নরসিংদী থেকে বোরহান মেহেদী : নদী বাঁচলে বাংলাদেশ বাঁচবে, কথাটি সম্ভবত আমরা বলার জন্য বলি, কার্যে বিশ্বাস করি না। কিন্তু এটি মোটেও কথার কথা নয়, পুরোপুরি বাস্তবভিত্তিক এবং এর পেছনে অনেক বৈজ্ঞানিক কারণ রয়েছে। নদী মরে গেলে উজানের পানি ও বৃষ্টির পানি গ্রাম-শহর-ফসলের মাঠ ভাসিয়ে দেবে, জলাবদ্ধতা হবে এবং সর্বশেষ সাগরে চলে যাবে। নষ্ট হবে প্রতিষ্ঠিত সব অবকাঠামো।

এতে রাস্তার স্থায়িত্ব কমে যাবে। বর্ষা শেষ হতেই মৃতপ্রায় নদীগুলো পানিশূন্য হয়ে পড়বে। ভূগর্ভে যথেষ্ট পানি প্রবেশ করতে পারবে না। পানির স্তর ক্রমেই নিচে নেমে যাবে। এলেকার চাষাবাদ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ক্রমে মরুকরণ প্রক্রিয়া এগিয়ে যাবে। এমনি আরো অনেক কারণ রয়েছে এ কথা বলার যে নদী বাঁচলেই দেশ বাঁচবে।

নরসিংদী প্রাকৃতিক ভাবে মেঘনা নদী বিধৌত পলিভূমি অঞ্চল। শহর ঘেসেই নদী অবস্হিত। আর মেঘনা নদীর বদৌলতেই নরসিংদী শত শত বছর ধরে একটি বিখ্যাত বানিজ্যকেন্দ্রে পরিনীত হয়ে উঠেছে। আজ নদী দখলবাজদের হাতে সে অস্হিত্ব বিলুপ্ত হতে চলেছে।

হাজিপুর, নজরপুর ও করিমপুর এলাকাবাসি থেকে জানা যায়, নরসিংদীর মেঘনা নদীর চর ও নদী ভরাট করে বৈধ ও অবৈধ ডজন খানেক ইটভাটা গড়ে উঠেছে। সঙ্গে দেয়া ছবি প্রমাণ করে, ভরাট করতে করতে একেকটি ইটভাটা কিভাবে ধনুকের মতো বেঁকে নদীর মাঝ বরাবর চলে গেছে। এই চিত্র দেখার পর যে কেউ বলবেন সেখানে পরিবেশ ও নদী বাঁচাতে কর্তৃপক্ষের তদারকি একেবারে নেই।

এলাকাবাসির কাছ থেকে জানা যায়, মালিকরা প্রভাবশালী হওয়ায় স্হানীয়দের বাধায় এইসব অবৈধ ইটভাটা বন্ধ হয় না। তারা নদী এসংক্রান্ত আইনের কোনো তোয়াক্কাও করে না। জানা যায়, তারা নদীতে বিশেষ কায়দায় বাঁধ তৈরি করে। পরে সেখানে প্রচুর পলি জমে এবং তাতে নদী ভরাটের কাজ সহজ হয়ে যায়।পরে এসব পলিমাটি ইট তৈরিতে ব্যবহার করে থাকে।

শুধু এতেই অসুবিধা বাড়ছে তা নয়। ইট পরিবহনকারী ট্রাক চলাচলের কারণে স্থানীয় অনেক রাস্তাই চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। কয়লা ব্যবহারের বাধ্যবাধকতা থাকলেও অনেক ভাটায়ই দেদার কাঠ পোড়ানো হচ্ছে। ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন ২০১৩ অনুসারে লোকালয়, বন ও সড়ক থেকে নির্দিষ্ট দূরত্বে ভাটা স্থাপন করার কথা থাকলেও প্রায় কেউই তা মানছে না।

এ অবস্থায় বর্তমান নদী বান্ধব সরকারকে ভেবে দেখতেই হবে, দেশের পরিবেশ ও নদী বাঁচাবে নাকি কিছু প্রভাবশালী মানুষ সব ধ্বংস করে বিত্তশালী হতে থাকবে। নরসিংদীর প্রশাসন এর উচিত দেরী না করে এখনি অবৈধ এসব ইট ভাটার মালিকদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী কঠোর ব্যবস্থা নেয়া এবং ইটভাটা নদীর চর থেকে সরিয়ে দেয়া।

নদীর জায়গা দখল মুক্ত করে নদীর বুক বিষমুক্ত ও প্রকৃতিক পরিবেশ সুন্দৌর্য ফিরিয়ে আনতে হবে, পরিবেশ অধিদপ্তর পানি উন্নয়ন বোড যাতে তারাতারি উদ্যোগ নেন সে দাবি এলেকাবাসির। তাতেই মঙ্গল হবে নরসিংদীর লাখো মানুষের।

জনগন বলছে, সাবেক পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রীর বাড়ি নরসিংদী তবুও যেন নদী দখল দেখার কেউ নাই, এটা জনসাধারন মানতে রাজী নয়।নরসিংদী সদর উপজেলার করিমপুর ইউনিয়নের শ্রীনগর পঞ্চকুটি বাজার সংলগ্ন হারিস কোম্পানির দুটি ইটের ভাটা মেঘনা নদী দখল করে নিয়েছে । হাজীপুরায় রঞ্জিত ব্রিকস, আরকেএস ইউটিসি ও মদিনাসহ এই ইটভাটা গুলো নদী যে ভাবে দখল করে নিয়েছে, মনে হয় তাতে নদীবুক পুরোটাই এককদিন হয়ে যাবে ইট ভাটা। তাই তাদের লাগাম টেনে ধরতে এখনই সময়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *