আনোয়ার হোসেন আকাশ,
রাণীশংকৈল(ঠাকুরগাঁও) প্রতিনিধি:

চলমান লকডাউনে সরকারী নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে রোববার ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈল উপজেলার বৃহত্তর সাপ্তাহিক নেকমরদ হাট নিবিঘ্নে চালালো ইজারাদার। সরকারী আইন অমান্য করে হাট চালানোর খবর পেয়েও তেমন কোন ব্যবস্থা নেইনি প্রশাসন। উপজেলা প্রশাসনের ভুমিকা প্রশ্নবিদ্ধ? বলে মনে করছেন সচেতনমহল।
অথচ গত শনিবার উপজেলার কাতিহার হাট বেলা ১১টার মধ্যে এসিল্যান্ড নিজে দাড়িয়ে থেকে ভেঙে দিয়ে চলে আসেন।
আজ রোববার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সকাল থেকেই হাটে গরু ছাগল হাস মুরগী ধান গম খোলা কাপড়ের দোকান, অস্থায়ী হোটেলে কেনাবেচা শুরু হয়। গরু থেকে শুরু করে সাইকেল ধানগম কাচাবাজারসহ অন্যান্য বাজারে যথারীতি মানুষের উপচে পড়া ভিড় লক্ষ্য করা গেছে।

এ সময় সামাজিক দুরত্ব বজায় রেখে চলার কোন বালাই লক্ষো করা যায়নি। তাছাড়া বেশিরভাগ মানুষের মুখে ছিলোই না মাস্ক।
হাটে দেখা যায়, শরীরে শরীর ঘেঁষে মানুষ চলাফেরা করছে, অস্থায়ী হোটেলগুলোতে মানুষ জটলা বেধে চা পান পরোটা খাচ্ছে। খোলা কাপড়ে দোকানে মানুষ স্বাদছন্দে কেনাকাটা করছে।

ইজারাদার হাটের প্রবশেপথে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা করেছে এবং টোল আদায়ের জন্য রশিদ বই দিয়ে তাদের লোকজনকে দিয়ে টোল আদায় করছে। হাটের একাধিক ক্রেতা বিক্রেতা বলেন, হাটে প্রায় চার থেকে পাচশত গরু ছাগল কেনা বেচা হয়েছে। দুই সপ্তাহের মধ্যে আজকের হাটে স্বাভাবিক কেনাবেচা হয়েছে।

এদিকে নেকমরদ হাটে গরু ছাগলসহ অন্যান্য পণ্যের টোল আদায়ে রয়েছে অতিরিক্ত টাকা নেওয়ার অভিযোগ। হাটের একাধিক ক্রেতা জানান, গরু প্রতি সরকারী ২৩০ টাকার বদলে আদায় করা হচ্ছে ৩৫০ টাকা ছাগলের ৯০ টাকার বদলে ১২০ থেকে ১৩০ টাকা আদায় করা হচ্ছে। এছাড়াও সাইকেল ধানগম হাটিসহ অন্যান্য খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছেও নেওয়া হচ্ছে অতিরিক্ত টোল।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার ডাঃ ফিরোজ আলম জানান, করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধের প্রধান বিষয় হচ্ছে মুখে মাস্ক রেখে কথাবার্তা বলা এবং সামাজিক দুরত্ব বজায় রেখে চলাফেরা করা। তিনি বলেন, এমন পরিস্থিতিতে কোনভাবেই বৃহৎ ভাবে মানুষের সমাগম করা যাবে না। এতে করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধি পেতে পারে।

হাট বসানোর সরকারী নির্দেশনা রয়েছে কিনা জানতে এ প্রতিবেদক রোববার বেলা সাড়ে ১১টায় উপজেলা নির্বাহী অফিসার সোহেল সুলতান জুলকার নাইন কবিরের কাছে ফোনে জানতে চাইলে তিনি বলেন, হাট বসানো যাবে না। আমি ও এসিল্যান্ড একটি রাজস্ব মিটিংয়ে আছি। এসিল্যান্ড হাট ভাঙতে যাচ্ছে । এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, গত হাটে নেকমরদ ইজারাদারকে সাবধান করা হয়েছিল। সে তা উপেক্ষা করে আবারো হাট বসিয়েছে।
এ জন্য তাকে জরিমানা করা হবে।

তবে ইউএনও’র কথার সাথে কাজের কোন মিল পাওয়া যায়নি। হাট যথারীতি চলেছে। এসিল্যান্ড প্রীতম সাহা বেলা ১২ টা ৪০ মিনিটে হাটে পৌছালেও ইজারাদার অফিসে বসে ইজারাদারকে হাট ভাঙার আধা ঘন্টা সময় দিয়ে তিনি চলে যান।

এদিকে চলমান লকডাউনের মধ্যে হাট বসানো বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও হাট বসিয়ে রীতিমত হাট পরিচালনা করে নেয় ইজারাদার। নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে হাট বসালেও অজ্ঞাত কারণে কোন ব্যবস্থা নেইনি এসিল্যান্ড। রমজান মাসের কারণে হাট দুপুর দেড়টা থেকে দুইটার মধ্যে হাট শেষ হয়ে যায় বলে জানাই স্থানীয়রা।

হাট ইজারাদার মোমিন বলেন, লকডাউনের মধ্যে হাট নেওয়া হয়েছে। এখন একহাট মিস হলে প্রচুর টাকা লোকসান, এটি কে দিবে বলেন! তবে হাটে অতিরিক্ত টোল আদায়ের বিষয়টি তিনি অস্বীকার করেন।

পরবর্তীতে ঐদিন বেলা দেড়টায় ইউএনও’ সোহেল সুলতান জুলকার নাইনকে পূণরায় ফোন দিয়ে এ বিষয়ে কথা বলতেই তিনি এ প্রতিবেদকের উপরে উত্তেজিত ভাষায় বলেন,আপনাকে বললাম আমরা রাজস্ব মিটিংয়ে আছি, এখনো আছি । তিনি প্রশ্ন করেন আমার কাছে হাট বড় না রাজস্ব মিটিং বড় বলেন দেখি। এসিল্যান্ড গিয়েছে হাট ভেঙেছে। হাটের টোল বেশি নেওয়া প্রসঙ্গে বলেন, এটিতো আগে বলেননি, আগামী থেকে টোল বেশি নিতে দেওয়া হবেনা। নিলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *