তানোর(রাজশাহী)প্রতিনিধি

রাজশাহীর তানোরে সমাজ সেবা কার্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে উপকারভোগী হতদরিদ্রদের লাখ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। সুত্র জানায়, উপজেলায় বয়স্ক, বিধবা ও প্রতিবন্ধী ভাতাসহ শত শত সুবিধাভোগীর মোবাইল নম্বর না দিয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তাদের আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবের মোবাইল নম্বর দিয়ে এসব টাকা আত্মসাৎ করেছে।
সুত্রের তথ্য মতে, উপজেলার সাতটি ইউনিয়ন ও দুটি পৌরসভায় প্রায় ৪০ হাজার বিভিন্ন শ্রেণীর ভাতাভোগী রয়েছেন।

এর মধ্যে বয়স্ক, বিধবা, স্বামী পরিত্যক্তা ও দুস্থ মহিলা, অসচ্ছল প্রতিবন্ধী এবং দলিত বিশেষ ভাতা, নৃ-গোষ্ঠীর ভাতা, হিজড়া ভাতা, প্রতিবন্ধী শিক্ষা উপবৃত্তি, দলিত শিক্ষা উপবৃত্তি ও হিজড়া শিক্ষা উপবৃত্তি ছাড়াও ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী বিশেষ শিক্ষা সহায়তার এককালীন অনুদানসহ ২০টির মত ভাতা তিন মাস পরপর প্রদান করা হয়। অধিকাংশ সুবিধাভোগীর ভাতার টাকা অপরিচিত নম্বরে চলে গেছে। যার কারণে এসব অসহায় বয়স্ক বৃদ্ধ,বৃদ্ধা ও প্রতিবন্ধীর চরম বিড়ম্বনায় পড়েছেন। যতদিন তারা ব্যাংকে গিয়ে তাদের ভাতার টাকা তুলেছিলেন ততদিন তেমন কোন সমস্যায় পড়তে হয়নি।

সরকার যখন তাদের হয়রানি কমানোর জন্য সেবা দোরগোড়ায় পৌছানোর চেষ্টা করছেন তখন সমাজ সেবার একশ্রেণীর অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী তাদের প্রতারণা ফাঁদে ফেলিয়ে হাতিয়ে নিয়েছে লাখ লাখ টাকা। সমাজসেবা অফিসের কথামত তাদের কাছে থেকে ২০০ টাকা দিয়ে সিমকার্ড কিনে নগদ একাউন্টধারী মোবাইল নাম্বার দেয়া হলেও রহস্যজনকভাবে শতশত উপকারভোগীর মাথা পিছু ভাতার ৩ হাজার ৪৮ টাকা অচেনা-অজানা নাম্বারে চলে গেছে। যা মোটেও বিশ্বাস যোগ্য নয়। কেন না সমাজসেবা অফিসের পক্ষ থেকে ওই সমস্ত নগদ একাউন্ট খুলে দেয়া হয়। তাছাড়া প্রত্যেক সুবিধাভোগী তাদের নাম্বার নিজ নিজ ভাতা পরিশোধ বহির উপর লিখে জমা দেন।
তাহলে এসব ভুল হয় কি করে!

এদিকে এ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতার ও দৃস্টান্তমুলক শাস্তির দাবি করেছেন সচেতন মহল। উপজেলার কলমা ইউপির সেফালী(৫০), রহিমা(৫৫), সোনাভান (৫৩), জাহিরুন (৫০)ও গোল্লাপাড়া গ্রামের শ্রীমতি মিনা(৬০) বলেন, নুরতাজ স্যার তাদের নম্বর না দিয়ে তার অনুগতদের নম্বর দিয়ে অসংখ্য মানুষের লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে তাদের নতুন করে ২০০ টাকা মুল্যর সিমকার্ড কিনতে বাধ্য করেছেন। কলমা ইউপির চকরতিরাম গ্রামের সেফালি বলেন, তানোর যাতায়াত করতে ৮০ টাকা খরচ হয়, অথচ তিনি ৫ দিন ধরে সমাজ সেবা অফিসে যাতায়াত করছেন। অফিস থেকে বলা হচ্ছে যে টাকা চলে গেছে তা ফেরত পাবার সুযোগ নাই, নম্বর সংশোধন করে পরবর্তীতে যে টাকা আসবে সেটা পাওয়া যাবে। এখন প্রশ্ন হলো শত শত মানুষের লাখ লাখ টাকা কারা কি ভাবে হজম করলো সেটা অবশ্যই তদন্তের দাবি রাখে।

উপজেলা প্রশাসনের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা বলেন, এই দুর্নীতির সঙ্গে সমাজসেবার অসৎ কর্মকর্তা-কর্মচারী সম্পৃক্ত, তারা নিজস্ব আত্নীয় সজনের নাম্বার দিয়ে টাকা আত্মসাৎ করেছে তা না হলে এত ভুল হওয়া মোটেও সম্ভব নয়। তিনি বলেন, তাদের কল ট্রাক করলেই দুর্নীতির সঙ্গে জড়িতদের সন্ধান পাওয়া যাবে। এবিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা সমাজ সেবা অফিসের ফিল্ড অফিসার নুরতাজ আলী বলেন, এসব উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বলতে পারবেন। তিনি আরো বলেন, যেগুলোর মোবাইল নম্বর ভুল হয়েছে সেগুলোর টাকা পাবার কোনো সুযোগ নাই, সংশোধনের পর টাকা আসলে তারা টাকা পাবেন।

এবিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা সমাজ সেবা কর্মকর্তা মোহাম্মদ হোসেন খাঁন বলেন, এবিষয়ে তার কোনো বক্তব্য নাই। এবিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা(ইউএনও) পঙ্কজ চন্দ্র দেবনাথ জানান, কিছু সুবিধা ভোগীর সমস্যা হয়েছে, আমি সংশিষ্টদের দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলেছি। এবিষয়ে উপজেলা প্রতিবন্ধী সংগঠনের নেতাএম, শামসুল আলম বলেন, যারা সরকারের দেয়া অসহায় মানুষের ভাতার টাকা আত্মসাৎ করে সরকারের ভাবমুর্তিক্ষুন্ন করেছে তাদের কঠোর শাস্তির দাবি করে প্রধানমন্ত্রীর দৃস্টি আকর্ষণ করেছেন, নইলে এসব দুর্নীতিবাজদের শাস্তি নিশ্চিত করতে তারা মানববন্ধনসহ কঠোর কর্মসুচি ঘোষণা করবেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *