আনোয়ার হোসেন আকাশ,
রাণীশংকৈল (ঠাকুরগাঁও)প্রতিনিধি:

ঠাকুরগাঁওয়ের রানীশংকৈল উপজেলার বাচোরে ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনের একটি ভোটকেন্দ্রে ফলাফল ঘোষণার পর পুলিশের গুলিতে ৯ মাস বয়সী এক শিশু নিহত হয়েছে। গুলিবর্ষণের ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও বেশ কয়েকজন। এতে এলাকায় আতঙ্ক বিরাজ করছে। এ আতঙ্কে ভাংবাড়ি ভিএফ নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে আসছে না শিক্ষার্থীরা।

আতঙ্কে থাকা ফুটকিবাড়ি ভাংবাড়ি, মহেশপুরসহ, আশপাশের গ্রামের অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা জানান, ভোটের দিন ভাংবাড়ি ভিএফ নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ভোটকেন্দ্রে পুলিশের গুলিতে ছোট্ট শিশু সুরাইয়া মারা যায়। এ কারণে ভয়ে বিদ্যালয়ে যাচ্ছে না। পুলিশ কারো নাম উল্লেখ না করে অজ্ঞাতদের নামে ৮০০ জনকে আসামি করেছে। বাড়িতে কোনো পুরুষ থাকছে না আর বাচ্চাদের স্কুলে পাঠাতে ভয় পাচ্ছে।

মামলার পর থেকেই গ্রেফতার আতঙ্কে ভাংবাড়ি মহেশপুর ফুটকিবাড়ি গ্রাম পুরুষ শূন্য হয়ে যায়। বাড়িতে আয় রোজগারের কোন মানুষ না থাকায় বিপাকে পড়েছেন গৃহবধূরা। আতঙ্কে দিন কাটছে তাদের। গ্রেফতার আতঙ্কে রয়েছে ওই এলাকার পরিবারগুলো।

স্থানীয় এক ব্যক্তি বলেন, ‘আমরা গরিব মানুষ। দিন এনে দিন খাই। মারামারি সম্পর্কে আমরা কিছুই জানি না। তার পরও আসামি হয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে উপার্জনক্ষম ব্যক্তিরা। একদিন কাজ না করলে- না খেয়ে থাকতে হয়। এখন অনেকজনের নামে অজ্ঞাতনামা মামলা হয়েছে। আমি নিজেই অনেক ভয়ে আছি। কাকে কখন তুলে নিয়ে যায় বলা যায় না। আমরা এর সুষ্ঠু সমাধান চাই।

আরেক বাসিন্দা শরিফা বেগম বলেন, আমার ছোট তিনটা সন্তান আর স্বামী নিয়ে সংসার। মামলা আর গ্রেফতারের ভয়ে স্বামী বাড়িতে থাকছেন না। আমরা নির্বাচনের ঘটনার দিন ছিলাম না। ভোট দিয়ে আমরা চলে এসেছি। এখন মামলা হয়েছে অনেক জনের নামে। এ নিয়ে আমরা অনেক ভয়ে আছি। সন্তানদের স্কুলে পাঠাতে ভয় হয়। তাই যেতে দেয়না।

ভাংবাড়ি ভিএফ নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, পুরো বিদ্যালয়ে সুনসান নীরবতা। অফিস রুমে বসে শিক্ষকরা গল্প করছেন আর পাশের ক্লাসরুমে মাত্র ৭ জন শিক্ষার্থীকে নিয়ে ক্লাস করছেন এক শিক্ষিকা।

এ সময় কয়েকজন শিক্ষার্থী জানায়, কয়েক দিন পর তারা স্কুলে এসেছে। তবুও ভয় হচ্ছে পুলিশের। আজ তাদের স্কুলে ২৫ থেকে ৩০ জন পুলিশ এসেছিল। পরে জানতে পারে তারা তদন্ত করতে এসেছে। মামলা হওয়ায় মা-বাবা তাদের স্কুল আসতে দেন না।

এ বিষয়ে ভিএফ নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মতিনুর রহমান বলেন, ‘২৭ জুলাই আমার স্কুলে মহেশপুর ওয়ার্ডের একটি ভোটকেন্দ্র ছিল। ভোটের ফলাফল ঘোষণাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ হয়। এ সময় ৯ মাসের একটি শিশু নিহত হয়। ঘটনাটি ঘটে আমার স্কুল থেকে ৩০০ গজ দূরে পাকা রাস্তায়। বর্তমানে শিক্ষার্থীরা স্কুলে আসতে ভয় পায়। অভিভাবকরা দ্বিধাদ্বন্দ্বের মধ্যে আছেন, বাচ্চাদের স্কুলে পাঠাবেন কি না। সুষ্ঠু তদন্ত করে দোষীদের বিচারের আওতায় যেন আনা হয় প্রশাসনের কাছে এটাই দাবি। আর এলাকার নিরীহ লোকজন যেন অযথা হয়রানি শিকার না হয়।’

প্রসঙ্গত, গত ২৭ জুলাই রাণীশংকৈল উপজেলার তিনটি ইউনিয়নে ভোট অনুষ্ঠিত হয়। শিশু সুরাইয়াকে নিয়ে মা মিনারা বেগম রাণীশংকৈল ভাংবাড়ি ভিএফ নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রে ভোটের ফলাফল দেখতে যান।

ভোটগ্রহণ শেষে ফলাফল ঘোষণাকে কেন্দ্র করে বাচোর ইউনিয়নের ভাংবাড়ি ভি.এফ নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে পরাজিত ইউপি সদস্য সমর্থকদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংঘর্ষ হয়।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ গুলি ছুড়লে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয় শিশু সুরাইয়া। সেদিনের সেই ঘটনায় পুলিশ ও প্রিসাইডিং অফিসার বাদী হয়ে তিনটি মামলা করে। মামলাগুলোয় ৮শ’ জনকে অজ্ঞাতনামা করে মামলা করা হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *