আনোয়ার হোসেন আকাশ,
রাণীশংকৈল(ঠাকুরগাঁও)থেকে:

ছাত্র হিসেবে রিপন মেধাবী। এলাকাজুড়ে রয়েছে বেশ সুনাম। সকল পরীক্ষায় রেখেছেন কৃতিত্বের স্বাক্ষর। বর্তমানে সে রাজশাহী কলেজের পরিসংখ্যান বিভাগের চতুর্থ বর্ষে অধ্যয়নরত। বাবা মায়ের ইচ্ছে ছিল একমাত্র ছেলেকে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করবেন। কিন্তু সে আশা পূরণ হওয়ার আগেই রিপনের জীবনে নেমে আসে অন্ধকার কালো এক অধ্যায় । মেধাবী রিপনের দুটো কিডনিই নষ্ট হয়ে গেছে।
তাঁর চিকিৎসার জন্য প্রায় ১৫ লাখ টাকা প্রয়োজন। এ নিয়ে বিভিন্ন সামাজিক গনমাধ্যমেও ‘রিপনকে বাঁচাতে প্রয়োজন ১৫ লাখ টাকা’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়।

রিপনের গ্রামের বাড়ী ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈল উপজেলার লেহেম্বা ইউনিয়নের পকম্বা গ্রামে। তাঁর কিডনি ট্রান্সপ্লান্টের জন্য আর্থিক সহায়তা ও দোয়া অনুষ্ঠানের উদ্যোগ নেন ওই এলাকার বাসিন্দারা। আর্থিক সহায়তা ও দোয়া অনুষ্ঠানে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান, রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ ও সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।

সরেজমিনে গিয়ে জানা যায় রিপনসহ পরিবারের সদস্য ৪ জন। মা বাবা ছোটবোনকে নিয়ে বেশ সুখেই কাটছিল তাদের জীবন। তবে সেই সুখ বেশি দিন স্থায়ী হয়নি তাদের। মাধ্যমিক পাস করতেই বাবা ছেড়ে পরপারে চলে যান। এরপরে পরিবারে নেমে আসে দুর্দিন।

স্বামী হারিয়েও ছেলেকে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করার স্বপ্নের হাল ছাড়েননি রিপনের মা। ছেলে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হবে, দেশের মানুষের সেবা করবে এ আশায় ভর্তি করান রাজশাহী কলেজে। ভিটেমাটি ছাড়া অল্প একটু আবাদি জমির আয়ে চলছিল তাদের তিন সদস্যদের সংসার।

পড়াশোনা শেষ করে যখন পরিবারের হাল ধরার কথা রিপনের। তখনি আবার নেমে আসে অন্ধকার। অসুস্থ হয়ে পড়ে রিপন। কিডনিজনিত সমস্যা দেখা দেয় তার। এতে পরিবারের নিজের যা অর্থ ছিল সেইসাথে এলাকাবাসীর সহযোগিতা নিয়ে ছেলেকে চিকিৎসা করিয়েছেন মা। উন্নত চিকিৎসার জন্য রিপনকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল ভারতে। সেখানে নেয়ার পর সাময়িকভাবে সুস্থ হলেও স্থায়ী সমাধান হয়নি।

ডাক্তার বলেছেন রিপনের দুটো কিডনিই নষ্ট। কিডনি প্রতিস্থাপন ছাড়া ভালো হওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই। সন্তানকে নিজের একটি কিডনি দিয়ে সুস্থ দেখতে চান মা। কিন্তু কিডনি প্রতিস্থাপন করতে যে অর্থের প্রয়োজন সেটিই ব্যবস্থা করতে পারছেন না মা রিতা বেগম।

প্রতিবেশী রুবেল ইসলাম বলেন, সে আমাদের গ্রামের একটি সম্পদ। দেড়বছর আগে কিডনির সমস্যা হয় তার। আমরা সবাই সহযোগিতা করে চিকিৎসা করিয়েছি। এখন কিডনি প্রতিস্থাপন না করলে তাকে বাঁচানো কঠিন হয়ে যাবে। এতে অনেক টাকার দরকার। সমাজের বিত্তবানরা এগিয়ে এলে আমরা রিপনকে বাঁচাতে পারব।

স্থানীয় শিক্ষক জাহিদুল ইসলাম বলেন, তার কিডনি প্রতিস্থাপন করা খুবই জরুরি। তার মা কিডনি দিতে চেয়েছেন। কিডনি প্রতিস্থাপনে অনেক টাকার প্রয়োজন।

রিপনের মা রিতা বেগম বলেন স্বামী মারা যাওয়ার আট বছর হল। অনেক কষ্ট করে সংসার চালাতে হয় । আমাদের যা ছিল সবকিছু দিয়ে চিকিৎসা করিয়েছি। ডাক্তার বলেছে কিডনি প্রতিস্থাপন ছাড়া রিপনকে বাঁচানো সম্ভব নই। তার চিকিৎসায় এত টাকা যোগার করার মত সামর্থ্য আমাদের নেই। আমার সন্তানকে বাঁচাতে আপনারা সহযোগিতা করুন। ছেলেকে বাঁচাতে আমি আমার কিডনি দেব, আপনারা শুধু চিকিৎসার খরচটা দেন।

তার অধ্যায়নরত রাজশাহী কলেজ থেকে সামান্য আর্থিক সহায়তা করার আশ্বাস দিয়েছেন। এছাড়াও তাঁর বন্ধুমহল একটা ফান্ড সংগ্রহ দেওয়ার চেষ্টা করছে।

অসুস্থ রিপন বলেন, বাবার ইচ্ছে ছিলো আর মায়ের স্বপ্ন ছিল আমি উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হবো। সেই স্বপ্ন নিয়েই পড়াশোনা করছিলাম। নিজে স্বপ্ন বুনছিলাম বিসিএস ক্যাডার হয়ে দেশের জন্য কিছু করব।
এখন সপ্তাহে দুদিন হাসপাতালে না গেলে শ্বাসকষ্টের সমস্যা হয়। তবুও স্বপ্ন দেখি বেঁচে থাকার। আশা রাখি আমার চিকিৎসায় দেশের মানুষ আমাকে সহযোগিতা করবে।

লেহেম্বা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবুল কালাম জানান পকম্বা গ্রামের রিপনের বিষয়টি অবগত রযেছি। কিডনি প্রতিস্থাপন চিকিৎসা অনেক ব্যয়বহুল। ওই পরিবারের পক্ষে এই ব্যয়বহুল খরচ দিয়ে তার চিকিৎসা করানো সম্ভব হবেনা। যদি সকলে এগিয়ে আসা যায় তবেই তাকে বাঁচানো সম্ভব।

রিফাত হাসান রিপন বর্তমানে বাসায় চিকিৎসাধীন। তাঁর চিকিৎসার জন্য সহযোগিতা করতে চাইলে মা রিতা বেগমের সাথে ০১৭৩১১০০৪৬৭০ নম্বরে যোগাযোগ করে সহযোগীতা করতে পারবেন।

বিকাশ ০১৭৯৩৯৬৮৯৪৭,
রকেট নম্বর ০১৭৯৩৯৬৮৯৪৭২ (রিপন) ।
ইসলামী ব্যাংক, রাণীশংকৈল শাখা হিসাব নং- ২০৫০৪১১০২০০৩২৫৬১০

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *