আনোয়ার হোসেন আকাশ,
রাণীশংকৈল (ঠাকুরগাঁও)প্রতিনিধি:

ঠাকুরগাঁওয়ের রানীশংকৈল পৌরসভার দক্ষিণপাড়া গ্রামের মৃত মনিরুল ইসলাম টিপু ও জরিনা বেগম দম্পতির ছেলে জাহিদ হাসান জনি (১৮)।

রানীশংকৈল পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি ও পীরগঞ্জ সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসিতে উত্তীর্ণ হয়ে হয়ে সে এবার এমবিবিএস প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় মেধাক্রমে ৩৮০১ তম হয়ে সিরাজগঞ্জের শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছে।

জনি রংপুর মেডিকেল কলেজ কেন্দ্র থেকে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করে। এ ভর্তি পরীক্ষার ১০০ নম্বরের মধ্যে সে ৭২ নম্বর পেয়েছে।

রোববার (১২ মার্চ) প্রকাশিত ফলাফলে মেডিকেল কলেজে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পেয়েছেন জনি।

এ বিষয়ে জাহিদ হাসান জনি বলেন, ‘তার অদম্য ইচ্ছা শক্তিই তাকে এ সফলতা এনে দিয়েছে। শিক্ষা জীবনজুড়েই সে আর্থিক অভাব অনটনের মধ্যে দিয়ে লেখাপড়া চালিয়ে গেছে। বাবার স্বপ্ন ছিল বড় হয়ে ছেলে ডাক্তার হবে। স্কুলে পড়া অবস্থায় সড়ক দুর্ঘটনায় হারাতে হয় বাবাকে। বাবার স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে নিজের সবটুকু দিয়ে পড়াশোনা চালিয়ে গেছে সে।

একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি বাবাকে হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পুরো পরিবার। তখন থেকেই সংসারের হাল ধরতে হয় তাকে। কৃষিকাজ করে সংসারের সকল খরচ জুগিয়ে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া ছিল বেশ কষ্টকর। তবে সব কষ্ট মানিয়ে নিয়ে বাবার স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে পেরেছি।

বাবা মারা যাওয়ার পর বাড়ির সব দায়িত্ব তাকে নিতে হয়। নিজেই কৃষিকাজ করার পাশাপাশি পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া খুব কঠিন ছিল, তবুও হাল ছাড়েনি। কারণ স্বপ্নটা আমার বাবার।

আজ মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ পেয়েছি। কেবল পথচলা শুরু। সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন যাতে করে একজন মানবিক ডাক্তার হয়ে পরিবার, আত্মীয়স্বজনসহ দেশবাসীর সেবা করতে পারি।

এক বড় ভাইয়ের মাধ্যমে সামান্য টাকায় রংপুর কোচিংয়ে ভর্তি হই। তারপর বাড়িতে এসে কাজ করে আবার চলে যেতাম। পরিশ্রম আর মেধার জোরেই সে তার সব বাঁধা জয় করে মেডিকেলে পড়ার সুযোগ পেয়েছে।

এ বিষয়ে জনির মা জরিনা বেগম বলেন,
তাদের জমজ ২ সন্তানের মধ্যে জনি বড়। বোনটা ছোট। তাদের বাড়ির বসতভিটা আর মাঠে কয়েক শতক আবাদি জমি ছাড়া আর কিছুই নেই। জনি ‘অনেক কষ্ট করে পড়াশোনা করেছে। সে সব কৃষিকাজ করেই সংসারটা চালায়তো। আজ ডাক্তারি পড়ার সুযোগ পাইছে। জনি ছোটবেলা থেকেই অত্যন্ত মেধাবী, ছোট থেকেই তার ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন ছিল। সে স্বপ্ন পুরণের জন্য সে কঠোর অধ্যবসায় করেছে।

তিনি আরও বলেন, জনিকে কোনো সময় একটা ভাল পোশাক কিনে দিতে পারিনি। যা দিয়েছি তাতেই সে সন্তুষ্ট থেকেছে।

এ বিষয়ে প্রতিবেশী সুজন বলেন, বাবাকে হারানোর পর ছেলেটা খুব কষ্ট করেছে। মাঠে কৃষিকাজ করে সংসারের খরচ ও পড়াশোনা চালিয়ে গেছে। জনি অত্যন্ত মেধাবী ছেলে। সে মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পাওয়ায় আমরা তার জন্য গর্বিত।

রানীশংকৈল পৌরমেয়র মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তাক বলেন, তার বাবা মারা যাওয়ার পর জনি অনেক পরিশ্রম করেছে। আজ সে সফল হয়েছে। মাঝেমধ্যে আমি তাদের খোঁজখবর নিই। পরবর্তীতে তাকে সার্বিক সহযোগিতা করা হবে।

এ বিষয়ে রাণীশংকৈল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সোহেল সুলতান জুলকার নাইন কবির স্টিভ বলেন, বিষয়টি যেমনিভাবে কষ্টের তেমনি অনুপ্রেরণার।
পড়াশোনার ইচ্ছাশক্তি থাকলে যে কোনো উপায়ে তা চালিয়ে যাওয়া সম্ভব। জনি সেটাই প্রমাণ করেছে। রাণীশংকৈল উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এবং আমার ব্যক্তিগত থেকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করা হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *