজিদ মিয়া জানান, বর্তমানে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা করে কামলা (দিনমজুর) নিয়ে কাজ করতে হচ্ছে সাথে দুই বেলা খাবারও দিতে হয়। দিন ছোট হওয়ার কারণে তুলনামূলক ভাবে কাজ করানো সম্ভব হয় না।

পঞ্চগড় জেলার দেবীগঞ্জের দিনমজুর মজিবুল ইসলাম(১৫)জানান, অভাবের সংসার, টাকা পয়সা না থাকার কারণে ছোট ভাই বোনদের লেখাপড়া করাতে পারতেছি না। আমিও লেখাপড়া করতাম, সংসারে অভাব অনটনের কারণে স্কুল ছেড়ে কাজের খোঁজে এই মধুপুরে এসেছি। আমার সাথে আরও ৪জন এসেছে যতদিন পারি কাজ করে বাড়ি ফিরে যাবো।

মুক্তাগাছা উপজেলার সাত্তার মিয়া জানান, এতো শীতের মধ্যে সকাল থাইকা বিকালবেলা পর্ষন্ত কাম(কাজ) কইরা ৫/৬শো টেহায় এহন আর চলেনা। সব জিনিসের দাম বাড়তি, আমাগোর দাম তো আর বারতাছেনা।
তার মধ্যে একদিন কাম পাইলে তিনদিন বইয়া থাহন লাগে। খাইয়া না খাইয়া খুবই কষ্টের মধ্যে দিন কাটতাছে।
এই দিনমজুরের কাজ বহুদিন থেকে মধুপুর উপজেলার বিভিন্ন অঞ্চলে প্রচলিত হয়ে আসছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *