আনোয়ার হোসেন আকাশ,
রাণীশংকৈল (ঠাকুরগাঁও)প্রতিনিধি:

ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গীতে বেড়েছে অস্বাভাবিক মৃত্যু। গত তিন সপ্তাহে পাঁচজনের মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। তাঁরা সবাই অস্বাভাবিকভাবে মারা গেছেন। এদের মধ্যে গৃহবধূ, স্কুলছাত্রী, কলেজছাত্রী, শিশু ও দুই কৃষক রয়েছেন।

অসচেতনতা, পারিবারিক কলহ এবং স্বজনদের ওপর অভিমান করেই এসব অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে বলে মনে করছে পুলিশ। আর স্থানীয়রা বলছেন, ঘটনাগুলোর সঠিক তদন্ত এবং প্রকৃত রহস্য উন্মোচন না হওয়ার এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি হচ্ছে। তাই অস্বাভাবিক হওয়া সকল মৃত্যুর সঠিক তদন্ত এবং আত্মহত্যা প্রতিরোধে সচেতনমূলক কার্যক্রম পরিচালনার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

এদিকে পুলিশের দাবি, ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনে সঠিক সময়ে পাচ্ছেন না তারা। একটি ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন আসতে তিন মাসের বেশি সময় লাগে। এত সময়ের মধ্যে স্থানীয় লোকজন এবং জনপ্রতিনিধিরা ওই ঘটনার মীমাংসা করে ফেলেন। তাই এসব ঘটনা অস্বাভাবিক হলেও দিন দিন স্বাভাবিক রূপ নিচ্ছে।

জানা গেছে, গত রোববার (১৭ এপ্রিল) উপজেলার দুওসুও ইউনিয়নের সনগাঁও কোয়াটল গ্রাম থেকে মৃত গফফার আলীর মেয়ে কলেজছাত্রী রুনি পারভীনের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় একটি অপমৃত্যুর মামলা হলেও ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন না পাওয়ায় তদন্ত আর এগোয়নি।

এর আগে গত ১৩ এপ্রিল স্ত্রীর সঙ্গে বাগ্বিতণ্ডার কারণে গ্যাসের ট্যাবলেট খেয়ে মারা যান উপজেলার বড়পলাশবাড়ী ইউনিয়নের বেলতলা গ্রামের শামসুল হকের বাবুল হোসেন (৩২)। ওই দিন ধনতলা ইউনিয়নের বগাদিঘী ডাঙ্গাপাড়া গ্রামের পরেশ চন্দ্রের স্ত্রী সুভা রানী (৩২) তাঁর স্বামীর সঙ্গে ঝগড়া করে বিষপানে মারা যান। এ দুটো ঘটনাতেও থানায় অপমৃত্যুর মামলা হয়েছে।

এদিকে গত ৬ এপ্রিল ছোট ভাইয়ের ওপর অভিমান করে স্কুলছাত্রী ময়না রাণী (১৪) বিষপান করে মারা যায়। সে উপজেলার ভানোর ইউনিয়নের দফাদারটুলি গ্রামের কৃষ্ণ রামের মেয়ে।

গত ৩১ মার্চ স্ত্রীর ওপর অভিমান করে বাড়ি থেকে আধা কিলোমিটার দুরে রাস্তার ধারে গলায় ফাঁস দিয়ে মারা যান করেন উপজেলার বড়পলাশবাড়ী ইউনিয়নের সরকারপাড়া গ্রামের মৃত রশিদুল ইসলামের ছেলে কেলিম উদ্দীন (৩০)। এ দুটো ঘটনাতেও অপমৃত্যুর মামলা হয়েছে।

এছাড়াও নদীতে ডুবে রাব্বী নামের পাঁচ বছরের এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২১ এপ্রিল) উপজেলার বড়বাড়ী ইউনিয়নের তীরনই নদীতে এ ঘটনা ঘটে। শিশু রাব্বী একই ইউনিয়নের রুপগঞ্জ গ্রামের ভ্যানচালক জাকির হোসেনের ছেলে।

বালিয়াডাঙ্গী জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক হারুন অর রশিদ বলেন, ‘মানুষের ধৈর্য ক্ষমতা দিন দিন কমে যাচ্ছে। পারিবারিক কলহগুলো বাড়ছে। এসব থেকে মুক্তি পেতে অনেকেই আত্মহননের মতো পথ বেছে নিচ্ছেন। আমাদের সকলের উচিত নিজেকে ভালোবাসা এবং সমাজের প্রতি যে দায়িত্ব রয়েছে সে সম্পর্কে সচেতন হওয়া। তাহলেই অস্বাভাবিক মৃত্যু বন্ধ হবে।’

এ বিষয়ে বালিয়াডাঙ্গী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খায়রুল আনাম বলেন, অস্বাভাবিক মৃত্যুরোধে পারিবারিকভাবে, সামাজিকভাবে ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। সমস্যার চেয়ে জীবনের মূল্য অনেক বেশি মানুষের মধ্যে-এমন ধারণা সৃষ্টি করতে পারলেই অস্বাভাবিক মৃত্যু প্রতিরোধ করা সম্ভব।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *