আসলাম উদ্দিন আহম্মেদ, কুড়িগ্রাম জেলা প্রতিনিধিঃ ব্রম্মপুত্রে নদে অষ্টমীর স্নান করতে হাজার হাজার সনাতন ধর্মাবলম্বী পুণ্যার্থী বিভিন্ন যানবাহনে করে চিলমারীতে আসতে শুরু করেছে।

উত্তরাঞ্চলের ৭ জেলার সনাতন ধর্মাবলম্বী ও এর বাইরে বাংলাদেশের অন্যান্য এলাকা থেকে তারা ট্রেন, বাস, মাইক্রোবাস, অটোরিকশা, মোটরসাইকেল, পিক-আপে করে চড়ে আসছে। কুড়িগ্রাম-চিলমারী রোড ও রাজারহাট-উলিপুর রোডে অতিরিক্ত যানবাহন চলাচলের ফলে রাস্তায় মাঝে মধ্যে যানজট দেখা দিচ্ছে। দেশের বাইরে থেকে পুণ্যার্থী আসবে বলে উদযাপন কমিটি আশা করছেন।

হিন্দু পুরাণ মতে, জমদগ্নী নামের এক মুনি পিতৃভক্তি পরীক্ষা করার জন্য তার চার ছেলেকে তাদের মা রেনুকাকে হত্যা করার আদেশ দেন। কিন্তু চার ছেলে এ আদেশ প্রত্যাখান করে।কিন্তু কনিষ্ঠ পুত্র পরশুরাম কুঠার দিয়ে মাকে দ্বিখণ্ডিত করে।

মাতৃহত্যার শাস্তিস্বরূপ কুঠার তার হাতেই লেগে থাকে। প্রাণপণ চেষ্টা করেও কুঠার হাতে থেকে ছাড়ানো যায়নি। মাতৃহত্যার পাপে আক্রান্ত হয় পরশুরাম। এ পর্যায়ে পিতা পরশুরামকে তীর্থ ভ্রমণের আদেশ দেন। যে তীর্থে তার হাতের কুঠার খসে পড়বে, সে স্থানই হবে পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ তীর্থস্থান।

এরপর পরশুরাম তার কুঠার লাঙ্গলবদ্ধ করে পর্বতের মধ্য দিয়ে চালাতে থাকেন। সেই লাঙ্গলের ফলায় তৈরি পথ ধরে সৃষ্টি হয় ব্রহ্মপুত্র নদের। ওই পথ ধরে চলতে থাকেন পরশুরাম নিজেও। এভাবে হিমালয় থেকে বয়ে আসা ব্রহ্মপুত্রের পানিতে স্নান করে পাপমুক্তি ঘটে পরশুরামের। খসে পড়ে হাতের কুঠার।মাতৃ হত্যার অভিশাপ থেকে মুক্তির দিনটি ছিল চৈত্র মাসের শুক্লা পক্ষের অষ্টম তিথি। (মহাভারত, পৃষ্ঠা-১০০৩ লেখক শ্রী কাশিরাম দাস)।

তখন থেকেই সনাতন ধর্মাবলম্বীরা জীবনের সকল পাপ মোচনের জন্য প্রতিবছর নির্দিষ্ট এই দিনটিতে স্নানের জন্য ছুটে আসেন কুড়িগ্রামের চিলমারী বন্দরের ব্রহ্মপুত্র নদে।
অষ্টমীর স্নান নির্বিঘ্ন করতে চিলমারী উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসন ব্যাপক কর্মসূচি নিয়েছে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার জানান, পুণ্যার্থীদের নিরাপত্তার জন্য চিলমারী থানার পুলিশসহ জেলা থেকে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

তাদের সহায়তায় থাকছে আনসার ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের কর্মীবৃন্দ।স্বাস্থ্য বিষয় দেখবে চিলমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। তিনি আরও জানান, এখন পর্যন্ত কোন ধরনের বিশৃঙ্খলার খবর পাওয়া যায়নি।
এবারের অষ্টমীর স্নান সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মাঝে আলাদা পূন্যের বিষয় হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

কারণ হিসেবে জানা গেছে, বুধবার স্নান হবে। ২৮ মার্চ সন্ধ্যা সাতটা থেকে ২৯ সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত স্নান চলবে বলে জানা গেছে। তবে এর উত্তম সময় বুধবার সকাল ৯ টা ৫ মিনিট থেকে দশটা ১ মিনিট পর্যন্ত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *