আনোয়ার হোসেন আকাশ,
রাণীশংকৈল (ঠাকুরগাঁও)প্রতিনিধি:

‘আমি চাল চোর নই, আমি চাল চুরি করিনি। তবুও এই মামলার দায়ে আমাকে নৌকার প্রতীক হারাতে হলো’। অশ্রুসিক্ত নয়নে সমর্থকদের উদ্দেশ্য নিজের ভাবনা তুলে ধরে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালেন ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার ঢোলোরহাট ইউপি চেয়ারম্যান প্রার্থী সীমান্ত কুমার বর্মণ।

বুধবার (১৫ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় ঢোলোরহাট বাজারে সমর্থকদের নিয়ে আয়োজিত এক সভায় নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেন সীমান্ত। এসময় তিনি কেঁদেছেন, সেই সাথে কাঁদিয়েছেন উপস্থিত হাজারো সমর্থকদের।

আসন্ন ২৬ তারিখের নির্বাচনকে ঘিরে বেশ জলঘোলা হয়েছে ঢোলোরহাট ইউনিয়নে। এই ইউনিয়ন থেকে বর্তমান চেয়ারম্যান সীমান্তকে প্রথমে নৌকা মার্কার প্রতীক দেয় আওয়ামী লীগ। তবে মনোনয়নপত্র দাখিলের আগেরদিন দুদকের করা চাল আত্মসাতের মামলার দায়ে তার নৌকা প্রতীক পরিবর্তন করা হয়। দেওয়া হয় স্কুল শিক্ষক অখিল চন্দ্র রায়কে।

এর দুইদিন পরেই গত ৩০ নভেম্বর চাল আত্মসাতের মামলায় দোষী প্রমাণিত না হওয়ায় ঠাকুরগাঁও জেলা দায়রা জজ আদালত মামলা থেকে অব্যাহতি দেয় তাকে। কিন্তু নৌকার মনোনয়ন আর ফেরত পাননি তিনি। এ অবস্থায় সীমান্ত কুমার বর্মন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দাখিল করেন। মটর সাইকেল প্রতীকে প্রচারণাও শুরু করেন তিনি।

ঢোলোরহাট বাজারে সমর্থকদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখছেন চেয়ারম্যান প্রার্থী সীমান্ত কুমার বর্মণ। ঢোলোরহাট বাজারে সমর্থকদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখছেন চেয়ারম্যান প্রার্থী সীমান্ত কুমার বর্মণ।

এদিকে নৌকার মনোনয়ন পেলেও নির্বাচন কমিশন থেকে ঋনখেলাপীর দায়ে মনোনয়ন বাতিল হয়ে যায় অখিল চন্দ্রের। আপিল করেও প্রার্থিতা ফিরে না পাওয়ায় পরে হাইকোর্টে রিট করেন তিনি। এতে করে হাইকোর্টের রায়ে প্রার্থিতা ফিরে পায় অখিল। এরপর সীমান্ত কুমার রায়কে দলীয়ভাবে নির্বাচন হতে সরে দাঁড়ানোর চাপ দেওয়া হয়। এমতাবস্থায় মনোনয়ন প্রত্যাহারের সুযোগ না থাকায় আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচন হতে সরে দাঁড়ান সিমান্ত কুমার বর্মন।

সমর্থকদের মাঝে নির্বাচনী ভাবনা অবগত করতে গিয়ে তিনি বলেন, আমি একজন স্কুল শিক্ষক এবং সাধারণ পরিবারের সন্তান হয়েও ২০১৬ সালে ভোট দিয়ে আপনারা আমাকে চেয়ারম্যান নির্বাচিত করেছেন।এই ঢোলারহাট ইউনিয়নের কতিপয় কুচক্রী ব্যক্তির চক্রান্তে চাল আত্মসাৎ এর মামলা হয় আমার নামে। মামলা করার পেছনে অনেক কারণও রয়েছে, সেদিকে আমি আর বলছিনা। সেই মামলায় আমি ৪৭ দিন জেলে হাজতে ছিলাম। জেল হাজতে আমি অনেক কষ্টে ছিলাম। পরে, আমি উচ্চ আদালত হতে জামিনে মুক্ত হই ।

তিনি বলেন, আমি নির্দোষ বলেই আদালত থেকে বেকসুর খালাস পাই। আমাকে দেওয়া নৌকা মার্কা পরিবর্তন করে পরে অখিল চন্দ্র রায়কে দিলেও আমার কোন দুঃখ নেই। আপনারা আমাকে ভুল বুঝবেন না। আমি চেয়ারম্যান না থাকলেও আপনাদের সুখে দুখে পাশে আছি, ছিলাম,থাকব।

তিনি অশ্রুসজল কণ্ঠে আরও বলেন,আমি নৌকা প্রতীক নিয়ে আপনাদের ভোটে চেয়ারম্যান হয়েছিলাম। আজ নৌকা প্রতীকের বিরোধিতা করতে পারছি না। দলের শৃঙ্খলা মাথা পেতে নিয়ে নির্বাচন হতে সরে দাঁড়ালাম। এ সময় শতশত কর্মী সমর্থক কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *