আসলাম উদ্দিন আহম্মেদ, কুড়িগ্রাম জেলা প্রতিনিধিঃ
স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় কর্তৃক জারি করা বরখাস্ত আদেশ অগ্রাহ্য করে কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার থেতরাই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আতাউর রহমান (আতা) জোরপূর্বক চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

আজ মঙ্গলবার (১৭ অক্টোবর) জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে অভিযুক্ত চেয়ারম্যানকে ডেকে মহামান্য আদালতের স্ট্রে অর্ডার না দেখানো পর্যন্ত দায়িত্ব পালন থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে। বিষয়টি কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ নিশ্চিত করেছেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, থেতরাই ইউনিয়ন পরিষদের বরখাস্তকৃত চেয়ারম্যান আতাউর রহমান গত ২০২২ সালের ১২ ডিসেম্বর সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের ভূমি অফিসে ঢুকে তার ৩ সহযোগীসহ কর্তব্যরত অবস্থায় ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা জসিম উদ্দিনকে এলোপাতাড়ি পিটিয়ে আহত এবং সরকারী কাজে বাঁধার সৃষ্টি করেন। স্থানীয় লোকজন দ্রুত ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি শান্ত করেন।

এরপর লাঞ্ছিত ভূমি সহকারী কর্মকর্তা তাৎক্ষণিক তাকে মারধর ও সরকারি কাজে বাঁধা দানের বিষয়টি যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে জেলা প্রশাসক কুড়িগ্রামকে অবহিত করেন। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে ওই রাতেই চেয়ারম্যান আতাউর রহমানকে প্রধান আসামি করে ৩ জনের বিরুদ্ধে উলিপুর থানায় দন্ডবিধির ৪৪৭/৪৪৮/৩৫৩/৩৩২ ধারায় একটি জি আর মামলা করেন।

তদন্ত শেষে পুলিশ অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগ পত্র প্রদান করেন। মামলাটি বর্তমানে চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে বিচারের অপেক্ষায় রয়েছে।

এদিকে, জেলা প্রশাসক চেয়ারম্যানের অবাঞ্ছিত ঘটনার বিষয়টি স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়কে অবহিত করেন। পরবর্তীতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় গত ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩ তারিখ অভিযুক্ত চেয়ারম্যান আতাউর রহমানকে সাময়িক বরখাস্ত করে প্রজ্ঞাপন জারি করেন। স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব জেসমিন প্রধান সাক্ষরিত এক পত্রে বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

কিন্তু বরখাস্তকৃত চেয়ারম্যান আতাউর রহমান (আতা) বরখাস্ত আদেশ অগ্রাহ্য করে চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন অব্যাহত রাখেন। তিনি কার্যতঃ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের নির্বাহী আদেশকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখাচ্ছেন।
স্থানীয় লোকজন বিষয়টি উলিপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) কাজী মাহমুদুর রহমানকে অবহিত করলে, তিনি তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে গিয়ে চেয়ারম্যানকে দায়িত্ব পালন থেকে বিরত থাকার জন্য বলেন।

কিন্তু চেয়ারম্যান তার কথা অগ্রাহ্য করে ১৬ অক্টোবর পর্যন্ত দায়িত্ব পালন অব্যাহত রাখেন। চেয়ারম্যানের এমন একঘেয়েমীপনার কারণে প্রশাসনে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে।

এ ব্যাপারে উলিপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) ও সরকারি কমিশনার (ভূমি) কাজী মাহমুদুর রহমানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, বিষয়টি আমি জানার পর চেয়ারম্যান সাহেবকে দায়িত্ব পালন থেকে বিরত থাকতে বলেছি। তিনি কথা শুনেন না। তিনি হাইকোর্টের স্থগিত আদেশের উদ্ধৃতি দেন। আমি হাইকোর্টের স্টে অর্ডার দেখতে চাইলে তিনি তা দেখাতে ব্যর্থ হন।

এখন তিনি যা করছেন তা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। আমি বিষয়টি জেলা প্রশাসক মহোদয়কে জানিয়েছি।
এ প্রতিবেদক আজ দুপুরে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ এর সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, চেয়ারম্যান সাহেবকে আজ ডেকে আনা হয়েছিল। তিনি একজন আইনজীবীর রেফারেন্স দিয়ে বলেন বরখাস্ত আদেশ স্টে হয়েছে। দুই দিনের মধ্যে স্টে অর্ডার দেখানোর জন্য সময় চেয়েছেন।স্টে অর্ডার না দেখা পর্যন্ত দায়িত্ব পালন থেকে তাকে বিরত থাকার জন্য সতর্ক করা হয়। এছাড়া তাকে স্থায়ীভাবে বরখাস্তের জন্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেয়া হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *