আনোয়ার হোসেন আকাশ,নিজস্ব প্রতিবেদক:

করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে ঠাকুরগাঁও জেলায় কাল বৃহস্পতিবার (১৭ জুন) সকাল থেকে সাত দিন চলাচলে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করেছে জেলা প্রশাসন। বুধবারে জেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটির জরুরি সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়েছে।

জেলা প্রশাসক কে এম কামরুজ্জামান সেলিমের সভাপতিত্বে সভায় পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেন, সিভিল সার্জন মাহফুজার রহমান সরকার, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) ৫০ ব্যাটালিয়নের উপ-অধিনায়ক মেজর মো. মুজাহিদুল ইসলাম, জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মাহাবুবুর রহমান, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সদর উপজেলা চেয়ারম্যান অরুণাংশু দত্ত প্রমুখ বক্তব্য দেন। এ সময় জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা ও জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের বিভিন্ন কমিটির সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। অনলাইনে আলোচনায় যুক্ত হন পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য ও ঠাকুরগাঁও জেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত সচিব শরিফা খান।

জেলা প্রশাসক কে এম কামরুজ্জামান সেলিম বলেন, সপ্তাহ দুয়েক ধরে করোনা পরিস্থিতির দিন দিন অবনতি হচ্ছে। মানুষকে স্বাস্থ্যসচেতন করতে প্রশাসন, স্বাস্থ্য বিভাগ ও স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবীদের নিয়ে চলমান বিধিনিষেধ কঠোরভাবে বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আগামী সাত দিন পর্যবেক্ষণ করা হবে। সংক্রমণ পরিস্থিতির উন্নতি না হলে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

গত ২৪ ঘণ্টায় করোনাভাইরাস সংক্রমণ শনাক্তের নতুন রেকর্ড হওয়ায় জরুরি আলোচনা সভা আহ্বান করে জেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটি। সভায় জেলায় সাধারণ মানুষের চলাচলে সাত দিনের জন্য কঠোর বিধিনিষেধ জারির সিদ্ধান্ত হয়। এই সাত দিন পর্যবেক্ষণ শেষে যদি করোনা পরিস্থিতির অবনতি হয়, সে ক্ষেত্রে লকডাউনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। জেলা সিভিল সার্জন মাহফুজার রহমান সরকার এ তথ্য জানিয়েছেন।

সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, জেলায় সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত স্বাস্থ্যবিধি মেনে দোকানপাট-বিপণিবিতান খোলা রাখা যাবে। হোটেল-রেস্তোরাঁ শুধু পার্সেল আকারে বা অনলাইনে অর্ডার গ্রহণ করে খাবার বিক্রয় করতে পারবে।

জেলার সব গরুর হাট-বাজার, পর্যটনকেন্দ্র, রিসোর্ট, কমিউনিটি সেন্টার, বিনোদনকেন্দ্র এক সপ্তাহ বন্ধ থাকবে। আন্তজেলাসহ সব ধরনের গণপরিবহন আসনসংখ্যার অর্ধেক যাত্রী নিয়ে চলাচল করতে পারবে। সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ ঠেকাতে বিজিবিকে সহযোগিতায় জন্য স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, গণ্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে কমিটি গঠন করা হবে।

জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, গত ২৪ ঘণ্টায় ১২১ জনের নমুনা পরীক্ষায় ৬১ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। শনাক্তের হার ৫০ দশমিক ৪১ শতাংশ, যা প্রথম ও দ্বিতীয় ঢেউ মিলিয়ে এক দিনে সর্বোচ্চ শনাক্তের হার।
নতুন শনাক্ত হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে সদর উপজেলায় ৩৫ জন, বালিয়াডাঙ্গীতে ১১, রানীশংকৈলে ৭, পীরগঞ্জ ও হরিপুরে ৪ জন করে আছেন। আগের ২৪ ঘণ্টায় ৯৪টি নমুনা পরীক্ষায় ৪৩ জনের করোনা পজিটিভ আসে।

শনাক্তের হার ছিল ৪৫ দশমিক ৭৪। জেলায় শুরু থেকে এ পর্যন্ত ১০ হাজার ৯৭৮টি নমুনা পরীক্ষায় ২ হাজার ১১০ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। শনাক্তের গড় হার ১৯ দশমিক ২২ শতাংশ। এখন পর্যন্ত জেলায় করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৫১ জন।

স্বাস্থ্য বিভাগ জানায়, চলতি মাসে ঠাকুরগাঁওয়ে হঠাৎ করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হয়ে মৃত্যু ও শনাক্ত উভয় বেড়ে যায়। এ মাসের ১৫ দিনে জেলায় ৪২৩ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন, আর ১৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ মাসে ১ হাজার ১০১ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। নমুনার তুলনায় করোনা শনাক্তের হার ৩৮ দশমিক ৪১ শতাংশ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *