শেখ শহীদুল্লাহ্ আল আজাদ. নিজেস্ব প্রতিনিধিঃ

খুলনার জেলার রূপসা উপজেলা থেকে ৯ই মে রবিবার বিদায় নিলেন ৩০ তম ব্যাচের প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তা সিনিয়র সহকারী সচিব নাসরিন আক্তার। নিজ গুণে যোগদানের কিছু দিনের মধ্যেই সর্বস্তরের মানুষের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছিলেন তিনি। উপজেলাবাসী একজন সজ্জন, কর্মঠ, জনবান্ধব ও দক্ষ অফিসারকে হারিয়ে আজ বেদনাবিধুর।অপরদিকে একইদিনে নবাগত উপজেলা নির্বাহী অফিসার হিসেবে রুবাইয়া তাসনিম দায়িত্বভার গ্রহণ করেছেন।

এরআগে তিনি বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে কর্মরত ছিলেন এ দিকে জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলির উপর ছিল তার সজাগ দৃষ্টি। মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের যে মূল ধর্ম কাজের মধ্যদিয়ে জনগনের আস্থা অর্জন করা আমার ধারণা নাসরিন তা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। প্রশাসনিক ক্যাডারের সদস্য হিসেবে আমি নাসরিন জন্য গর্ব অনুভব করি। আমি তার সার্বিক সাফল্য কামনা করি। – যুগ্মসচিব(অবসরপ্রাপ্ত) ও সাবেক ডিসি এসএম হারুনার রশিদ। নাসরিন আক্তার ২০১৯ সালের ২৬ আগষ্ট এ উপজেলায় যো গদান করেছিলেন। ১৮ মাস রূপসা উপজেলার মানুষকে সেবা করার সুযোগ পেয়েছেন তিনি।

এ সময়ে তিনি সততা, নিষ্ঠা ও দক্ষতার সাথে জনগণের সেবা দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন এলাকার সর্বস্তরের লোকজন। করোনা মহামারীর মধ্যেও উপজেলার সার্বিক উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা রেখেছেন। করোনার প্রাদূর্ভাব মোকাবেলায় তিনি অক্লান্ত পরিশ্রমের মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন।কর্মজীবী শিশুদের জন্য গড়ে উঠা রূপসা উপজেলার অনুশীলন মজার স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক অলক চন্দ্র দাস বলেন, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী সমূহে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে এবং বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন বা তরুণ শক্তিকে পুনরুজ্জীবিত করতে সক্ষম হয়েছেন তিনি।

খুলনার রূপসা উপজেলা অফিসার্স ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মোঃ আবু বকর মোল্লা বলেন, আমার ২০ বছরের চাকুরীকালে যতগুলো সাহসী, চৌকস, সৎ, ন্যায়পরায়ন ইউএনও পেয়েছি তাদের মধ্যে তিনি অন্যতম। খুলনা পিআইডি’র আলোকচিত্রগ্রাহক মিজানুর রহমান বলেন, আমি বেশ কয়েকবার রূপসায় সরকারি প্রোগ্রাম কভারেজ করতে গিয়ে অল্প সময়ে যেটুকু লক্ষ্য করেছি, তা হলো, উনি খুব স্থির ও ধৈর্য্যশীল মানুষ। মানুষের কথা মনোযোগ দিয়ে শুনতেন। বিরক্ত, অবহেলা বা ব্যস্ততা দেখাতেন না কাউকে। রূপসা উপজেলা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আঃ রাজ্জাক বলেন, তিনি জনবান্ধব মানুষ ছিলেন। অল্প সময়ের মধ্যে উপজেলার সকল শ্রেণী পেশার মানুষের মন জয় করে ছিলেন। নিম্ন শ্রেণী থেকে উচ্চ পদস্থ লোক খুব সহজে তার কাছে যেত পারত।

কোন ঘটনা ঘটলে তাৎক্ষনিক ভাবে সেখানে ছুটে যেতেন।খুলনা জেলা রূপসা উপজেলার স্বাধীনতা শিক্ষক পরিষদ সভাপতি ও নৈহাটী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ রবিউল ইসলাম পলাশ বলেন, কোভিড-১৯ এর সময় ওনার কর্মকাল। আমাদের সাথে একিভূত হয়ে অনলাইন ক্লাসসহ সকলকে সাথে নিয়ে উন্নয়নে তিনি ব্যাপক কাজ করেছেন। একজন মানবিক কর্মকর্তা হিসেবে ওনার জুড়ি মেলা ভার। রূপসা উপজেলার ৩নং নৈহাটী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ কামাল হোসেন বুলবুল বলেন, করোনা সংকটে আমার নৈহাটী ইউনিয়ন ছিল হটস্পট। এই সময়ে লকডাউন নিশ্চিত, খাদ্য সরবরাহ, সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিতকরণসহ পরিস্থিতি মোকাবেলায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করেছেন তিনি। নারী হয়েও দিন-রাত কাজ করে গেছেন।

তিনি একজন সৃজনশীল ও মানবিক ইউএনও। তিনি কোন কল্যাণকর কাজ থেকে পিছু পা হননি।রূপসার বাসিন্দা খুলনা সরকারি মহিলা কলেজের সহযোগী অধ্যাপক আহমেদুল কবির চাইনিজ বলেন, রূপসাবাসী একজন সজ্জন, জনবান্ধব ও মানবিক কর্মকর্তাকে হারালো। রূপসা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এমিড রকিব উদ্দিন বলেন, মানবিক, সৎ ও সাহসী মানুষ নাসরিন আক্তার। তিনি সততা ও দক্ষতার সাথে দায়িত্ব পালন করে গেছেন। খুলনার রূপসা উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ফারহানা আফরোজ মনা বলেন, তিনি খুবই ভালো মানুষ। পরিশ্রমী, দক্ষ ও সৎ ব্যক্তি ছিলেন।

খুলনা জেলা রূপসা উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ যোবায়ের বলেন, উনার সততা ও ন্যায়পরায়নতায় আমরা মুগ্ধ হয়েছি। তিনি অত্যন্ত উদার মনের মানুষ। রূপসা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোঃ কামাল উদ্দিন বাদশা বলেন, টাকার জন্য নয়, তিনি মানুষকে সেবা দেওয়ার জন্য দৌড়াতেন। তার কর্মের কথা রূপসাবাসি আজীবন মনে রাখবে। প্রত্যেকটি মানুষের কথা তিনি মনোযোগ দিয়ে শুনতেন ও সমস্যা সমাধানে আন্তরিকভাবে চেষ্টা করতেন। সারাক্ষণ উপজেলার উন্নয়ন নিয়ে ভাবতেন। তিনি সৎ, উদ্যামী ও কর্মঠ ছিলেন।

খুলনার সদ্য বিদায়ী অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) ও প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের এটুআই প্রকল্পের কনসাল্টেন্ট (উপ-সচিব) মোঃ জিয়াউর রহমান বলেন, একজন কর্মঠ ও দায়িত্বশীল কর্মকর্তা ছিলেন নাসরিন আক্তার।রূপসার কৃতি সন্তান অবসরপ্রাপ্ত যুগ্মসচিব ও সাবেক জেলা প্রশাসক এসএম হারুনার রশিদ বলেন, রূপসা উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাসরিন এর গুণাবলির মধ্যে আমার যে দিকটা ভালো লেগেছে তা হচ্ছে জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলির উপর ছিল তার সজাগ দৃষ্টি।

তার প্রশাসনিক এলাকায় জনস্বার্থ বিরোধী কোন ঘটনা তার নজরে আসলে কালবিলম্ব না করে তাৎক্ষণিক সরেজমিনে গিয়ে জনগণকে সাথে নিয়ে তা দৃঢ়তার সাথে মোকাবেলা করেছে। তিনি আরও বলেন, করোনাকালে একদিকে অসহায় মানুষের পাশে থেকে নিরপেক্ষভাবে সরকারি সাহায্য বিতরণ করেছে অপরদিকে একজন মহিলা হয়েও নির্বাহী অফিসার নাসরিন ভয়ভীতি উপেক্ষা করে পরিচালনা করেছেন রূপসা উপজেলা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *