বার্তা প্রেরক
শফিক সাদেকী

এই বছরের শেষভাগে অনুষ্ঠিত হতে পারে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন। কোভিড-১৯ এর কারণে দেশীয় রাজনীতিতে কিংবা নির্বাচনে জোয়ার না থাকলেও নারায়ণগঞ্জের রাজনীতিতে আলোচনা চলছে। শহরের নানা প্রান্তে সাটানো হয়েছে পোস্টার, ব্যানার ও ফ্যাস্টুন। ঈদ উল ফিতর থেকে একটু ব্যতিক্রমি আদলে এমন প্রচারণা চালাচ্ছেন নগরীর এই মুহূর্তের আলোচিত মুখ কামরুল ইসলাম বাবু। নিজেকে অতি সাধারণ পরিচয় দিয়ে তিনি যেভাবেই হোক টক অব দ্য সিটিতে পরিণত হয়েছেন। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এর কোনো ধরনের পদ পদবীতে না থাকলেও তিনি দলটির সমর্থন প্রত্যাশা করেছেন।

এদিকে ২ জুন নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে নগরবাসীকে কামরুল ইসলাম বাবু বলেছেন, উন্নয়ন, নাগরিক সেবা ও রাজস্ব আদায়— এই তিনটি নীতির ওপর ভর করে আমি বদলে দিতে চাই নারায়ণগঞ্জকে। মৌলিক এমন তিনটি নীতির সাথে থাকবে যৌগিক পর্যায়েরও তিনটি নীতি। তাঁর লিখিত বক্তব্যটি হুবুহু তুলে ধরা হল।

বাবু বলছেন, গ্রীষ্মের স্বভাবসুলভ তাপদাহ এবং বৈশ্বিক মহামারি কোভিড-১৯ –এর কবলে পড়ে আমরা ভাল নেই। যান্ত্রিক জীবনের গতানুগতিক গতিপথ গতিরোধকে খানিকটা স্থবির হয়ে পড়েছে। তবুও আমাদের জীবনের লাল-নীল সংসারের কোনকিছুই যেন থেমে নেই। সমাজের রাস্তায় হেটে যেয়ে বলছি, বৃষ্টি তুমি মিষ্টি হয়ে এসো, প্রাণঘাতি হয়ে বজ্রের হুংকারে কালোঝড় হয়ে এসো না। প্রকৃতিও এবার যেন ছাড় দিতে চাইছে না। তাই তো গেল প্রায় দেড় বছর ধরে করোনাভাইরাসের মত উপদ্রব এসে বলছে, তোমরা মানুষ হও।

না, মহান সৃষ্টিকর্তার মনকে খুশী করতে বিলম্বই হচ্ছে, নচেৎ, অনেকদিন তো হয়ে গেল, করোনা ভাইরাসকে বিদায় কেন করতে পারছি না? এমন একটা জটিল বাস্তবতার সাক্ষী হয়ে প্রিয় শহর নারায়ণগঞ্জের জন্য যখন সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা নিয়ে গেল বছর রাজনৈতিক ছদ্দাবরনে গোষ্ঠিগত স্বার্থে জনশ্রেণির পাশে দাঁড়ানোর জন্য এই আমি অঙ্গিকার করেছিলাম—- সেখানে খানিকটা মৌসুমি পাখীর মত করে এসে ২০২১ সালের মধ্যভাগে বলছি, আমি নতুন কিছু ভাবছি। প্রসঙ্গ, নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের আসন্ন নির্বাচন— যেন প্রচলিত রুগ্ন ধারার ধারাবাহিকতায় থেকে আমিও বলছি, দাঁড়াও হে পথিক, আমি তোমাদের জন্য এসেছি।

সমাজের মানুষের কথা বলছিলাম। নিজ পরিবারের মধ্যমণি হয়ে একটু এগোতে থাকা। অতঃপর সমাজের টিকে থাকা বাঙালি মুখগুলোর দিকে তাকালেই জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর মায়াবী মুখের পুরুষালী ব্যক্তিসত্তা ধরা দেয়। তখন নিজেকে খুব অপরাধী মনে হয়। মনে হয়, ওই লোকটির স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার দীপ্ত উচ্চারণে থেকে কার্যকরী উদ্যোগে পূর্বসূরিরা, আমাদের প্রজন্ম, আজকের প্রজন্ম ভাবতে পেরেছে কিনা ? প্রকৃতি বলছে, একজন অন্তত পেরেছেন। বঙ্গবন্ধু তনয়া শেখ হাসিনা পেরেছেন।

তাই বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিক্রমা ঘিরে স্থিতিশীলতার প্রশ্ন অনেকে ছুঁড়তে চাইলেও দেশ এগিয়ে যাচ্ছে একজন বিশেষ মনুষ্য প্রাণের কৃপায়, তা বোধকরি প্রায় সকল রাজনৈতিক বলয়ের বুদ্ধিবৃত্তিক রাজনীতির প্রতিনিধিরা স্বীকার করবেন। হ্যাঁ, আমরা এখন দেশের বাইরে তথা অন্যের মাটিতেও যেয়েও বলতে পারছি, আমাদের মায়ের নাম শেখ হাসিনা, আমাদের নেত্রীর নাম শেখ হাসিনা। গর্ব করে বলা যাচ্ছে যে, সাংস্কৃতিক মনবোধের জায়গায় পঞ্চাশ বছরের বাংলাদেশের অর্জনে দুইটি উজ্জ্বল নক্ষত্রই কেবল বাংলার আকাশে প্রতিভাত। একজন, বঙ্গবন্ধু। অন্যজন, শেখ হাসিনা। এই দুইটি মানুষের জন্য তাই যখন তখন রাস্তায় নামা যায়, যখন তখন আকাশে ডানা মেলে উড়ে সুর ধরা যায়, তোমরা যতই আমাকে মৌসুমি পাখী বল না কেন, আজ থেকে এই ডানা দ্বয় ক্লান্ত হবে না, উড়বে, উড়তেই থাকবে নীল আকাশে।

আমি, এই শহরের অনেকের কাছেই আদুরে ‘বাবু’। নাম আমার কামরুল ইসলাম বাবু, আজ যদি আমার নাম প্রথম শুনে থাকেন, তবে উপস্থিত সংবাদকর্মী ভাই ও বোনদের বলছি, জানিয়ে দিন এই নগরীর জনপদকে, এখন থেকে আমার নাম শুনতেই থাকবেন। কারণ, আপনাদের পরামর্শ নিয়ে চলতে চাই। বুদ্ধিবৃত্তিক রাজনীতি ও নৈতিক শিক্ষায় ভর করে আমি নারায়ণগঞ্জের রাজনীতিতে এলাম। নেমে পড়লাম, দেখা যাক। হ্যাঁ, চিৎকার করে বলছি, আমার ৪৭ বছরের জীবনে এই শহরে থেকে আমার বিরুদ্ধে কোন মামলা নেই। আমার বিরুদ্ধে মাদক গ্রহণের অভিযোগ নেই– কখনও স্পর্শ করিনি। না, আমি অবৈধ পথে উপার্জন করিনি কোনদিন। না, আমি বিত্ত বৈভবের মালিক হয়ে বুর্জুয়া শ্রেণির প্রতিধিনিধিত্বকারী চরিত্র নই।
হে সাংবাদিক সমাজ, আপনারা আমার সম্পদের হিসাব জানিয়ে দিন রাষ্ট্রকে, আমার প্রিয় দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে, সরকারকে, দুর্নীতি দমন কমিশনকে। অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার শ্রেষ্ঠত্ব দেখিয়ে জানিয়ে দিন, এই লোকটির বৈষয়িক বৃত্তান্ত।

বাংলাদেশে ভোটতন্ত্রের আবহে গণতান্ত্রিক শাসনরীতি বিদ্যমান। দিনের শেষে রাজনৈতিক ফলাফল দেখতে দুইটি বিশেষ দলের প্রতিনিধিত্ব করা হচ্ছে কিনা, সে সম্যক স্পষ্ট বক্তব্য প্রত্যাশা করে। নবাগত কারোর প্রশ্নে অতি অবশ্যই তা কৌতূহলী খোরাক। ক্ষুদ্র পরিসরে ইতোমধ্যে জানান দিয়েছি, আমার স্বপ্নের দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এর প্রাথমিক সদস্যের পদও আমি গ্রহণ করতে উৎসাহী হব না, যতক্ষণ পর্যন্ত আমি যোগ্যতা অর্জন না করতে পারছি। হয়তো প্রচলিত ধারায় অনেকেই মন্ত্রী হচ্ছেন, সাংসদ হচ্ছেন, মেয়র হচ্ছেন কিংবা দলের পদ পাচ্ছেন, কিন্তু আমি মনে করি যোগ্যতা অর্জন করতে হবে। দলের প্রতি আনুগত্য প্রদর্শনে যেতে হবে। দলের আদর্শ মানতে হবে। অর্থাৎ একজন বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ধারণ না করে দলিয় কোন পদ- পদবী আমি গ্রহণ করতে যাব না। আমি বরং বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনাকে নিয়ে গবেষণা বাড়িয়ে দেব। নতুন প্রজন্মের কাছে তাঁদের বক্তব্য, মত, যুক্তি, আদর্শ গুলো তুলে ধরে বলব, তাঁরা উভয়েই অসাধারণ পর্যায়ের নেতৃস্থানীয় চরিত্র। যেমন, রাজনৈতিক সভায় বলতে শোনা যায়, বঙ্গন্ধুর আদর্শ ধারণ করুন, কিন্তু যিনি বলছেন, তিনি বঙ্গবন্ধুর আদর্শ সম্পর্কে জানেন তো?

কালজয়ী রাজনৈতিক নেতৃত্ব হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু চাইতেন, গণতন্ত্র, জাতীয়তা, সমাজতন্ত্র ও ধর্ম নিরপেক্ষতা । তিনি বলতেন, এই চারটি মূলনীতির ওপর দাঁড়িয়ে থাকবে বাংলাদেশ। জাতীয় ঐক্য ও গণতান্ত্রিক বিপ্লবের মহড়ায় দেশ এগিয়ে যাবে এবং প্রচলিত গণতন্ত্রের তীক্ষ্ণ দলিয় বিভাজনকে ছাপিয়ে যেয়ে অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠা করার এমন স্বপ্নবাজ চরিত্র আর কোথায় ! বাঙালি জাতীয়তাবাদের ভিত্তি দাঁড় করিয়ে যখন সংবিধান প্রণীত হল, তখন তিনি বাংলার মাটি ও মানুষের কৃষ্টিকে ধারণ করে সবধরনের তথা বর্ণের জাতিসত্তাকে সম্মান করতে কৃপণ থাকেন নি। সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতি কায়েম করত সমাজতান্ত্রিক শাসনরীতি দাঁড় করানোর অভিলাষে সিক্ত হয়ে বললেন, ধার করা মতবাদের ওপর দাঁড়িয়ে থেকে এই স্বপ্ন নয়, প্রাসঙ্গিক বাস্তবতার আলেখ্যকে পুঁজি করেই বাংলাদেশ এগোতে থাকবে। তিনি স্পষ্ট করেছিলেন যে, পাশ্চাত্যের ধর্মহীনতার ধারণার আদলে নয়, ধর্মনিরপেক্ষতার মাধ্যমে আমরা একে অপরের পেছনে লেগে থাকব না, যার যার ধর্ম পালন করতে থাকব, উগ্রবাদী হয়ে নিশ্চয়ই আমরা মৌলবাদী প্রেক্ষাপটের আশ্লেষে রাষ্ট্রকে পরিচালিত করব না।

একজন সাধারণ কামরুল ইসলাম বাবু বঙ্গবন্ধুর মুল চারটি নীতিকে ধারণ করে। হ্যাঁ, একজন শেখ হাসিনার অসাধারণ নেতৃত্বকে অনুকরণ করবার যথেষ্ঠ সুযোগ রয়েছে। যখন তিনি বলেন, “বাচ্চাদের কাঁধে বড় বড় ব্যাগ ঝুলিয়ে রেখে স্কুলে যাওয়াটা তাঁর দেখতে ভাল লাগে, কিন্তু ওদেরকে বেশী চাপ দেয়া যাবে না। পড়ালেখার চাপে যেন ওদের মানসিক বিকাশ বাঁধাগ্রস্ত না হয়।“ যখন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেন( ১৭ মে, ১৯৮১) , “আমি চাই বাংলার মানুষের মুক্তি। শোষণের মুক্তি। বাংলার মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য বঙ্গবন্ধু সংগ্রাম করেছিলেন। আজ যদি বাংলার মানুষের মুক্তি না আসে, তবে আমার কাছে মৃত্যুই

শ্রেয়।“ ১৯৮৭ সালে তিনি এক সভায় বললেন, “মাটি আর মানুষের সাথে রাজনীতিকে একাট্টা করতে হবে। সমাজের গভীর থেকে গভীরতর স্তরে পৌঁছুতে হবে। জনগনের বিশ্বস্ত বন্ধু হিসাবে সততা ও যোগ্যতার প্রমাণ দিতে হবে।“ একই বছরে আবার বললেন, “ যারা অস্ত্রের ভাষা বোঝে তাঁরা মুক্তির ভাষা মানে না। অস্ত্রকে পুঁজি করে যারা ক্ষমতায় আসে, তাঁরা যুক্তি বুঝে না, বুঝতে চায় না।“ ১৯৯৬ সালে তিনি বললেন, গণতন্ত্রের জন্য স্বাধীনতার চেয়ে কোন বড় ভিত্তি নেই এবং সভ্যসমাজের আইন ও বিধান ছাড়া গণতন্ত্রের কোন নিশ্চয়তা নেই।“ ১৯৯৭ সালে তিনি বললেন, “সত্য ও ন্যায়ের পথ কঠিন পথ, আমি কঠিন পথ বেছে নিয়েছি।“ ১৯৯৯ সালে বললেন, “শান্তি একটি মৌলিক মানবাধিকার, যাকে অর্জন, লালন ও উন্নয়ন করতে হবে এবং সর্বদা ভবিষ্যতের জন্য এগিয়ে নিতে হবে।“ যখন শেখ হাসিনা বলেন, “কী পেলাম, কী পেলাম না, সে হিসাব মেলাতে আমি আসিনি। কে আমাকে রেকোগনাইজ করলো আর কে করলো না, সে হিসাব আমার নাই। একটাই হিসাব, এই বাংলাদেশের মানুষ, তাদের ভাগ্য পরিবর্তনে কিছু কাজ করতে পারলাম কি না, সেটাই আমার কাছে বড়”— তখন তাঁর প্রতি আমার শ্রদ্ধা নেড়ে যায়। যখন তিনি বলেন, “অসুস্থ হলে আমাকে বিদেশে নিবেন না, আমি দেশের মাটিতেই চিকিৎসা নিব”— তখন সত্যি বলতে শীতলক্ষ্যার পাড়ে যেয়ে উদাসী বিকেলে সুর ধরি, ভাবতে থাকি, আমরা কেন তাঁর মত করে ভাবতে পারছি না ?

হ্যাঁ, তিনি বাংলাদেশ নিয়ে থাকুন, আমি বঙ্গবন্ধু থেকে শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগে জায়গা নেয়ার মত ব্যক্তিসত্তা নই।অনেক কিছু শিখতে হবে, জানতে হবে, ত্যাগ স্বীকার করতে হবে। দল হিসাবে আওয়ামী লীগ শ্রেষ্ঠ। রাজনৈতিক সত্তা হিসাবে বঙ্গবন্ধু, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমেদ, মনসুর আলী, কামরুজ্জামানেরা স্বাধীন বাংলাদেশের জন্য যে ভুমিকা রেখেছিলেন— পরবর্তীতে আব্দুস সামাদ আজাদ, জিল্লুর রহমান, আব্দুল জলিল থেকে সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, তাঁদের প্রতি অনিশেষ শ্রদ্ধা রেখে বলছি, যত্রতত্র বঙ্গবন্ধু ও জন নেত্রী শেখ হাসিনার ছবি ব্যবহার করে আওয়ামী লীগ সাজতে চাইবার অপকৌশলে যাওয়া অর্থহীন। এই শহরের যেক’টা মানুষ এই পর্যন্ত আমাকে চিনে কিংবা জানে যে, আমি মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধারণ করি, বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে লালন করি এবং শেখ হাসিনার সত্যিকারের সৈনিক হতে আমার ইচ্ছে করে। আমি বিশ্বাস করি, একদিন দল থেকে আমাকে ডেকে বলা হবে, তুমি দলে যোগদান কর। কিন্তু, যোগ্যতা অর্জন করলেই তেমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে বলে করবার সুযোগ আছে। না, না– আমি আজ কাল পরশু কৃষক লীগ, তাতী লীগ কিংবা যুবলীগ বা স্বেচ্ছাসেবক লীগের পদ নিয়ে নিজেকে উপস্থাপন করতে যাব না। তবে, ট্রেন মিস করব না। নাসিক ট্রেনের চালক হতে এই মুহূর্ত থেকে প্রস্তুত। বিকজ, “নাসিক ইজ নাউ প্যাসেঞ্জার মেইল ট্রেন উইদাউট কোয়ালিটি ড্রাইভার।“

আপনারা সুঅবগত যে, আমাদের অতি প্রিয় সজ্জন চরিত্রের অকাল প্রয়াত আনিসুল হক দলীয় পদবী নিয়ে নয়, দলিয় সমর্থন নিয়ে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন। হ্যাঁ, একজন আনিসুলের হকের ক্যারিয়ার একদিনে গড়ে উঠেছিল না। গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব হওয়া, ব্যবসায়ী নেতা হওয়া— মোদ্দকথা, আলাদা একটা ইমেজ সৃষ্টি হওয়ার পরেই তিনি গ্রহণযোগ্য সত্তা হিসাবে নিজের জাতকে চেনাতে সক্ষম হন। আর আমি ? আমি নেহাত সাধারণ এক মানুষ। কিন্তু আমার বন্ধু দার্শনিক ঈশ্বরমিত্র যখন বলেন, “ তোমার( মানুষ) মধ্যে থাকা শ্রেষ্ঠ সুন্দর নিত্য অভ্যাসটাই হল ক্ষমতা।“ আমার মধ্যেও একটা ক্ষমতা আছে। সেটা আপনারাও জানতে পারবেন, বুঝতে পারবেন। আমি সমাজের মানুষগুলোকে প্রতিটা অহোরাত্রে আলাদা করে ভালবাসতে ঘর থেকে বের হয়ে পড়ি। যারা এই শহরে আমাকে চিনে বা জানে তেমন সাক্ষী দিতে অনেকেই মিছিলটাকে বড় করে শ্লোগানে মুখর হবে। হ্যাঁ, এটাই আমার ক্ষমতা।

এই ক্ষমতা দিয়েই আমি নগরীর চাকর হতে চাই। আমি বলতে চাই, নাসিক ট্রেনের চালক হতে আমি প্রস্তুত। কারণ, গেল দশ বছরে নতুন কিছুই দেখেনি এই শহরের বাসিন্দারা। কথিত ভাষণ আর শ্লোগান , শিষ্টাচার বর্জিত রাজনীতি দেখতে দেখতে সকলেই ক্লান্ত। এরপরেও বর্তমান মেয়র হিসাবে যিনি দায়িত্ব পালন করছেন তিনি নগরীর মন্দের ভাল সেবিকা হতে চেষ্টা করেছেন। অন্তত নাগরিক জীবনের সুখময়তা খুঁজতে ইনিংসের গোড়াপত্তন করতে পেরেছেন। যদিও তিনি বাস্তবতায় প্রথম ইনিংসে আউট হয়েছেন, খুবই শ্লথ গতিতে দ্বিতীয় ইনিংসে গতানুগতিক কাজে নির্ভার থেকে মনযোগী হয়ে বলছেন, সবুজ নারায়ণগঞ্জ করবো— আদৌতে তিনি তেমন করে ভাবছেন কিনা ? বিশ্বের অপরাপর আধুনিক নগরী হিসাবে তিনি যে নারায়ণগঞ্জকে সাজাতে পারেন নি, তা কি অস্বীকার করবার সুযোগ আছে ? বার্ষিক যে আকার ও আয়তনের বাজেট সিটি কর্পোরেশনের জন্য বরাদ্দ হচ্ছে, সেই অনুযায়ী কাজ হলে বদলে যেত নারায়ণগঞ্জ। সবুজ নারায়ণগঞ্জ আমরা করতে পারেনি। বরং ঢাকা যাওয়ার পথে ময়লার স্তুপ করে আমরা প্রমাণ করেছি, নারায়ণগঞ্জ খুবই নোংরা শহর।

অথচ, তিনি ও তাঁর নিকটজনেরা সকাল দুপ্পুর করে লিংক রোডটি ব্যবহার করে রাজধানী ঢাকায় যাওয়া আসা করছেন। তাই উপস্থিত কৃতি সন্তানদের বলছি, নাসিক কে ঢেলে সাজাতে হবে এবং মন্দের ভাল নয়, নগরের জনগোষ্ঠীকে ভাল একজন প্রতিনিধিকে বেছে নিতে হবে। আমার চেয়েও অধিকতর পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের রুপরেখা নিয়ে যদি কেহ আসতে চান, তাঁকে সু স্বাগত বলবার অভিপ্রায়ে যাওয়া উচিত। আমি কি করতে চাই, কি করা উচিত, কি করা যায়, কি করতে পারব— এমন বিষয়গুলোকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে এই মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে আগস্ট মাসের ৩০ তারিখ পর্যন্ত আমরা গবেষণা করব, পরামর্শ নেব এবং আপনাদের সাথে মত বিনিময়ে থাকব। অতঃপর আমি চুড়ান্ত ইশতেহার ঘোষণা করে এবারের ট্রেন ধরেই বলবো, বাবু এক্সপ্রেসে সব্বাই উঠতে পারেন, আমি চালক হিসাবে মন্দের ভাল নই, বেশ ভাল ! এখন আপনাদের কেহ যদি জিজ্ঞাসা করেন, তাহলে কিভাবে আপনি নির্বাচন করবেন ? আমি বলবো, দলের তথা আওয়ামী লীগের প্রতীক প্রত্যাশা করব কিংবা প্রতীক না পেলেও সমর্থন কিন্তু পদ নিয়ে নয়— আমি অপরিনত ও কাঁচা রাজনীতিক, পাকা ও পরিণত হলে এই শহরের সাংগঠনিক দায়িত্ব নিতেও একদিন প্রস্তুত হয়ে যাব। জয় বাংলা ! জয় বঙ্গবন্ধু ! জয় শেখ হাসিনা !
উন্নয়ন, নাগরিক সেবা ও রাজস্ব আদায়— এই তিনটি নীতির ওপর ভর করে আমি বদলে দিতে চাই নারায়ণগঞ্জকে। মৌলিক এমন তিনটি নীতির সাথে থাকবে যৌগিক পর্যায়েরও তিনটি নীতি।

এক, সবুজ নারায়ণগঞ্জ বিনির্মাণে কার্যকরী উদ্যোগে যেয়ে শ্লোগান মুখির থেকে নয়, অনুকাব্য রচনা করে বলছি, “ নাসিকের সবুজ বাগানে পা রাখা যাবে বারবার—–তুমিও এসো আমার শহরে একবার।“ অর্থাৎ এই নগরের কৃত্রিম সমাজের মাঝে- স্থাপনার মাঝে প্রকৃতির সন্ধান মিলবে, আর মানুষ হতে থাকবে সত্যিকারের ঈশ্বরবাদী কিংবা আল্লাহবাদী জীব, তাঁরা প্রকৃতির মানুষ হতে সৃষ্টি কর্তার বন্দনায় ভাসবে। শহরটাকে সুন্দর রাখতে নৈতিকতার শিক্ষায় শিক্ষিত করে আমরা এই শহরের সব পর্যায়ের বা বয়সের মানুষকে সচেতন করে তুলে বলবো, মানুষ থেকে নাগরিক হও। এরপর বলবো, সু নাগরিক হও। তখন তাঁরা তাঁদের অধিকার চাইবে। নাগরিক অধিকার ! সেবক হিসাবে বলতে পারি যেন, নাগরিক অধিকার সমুন্নত রাখতেই তো আমি আপনাদের পাশে দাঁড়িয়ে রয়েছি, ফুল হয়ে, চেতনার ধারক হয়ে। আমি কথা দিচ্ছি, এই শহর একদিন সবুজ হবে, আর বৃক্ষরোপণ করে সবাই বলবে, লাল হলুদের বর্ণ নিয়ে ফুল হয়ে ফুটে আছি। নারায়ণগঞ্জ বলবে, আমরা সাজতে জানি, সেরা নগরী হয়ে ধরা দিতে জানি। উদাহরণ স্বরূপ বলতে চাই, ২০২৩ সাল থেকে এই শহরের প্রত্যেকটি সত্তা সিটি কর্পোরেশনের পরিচ্ছন্ন কর্মীর কাজকে কমিয়ে আনতে সক্ষম হবে। কারণ, তাঁরা যত্রতত্র ময়লা ফেলবে না, সচেতন হয়ে সিগারেটের ফিল্টার পর্যন্ত নির্ধারিত জায়গার বাইরে ফেলে দিতেও উৎসাহী হবে না।

দুই, প্রত্যেকটি ওয়ার্ডে একটি করে পাঠগার এর ব্যবস্থা করা। আমরা শিক্ষা ব্যবস্থার সহযোগি অস্ত্র হয়ে প্রতিষ্ঠিত সামাজিক শক্তি হিসাবে নতুন প্রজন্মের জন্য উদাহরণ হতে চাই। একই সঙ্গে জ্যেষ্ঠ পর্যায়ের নাগরিকশ্রেণির অতীত পেশাগত জীবনকে শ্রদ্ধাকরত তাঁদের জন্য অবকাশকালীন সময়ের সঙ্গী হয়ে পাঠাগারগুলো সামাজিক ইতিহাস হয়ে দাঁড়াবে বলে মনে করবার সুযোগ আছে।
তিন, মন ও মননের সাংস্কৃতিক বিকাশ। প্রকৃতিমুখী নৈতিকতার অবয়ব সম্যক ধারণা দেয়া হবে। এই শহর থেকে জাতীয় ও বিশ্বমানের কৃতি খেলোয়াড়, কবি, সাহিত্যিক, গায়ক, চিত্রশিল্পি, আবৃত্তিকার তথা সাংস্কৃতিক সত্তা বের করার কার্যকরী ভুমিকায় থাকা হবে। ওয়ার্ড ভিত্তিক কাউন্সিলিং ও নৈতিক শিক্ষামুলক ক্লাশ করানো হবে- মত বিনিময়ের মাধ্যমে এক পর্যায়ে আমাদের প্রতিভাদের পৃষ্ঠপোষকতা করা হবে।

মৌলিক তিনটি নীতির বিস্তর ও সুবিন্যস্ত কর্মপরিধি নিয়ে গবেষণার কাজ করছি। এখনই সব কিছু স্পষ্ট করব না। তবে আগামী ৯০ দিনের মধ্যে মুল পরিকল্পনার সাধারণ কিছু তথ্য প্রদান করব। সব নয়। কারণ, অন্যরাও তখন আমার পরিকল্পনাকে চুরি করে বলবে, লিখবে, কথিত ভাষণ দিয়ে জানান দিবে, এই করব সেই করব। মিথ্যে প্রতিশ্রুতি দিবে। আপনারাও তখন তাঁকে বা তাঁদেরকে বিশ্বাস করবেন। কাজেই এই শহরের জন্য যা করতে চাই, তা পুরোপুরি বলব না, জানাবো না। সেরা পরিকল্পনাগুলো তুলে রাখবো। যদি সুযোগ সৃষ্টি হয়, তখন বদলে দেব নারায়ণগঞ্জকে।

সারা পৃথিবীর স্থানীয় সরকার সম্পর্কে মনিষীরা নানা মত প্রদান করেছেন। যেমন, কেহ বলছেন, হোয়েন ইউ আর ইন লোকাল গভর্নমেন্ট, ইউ আর অন দ্য গ্রাউন্ড—এন্ড ইউ আর লুকিং ইনটু দ্য আইজ এন্ড হার্টস অফ দ্য পিপল ইউ আর দেয়ার টু সারভ। ইট টিচেস ইউ টু লিসেন; ইট টিচেস ইউ টু বি এক্সপ্যান্সিভ ইন দ্য পিপল উইথ হোম ইউ টক টু, এন্ড আই থিংক দ্যাট এঙ্গেজমেন্ট গিভস ইউ পলিটিক্যাল জাজমেন্ট। অর্থাৎ, বাংলায় বললে, “আপনি যখন স্থানীয় সরকারে থাকবেন তখন আপনি মাটিতে থাকবেন এবং আপনি সেখানে উপস্থিত লোকদের চোখ এবং হৃদয়ের সন্ধান করছেন। এটি আপনাকে শুনতে শেখায়; আপনি যাদের সাথে কথা বলছেন তাদের মধ্যে এটি আপনাকে বিস্তৃত হতে শেখায় এবং আমি মনে করি যে এই ব্যস্ততা আপনাকে রাজনৈতিক রায় দেয়।“

আবার কেহ বলছেন, ইন লোক্যাল গভর্নমেন্ট, ইটস ভেরি ক্লিয়ার টু ইউর কাস্টমারস— ইউর সিটিজেনস—হোয়েদার অর নট ইউ আর ডেলিভারিং— আইদার দ্যাট পথলি গেটস ফিল্ড ইন, অর ইট ডাসেন্ট — দ্য রেজাল্টস আর ভেরি মাচ অন ডিসপ্লে, এন্ড দ্যাট ক্রিয়েটস এ ভেরি হেলদি প্রেসার টু ইনোভেট ! অর্থাৎ,” স্থানীয় সরকারে, আপনার গ্রাহকদের কাছে – আপনার নাগরিকদের – আপনি বিতরণ করছেন কিনা তা খুব স্পষ্ট। হয় সেই গর্ত ভরাট হয়ে যায়, বা হয় না। ফলাফলগুলি প্রদর্শনে খুব বেশি এবং এটি উদ্ভাবনের জন্য খুব স্বাস্থ্যকর চাপ তৈরি করে।“

অন্যদিকে দার্শনিক ঈশ্বরমিত্র বলছেন, “ মানচিত্র ভিত্তিক শাসন ব্যবস্থায় আঞ্চলিক উন্নয়নে জনগোষ্ঠী বরাবরের মত এখানেও আবেদনকারী। কিন্তু, তাঁর নাগরিক অধিকার চাইবার যোগ্যতা যেমন আছে কিনা দেখতে হবে, অন্যদিকে রাষ্ট্র কর্তৃক বিশেষ ব্যবস্থায় যখন নগর পরিকল্পনার অন্তর্ভুক্ত হয়ে তুমি একটি সংস্থা কিংবা কর্পোরেশন এর দরজা তৈয়ার করেছো, ধাক্কা দিয়ে বসতেও পেরেছো— তখন নাগরিক তৈরি ও সেবা নিশ্চিত করেই জীর্ণ চেয়ারে বসে শহরটাকে শ্রেষ্ঠ কর, আধুনিক কর।“
আজ ২ জুন ২০২১। কামরুল ইসলাম বাবু আহুত সংবাদ সম্মেলনের উপজীব্য দিক সংবাদকর্মীরা খুঁজে নিক। শুরুটা হল। পরের মত বিনিময় সভায় আরেকটু গোছাল ও পরিপাটি কথামালায় আবৃত হব। সকলকে ধন্যবাদ— যারা উপিস্থিত হতে পারেন নি, দেখা হয়ে যাবে, কথা হবে তাঁদের সাথেও। জয় বাংলা ! জয় বঙ্গবন্ধু ! জয় শেখ হাসিনা !

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *