আনোয়ার হোসেন আকাশ,
রাণীশংকৈল (ঠাকুরগাঁও)প্রতিনিধি:

ঠাকুরগাঁও-৩ আসনের উপ-নির্বাচনে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য হাফিজউদ্দীন আহাম্মদ নির্বাচিত হয়েই জাতীয় সংসদে স্বাগত বক্তব্যেই রাণীশংকৈল ডিগ্রী কলেজের শিক্ষক নিয়োগ বাণিজ্যে, ও কলেজের বিভিন্ন ফান্ডের টাকার অনিয়মসহ বিস্তর অভিযোগ তুলে ধরে কলেজটির দূর্নীতির বিষয়ে তদন্তে একটি কমিটি গঠনের দাবী জানান।

নব-নির্বাচিত সংসদ সদস্যের সংসদে এমন দাবীর কারণে রাণীশংকৈল উপজেলা জুড়ে চলে আলোচনা, সমালোচনা । এরই মধ্যে এবার অভিযোগ উঠেছে আইন অমান্য করে ঠাকুরগাঁও রাণীশংকৈল ডিগ্রী কলেজের সভাপতি হয়েছেন রাণীশংকৈল পৌরসভার মেয়র ও উপজেলা আ’লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তাক ।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহের গভর্ণিং বডি (সংশোধিত) সংবিধি ২০১৯ এ বলা আছে, মোট ১৫ সদস্যে বিশিষ্ট কমিটির গভর্ণিং বডি নির্বাচনে কোন ব্যক্তি একাধিক ক্যাটাগরি হইতে প্রার্থী হইতে পারিবেন না। অথচ রাণীশংকৈল পৌরসভার মেয়র কলেজ গভর্ণিং বডি নির্বাচনের গত ১ সেপ্টেম্বর ২০২১ সালে ঘোষিত তফশীল অনুযায়ী প্রথমে এককালীন ৩ লাখ টাকা দিয়ে বিনা প্রতিদ্বন্দিতায় দাতা সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। পরে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নজর ফাকিঁ দিয়ে গভর্ণিং বডির সভাপতিও নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি একাই ১৫ সদস্য বিশিষ্ট কমিটির দুটি পদ ধরে রয়েছেন। যা নিয়ে কলেজ জুড়ে আলোচনা সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে।

নিয়মনুযায়ী গভর্ণিং বডির নির্বাচিত পদের ব্যক্তিদের নাম ও সভাপতি, বিদ্যেৎ সাহী পদে প্রস্তাবিত ব্যক্তিদের নামের ফরম পূরণ করে তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ সইদুল হক ও গভর্ণিং বডির সভাপতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সোহেল সুলতান জুলকার নাইন কবির স্টিভ স্বাক্ষরিত একটি পত্র গত ২০২১ সালের ৬ অক্টোবর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরির্দশক বরাবরে প্রেরণ করেন। সেখানে প্রস্তাবিত সভাপতির জন্য তিনজন ব্যক্তির নাম পাঠান কলেজ কর্তৃপক্ষ, নামগুলোর মধ্যে প্রথমে রাণীশংকৈল পৌরসভার মেয়র মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তাকের নাম দেন।

পরে একজন অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক ও একজন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের নাম দেন তারা। তবে মেয়রকে কলেজের গভর্ণিং বডির সভাপতি করার জন্য ঠাকুরগাঁও-৩ আসনের তৎকালীন সংসদ সদস্য জাহিদুর রহমানের সুপারিশ পত্রও জমা দেন কলেজ কর্তৃপক্ষ। যে কারণে মেয়র দাতা সদস্যের পাশাপাশি সভাপতির পদটিও হাসিল করেছেন।

রাণীশংকৈল ডিগ্রী কলেজের গভর্ণিং বডির শিক্ষক প্রতিনিধি সহকারী অধ্যাপক শাহজাহান আলী বলেন, মেয়র মোস্তাফিজুর রহমান দাতা সদস্যে হিসাবে নির্বাচিত হয়েছিলেন। এখনও দাতা সদস্যের পদটিতে রয়েছেন । পাশাপাশি তিনি আবার এখন কলেজের সভাপতি পদটিও ধরে রয়েছেন।

এ ব্যাপারে তৎকালীন সাবেক উপধ্যক্ষ জামালউদ্দীন বলেন, মেয়র দাতা সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। তিনি আবার সভাপতি কিভাবে নির্বাচিত হয়েছে সেটি তার জানা নেই।

গভর্ণিং বডির সভাপতি মেয়র মোস্তাফিজুর রহমানের কাছে কলেজ বিষয়ে মুঠোফোনে কথা বলতে চাইলে তিনি তার অফিসে যেতে বলেন, পরে অফিসে গেলে তাকে পাওয়া যায়নি।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সোহেল সুলতান জুলকার নাইন কবির স্টিভ বলেন, আসলে সে মূহুর্তে আমি হার্ডের অপারেশন করা রোগী ছিলাম। কোন কিছু বুঝা শোনার সুযোগ না দিয়ে ভুল কিছু উপস্থাপন করে আমার কাছে স্বাক্ষর নিয়েছে। একজন ব্যক্তি একাধিক পদে থাকার বিষয়ে তিনি বলেন, অব্যশই এটি সাংঘর্ষিক।

রাণীশংকৈল ডিগ্রী কলেজের অধ্যক্ষ হেলাল উদ্দীন বলেন, আসলে আমি সদ্য যোগ দিয়েছি। কিভাবে দাতা সদস্য আবার সভাপতি হয়েছে তা আমার জানা নেই।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ডক্টর মোহাম্মদ মসিউর রহমান মুঠোফোনে জানান, একজন ব্যক্তি অবশ্যই দুটি পদে থাকতে পারে না। বিষয়টি আমরা ইতোমধ্যে জেনেছি। বিষয়টি গুরত্ব সহকারে দেখা হবে। এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, যদি দাতা সদস্য সভাপতি হতে চাই তাহলে তাকে দাতা সদস্য পদটি থেকে পদত্যাগ করতে হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *