নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি

তুচ্ছ ঘটনায় হত্যা করে ৭বছরের শিশু সৌরভকে, সৎ ভাই পা চেপে ধরে শাশুড়ী গলা টিপে ধরে  ভাবির পাহারায় হত্যা মিশন!

নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলায় শিশু সৌরভ(৭) হত্যাকান্ডের ঘটনায় ৪৮ ঘন্টার মধ্যে মধ্যে হত্যাকান্ডে জড়িত ৩ আসামি গ্রেফতার সহ চাঞ্চল্যকর তথ্য সহ হত্যাকারীদের নাম প্রকাশ করেছে জেলা পুলিশ।

তারা হলেন,নিহতের সৎ ভাই সানি(১৯), ভাবি আয়শা আক্তার(১৮) ও সানির শাশুড়ী শিল্পী বেগম(৩৫)। সকলে কুড়িপাড়া বটতলা এলাকার রাজা মিয়ার বাড়ির ভাড়াটিয়া। তারা উভয়েই পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী শ্বাসরোধে হত্যা করে সৌরভকে। পরে লাশ গুম করার উদ্দেশ্যে শাশুড়ী শিল্পী বেগমের খাটের নিচে একদিন লুকিয়ে রাখে। পরে রাতের আধাঁরে সুযোগ বুঝে বাড়ির পাশে পরিত্যক্ত কঁচু খেতের ঝোপে লাশ ফেলে দেয়।

পরের দিন বৃহস্পতিবার (৬ এপ্রিল) দুপুরে বন্দরের কুড়িপাড়া এলাকা থেকে শিশুটির লাশ উদ্ধার করা হয়। পরে এলাকাবাসী ও নিহতের পরিবারে তথ্যের ভিত্তিতে জিজ্ঞাসাবাদের পর সৎ ভাই, ভাবি ও শাশুড়ীকে গ্রেফতার করা হয়। 

শুক্রবার (৭ এপ্রিল) দুপুরে জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) চাইলাউ মারমা এ তথ্য নিশ্চিত করে হত্যাকান্ডের চাঞ্চল্যকর তথ্য জানান। 

তিনি জানান, ৬ এপ্রিল দুপুর ১ টায় বন্দর উপজেলার কুড়িপাড়া এলাকা থেকে ৭ বছরের শিশু সৌরভের লাশ উদ্ধার করা হয়। নিহতের বিষয়টি সন্দেহজনক মনে হলে তদন্তে নামে পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থা।

এছাড়াও পরিবার সদস্যদের পক্ষ থেকেও অভিযোগ করা হয় তাদের দিকে। পরে সন্দেহভাজন হিসেবে নিহতের সৎ ভাই সানি সহ তার শ্বশুর বাড়ির ৪ জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে আশা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে সানি, তার স্ত্রী আয়শা আক্তার ও শাশুড়ী শিল্পী বেগম সরাসরি হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে।

এঘটনায় শুক্রবার সকালে নিহতের বাবা সালাউদ্দিন বাদী হয়ে বন্দর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় তাদের ৩ জনকে আসামী করে গ্রেফতার দেখানো হয়। 

নিখোঁজ হওয়ার ঘটনার বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, ৪ এপ্রিল সকাল ১০টার দিকে শিশু সৌরভ নিখোজ হয়। তার বাবা সালাউদ্দিন মিয়া একজন অটোরিকশা চালক, মা কুলসুম বেগম ঝুট বাছাইয়ের কাজ করেন।

তিনি দুপুরে খাবারের জন্য বাড়ি ফিরে শিশু সৌরভকে খোঁজাখুজি করে না পেয়ে, তার বড় ছেলে সানি ও ছেলের বউ আয়শা আক্তারকে জিজ্ঞাসা করে। ওই সময় তারা এসব বিষয় জানেনা বলে এড়িয়ে যায়। পরে কুলসুম বেগম বিভিন্ন স্থানে খোঁজাখুঁজি করলেও স্থানীয় থানায় অভিযোগ বা জিডি করেননি। 

শিশু সৌরভের লাশ উদ্ধারের পরে তার সৎ ভাই সানি, ভাবি আয়শা আক্তার ও সানির শাশুড়ি শিল্পি বেগমকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করার এক পর্যায়ে তারা হত্যাকান্ডের কথা স্বীকার করেন। শিকারোক্তিতে খুনের কারণ উল্লেখ করে তারা জানায়, সাত মাস আগে সানি প্রেমের সম্পর্কে আয়শা আক্তারকে বিয়ে করে একই ভাড়া বাড়িতে বসবাস করে আসছিলেন।

শিশু সৌরভ দিনে রাতে বিভিন্ন সময় ভাই ও ভাবিকে উত্যক্ত করতো। একারণে তারা সৌরভের প্রতি বিরক্ত ছিল।  এ বিরক্তের বিষয়টি শাশুড়িকে জানালে, শাশুড়ী তাদের বলে, ‘এভাবে চলতে থাকলে তো তোমরা সংসার করতে পারবেনা বলে শিশু সৌরভকে হত্যার পরিকল্পনা করে।

পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী ৪ এপ্রিল সকাল ৯ টায় সৌরভ তার মায়ের সঙ্গে কর্মস্থলে দেখা করে বাড়িতে চলে আসলে পুরো বাড়ি ফাঁকা পেয়ে সৎ ভাই সানি সৌরভ কে শাশুড়ী শিল্পী বেগমের ঘরে ডেকে এনে সকাল আনুমানিক ১০ টার দিকে আগে থেকে ওতপেতে থাকা শাশুড়ী শিল্পী বেগম সৌরভকে গলা টিপে ধরে, সানি পা চেপে ধরে এবং ঘরের বাহিরে ভাবি আয়শা আক্তারের পাহাড়ায় শ্বাসরোধ করে হত্যার পরে শাশুড়ীর খাটের নীচে লাশ লুকিয়ে রাখে।

পরের দিন ৫ এপ্রিল দিবাগত রাত ১ টার দিকে বাড়ির অদূরে পরিত্যক্ত কঁচু খেতের ঝোপে লাশটি ফেলে দেয়। পরের দিন দুপুরে দুর্গন্ধ পেয়ে এলাকাবাসী ও নিহতের পরিবারে লোকজনের সহায়তা পুলিশ শিশু সৌরভের অর্ধগলিত মরদেহটি উদ্ধার করে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *