আনোয়ার হোসেন আকাশ,
রাণীশংকৈল (ঠাকুরগাঁও)প্রতিনিধি:

ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ উপজেলার বিএসসি পড়ুয়া ছাত্র মীর মাহবুব হোসেন সুমন (২৫) অপহরণের ৬ দিনেও কোন খোঁজ খবর পাওয়া যায়নি তার। এবিষয়ে থানায় জিডি করতে গেলে তা নিচ্ছেননা থানা পুলিশ অভিযোগ পরিবারটির।

মীর মাহবুব হোসেন সুমন পীরগঞ্জ উপজেলার করনা মীরপাড়া গ্রামের হাসান আলীর ছেলে ও নর্দান বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের শেষ বর্ষের ছাত্র।

বৃহস্পতিবার (০৬ অক্টোবর ) সকালে সুমনের পরিবার প্রতিবেদককে জানান, গত শুক্রবার (৩০ সেপ্টেম্বর) সকালে সুমন বাড়ি থেকে তার মাকে ডাক্তার দেখানোর জন্য মোটরসাইকেলে করে দিনাজপুরে রওনা দেন। যাওয়ার পথে পীরগঞ্জ উপজেলার সাগুনী ব্রিজের পার্শ্বে বোচাগঞ্জ ও পীরগঞ্জ উপজেলার মাঝামাঝি জায়গায় তাদের পথ রোধ করে ৫ জন সাদা পোশাকধারী ব্যক্তি। তারা মোটরসাইকেলের কাগজ পত্র দেখতে চেয়ে সুমনকে রাস্তার সাইডে নিয়ে গিয়ে মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে যায়।

এরপর থেকে ৬ দিন হয়ে গেলেও সুমনের কোন সন্ধান না পাওয়ায় পরিবারটি হতাশ ও দু:শ্চিন্তার মধ্যে দিন পার করছেন। তবে পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে পীরগঞ্জ থানায় জিডি করতে গেলে বোচাগঞ্জ থানায় দেখিয়ে দেন আর বোচাগঞ্জ থানায় জিডি করতে গেলে পীরগঞ্জ থানায় দেখিয়ে দেন। এতে পরিবারটি পড়েছেন বেশ বিপাকে।

সুমনের মা মাহমুদা বেগম বলেন, আমি এবং আমার ছেলে মোটরসাইকেল যোগে দিনাজপুরে ডাক্তারের কাছে যাওয়ার পথে সাগুনী ব্রিজ অতিক্রম করে একটু সামনে গেলেই আমাদের পথরোধ করে ৫ জন লোক। কোন কিছু বুঝে উঠার আগেই আমার ছেলেকে গাড়িতে তুলে নিয়ে চলে যান তারা। আজ থেকে ৬ দিন অতিবাহিত হলেও সন্ধান মেলেনি আমার ছেলের।

বাবা মীর হাসান আলী বলেন, আমাদের সব আত্মীয় স্বজনের বাড়িতে খোঁজসহ অনেক জায়গায় খোঁজা খুঁজি করেও ছেলের কোন সন্ধান পাওয়া যায়নি। এবিষয়ে পীরগঞ্জ থানায় জিডি করতে গেলে সেখানকার থানা পুলিশ দেখিয়ে দেয় বোচাগঞ্জ থানা আর বোচাগঞ্জ থানায় গেলে তারা দেখিয়ে দেয় পীরগঞ্জ থানা। কিন্তু দুই থানার এক থানায়ও জিডি জমা নিচ্ছেন না। আমরা এখন কোথায় যাবো কি করবো। তাই আমি প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করছি আমাকে যেন আমার সন্তান ফেরতের ব্যবস্থা করে দেন তিনি।

জিডি না নেওয়ার কারণ জানতে চাইলে পীরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহাঙ্গীর আলম বলেন, বিষয়টি নিয়ে ছেলের পরিবার থানায় এসেছিল। যেহেতু ঘটনাটি বোচাগঞ্জ থানা এরিয়ায় ঘটেছে সেহেতু সেই থানায় তাদের জিডি করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।, এছাড়াও সুমনের খোঁজ বা সন্ধানের বিষয়ে জানতে চাইলে এবিষয়ে তিনি কিছুুই বলতে পারেননি।,

অন্যদিকে সুমন অপহরণের বিষয়ে থানায় তার পরিবারের জিডি না নেওয়ার অভিযোগটি অস্বীকার করে বোচাগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুর রাজ্জাক বলেন, আমরা থানা পুলিশ জিডি (সাধারণ ডায়েরি) ও মামলা নেওয়ার জন্যই আছি। সুমনের বিষয়ে থানায় এক ভদ্রলোক এসে বলেছিল যে, তার ছেলে নিখোঁজ। তার কথা অনুযায়ি আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করি। কিন্তু ঘটনাটি যেখানে ঘটেছে সে জায়গাটি আমার থানার এরিয়ায় না। সেটি ঠাকুরগাঁও এরিয়ায় ঘটেছে। আমার এরিয়ায় হলে আমরা অবশ্যই জিডি বা মামলা নিবো। তার পরেও আমরা আমাদের থানা এলাকায় ছেলেটির খোঁজ খবর নিচ্ছি খোঁজ পেলে তার পরিবারকে জানানো হবে।,

এবিষয়ে দিনাজপুরের কাহারোল ও বোচাগঞ্জ সার্কেল এর সহকারি পুলিশ সুপার মো. রওশন আলী বলেন, যেহেতু তাকে অপহরণ করা হয়েছে তাহলে থানায় জিডি হবে কেন। এক্ষেত্রে থানায় অপহরণ মামলা হবে। আর যেহেতু ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জের বাড়ি থেকে বেড়িয়ে ভিকটিম নিখোঁজ বা অপহরণ হয়েছে সেক্ষেত্রে ভিকটিমের নিজ থানায় অর্থাৎ ভিকটিম যে এলাকার বাসিন্দা সে এলাকার থানায় মিসিং জিডি বা অপহরণ মামলা করতে হবে।,

সুমনের বড় ভাই মামুন বলেন, ‘আমরা ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ থানা ও দিনাজপুরের বোচাগঞ্জ থানায় ৬ অক্টোবর বুধবারেও গিয়েছি কোন থানায় আমাদের ডিজি জমা নেননি এবং কি তারা আমাদের কোন ধরণের পরামর্শও দেননি। তারা যদি বলতো এবিষয়ে মামলা দিতে হবে তাহলে আমরা মামলাই দিতাম। কিন্তু তারা তেমন কোন কিছু না বলে পীরগঞ্জ থানায় গেলে তারা বলে বোচাগঞ্জ থানার কথা আর বোচাগঞ্জ থানায় গেলে তারা বলে পীরগঞ্জ থানার কথা।,

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *