সিদ্ধিরগঞ্জে একটি বেসরকারি ক্লিনিকে কর্তৃপক্ষ ও ডাক্তারের অবহেলায় এক নবজাতকের মৃত্যুর অভিযোগ করেছে মিম ইসলাম নামে (৩০) এক প্রসূতি স্বজনরা।

এদিকে প্রসুতির সিজিরিয়ান অস্ত্রোপাচারের পর প্রসূতি শারীরিক অবস্থাও অবনতি হয়েছে বলে স্বজনরা অভিযোগ করেন। সিদ্ধিরগঞ্জ পুলে মেডিস্ক্যোন হসপিটাল এন্ড ডায়াগনেষ্টিক সেন্টার নামে ক্লিনিকে বুধবার বিকেলে এ ঘটনাটি ঘটে। এরআগে বেলা বারটার দিকে সিজারিয়ান অপারেশনের সমস্ত প্রস্ততি নিলেও রোগীকে অপারেশর থিয়েটারে নেয়নি।

ব্যাথায় দুই তিন ঘন্টায় কাতরাতে থাকলেও কোনো ডাক্তার নার্স আসেননি। প্রসূতি মিম ইসলাম সিদ্ধিরগঞ্জ নাসিক ৫ নং ওয়ার্ড আউলাবন এলাকার রুবেলের স্ত্রী। এ ঘটনায় ব্যাপক উত্তেজনা ও আলোচনার সৃষ্টি হয়।
এদিকে খবর পেয়ে বিষয়টি জানতে রাত ৮ টার দিকে গণমাধ্যম কর্মীরা ওই ক্লিনিকে গেলে কর্তৃপক্ষ ও দায়িত্বরত কর্মকর্তারা কেউ কিছু না বলে নানা অজুহাতে ক্লিনিক থেকে বের হয়ে যায়।

কর্তব্যরত মিজান নামক এক ব্যক্তি তাকে ক্লিনিকের সুপারভাইজার পরিচয় দিলেও কথা বলতে অনেকটা নারাজ ছিলেন। তিনি বলেন আমি কিছু জানিনা কোন রোগী চিনিনা, আমাদের হাসপাতালে এধরনের কোন ঘটনা ঘটেনি। এরপরপরই তিনি সড়ে পড়েন। এরপর রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত বিষয়টি নিয়ে কথা বলার জন্য অপেক্ষা করলেও কাউকেও পাওয়া যায়নি।

নিহত নবজাতকের নানী আনোয়ারা বেগম অভিযোগ করেন, আমার গর্ভবতী মেয়ে মিম ইসলামকে বুধবার সিদ্ধিরগঞ্জ মেডিস্ক্যান হসপিটাল এন্ড ডায়াগনেষ্টিক ক্লিনিকে ভর্তি করানো হয়। তারা কোন প্রকার পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই তাড়াহুড়ো করে প্রসূতির সিজারিয়ান অপারেশন করে। সিজারের পরে ডাক্তার জানান, শিশু সন্তানটি মারা গেছে।

এ কথা শুনে অমরা সবাই আমার মেয়েকে দেখতে চাইলে নার্সরা আমাদের দেখা করতে যেতে দেয়নি। এরপরে অনেক খোঁজাখুঁজি ও বাকবিতন্ডা করা হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য আমার মেয়েকে এবং নবজাতকে মাতুয়াইল শিশু মাতৃসদন হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য বলেন এবং ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ একটি অ্যাম্বুলেন্সে আমার মেয়েকে রেখে সটকে পড়ে।

তারপর অ্যাম্বুলেন্সের মাধ্যমে মা ও নবজাতকে আমরা সেই হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক বলেন নবজাতকত মৃত আর মেয়ের অবস্থা ভালো নয়। পরে সেখানে চিকিৎসা নিয়ে আবারও মেডিস্ক্যোন হসপিটাল এন্ড ডায়াগনেষ্টিক সেন্টারে নিয়ে আসি।
কান্না জড়িত কণ্ঠে তিনি আরও বলেন, আমার নাতি ও মেয়ের অক্সিজেন প্রয়োজন ছিলো তারা তা দিতে পারেনি।

আমার ভুমিষ্ঠ নাতি ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ ও ডাক্তারের অবহেলার অক্সিজেনের সংকটে মারা গেছে। আমার মেয়ের সুচিকিৎসা হয়নি। আমি এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই। এবিষেয় প্রসুতির ভাবি আখি আক্তার বলেন, হাসপাতালে আনার সময় আমার ভাবি একদম সুস্থ ও স্বাভাবিক ছিলেন। এখানকার ডাক্তার তাঁর চিকিৎসা ভালো দিতে পারেননি।

আমার ননদের এই অবস্থার জন্য এই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দায়ী। তাদের গাফিলতির কারণে বাচ্চাটা মারা গেছে। হাসপাতালের লোকজন বলল রোগী ভালো আছে নরমালি ডেলিভারি হবে আবার বারোটার দিকে এসে বলে সিজার করতে হবে সই দেন। কিন্তু রোগীর পেট ব্যথা যখন শুরু হয় ১টা থেকে ৪টা পর্যন্ত হাসপাতলে রোগীর সামনে কোন নার্স ডাক্তার বা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কেউই কাছে আসেনি আমরা অনেক আর্তনাদ করেছি ডাক চিৎকার করেছি। পরে বিকাল ৪টার সময় ডাক্তার আসে সিজার করেন।

অন্যদিকে মিতা দাস নামে একজন নিজেকে ডাক্তার পরিচয় দিলে বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমাদের কোন গাফিলতি ছিল না ডেলিভারি সময় অতিক্রম হওয়াতে সমস্যা হতে পারে। এইমাসের ৯ তারিখে ডেলিভারির সময় ছিল। তা অনেকটা ওভার হয়েছে।

নবজাতকে অক্সিজেন না দেয়ায় মৃত্যুর কারণ কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন। এটা আমাদের মিস হয়েছে কিন্তু এর জন্য কি গার্জিয়ান কি দায়ী না। রোগীর অবস্থার অবনতি দেখে রোগীকে দ্রুত মাতুয়াইল শিশু মাতৃসদন হাসপাতালে পাঠাই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *