আনোয়ার হোসেন আকাশ,
রাণীশংকৈল(ঠাকুরগাঁও)থেকে:

কোথাও পায়ের গোরালি পযর্ন্ত কোথাও হাটু সমান পানি তার মাঝেই জেগে উঠেছে ধানের গাছ। ধান কোথাও বেড়ে উঠেছে পানির উপরে কোথাও পানিতে ডুবে রয়েছে। আর এই ধান চাষ কোন প্রকৃত আবাদী জমিতে নই। ধান চাষ হচ্ছে একটি দাখিল মাদরাসার খেলার মাঠের জমিতে।

মাদ্রাসার সুপার জানিয়েছেন করোনায় লকডাউনে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় মাদরাসার মাঠটিতে নৈশ্য প্রহরী রোপা আমন ধান রোপন করেছেন। সে গরীব মানুষ বিল বেতন নাই। তাই তাকে ধান চাষাবাদের অনুমতি আমি দিয়েছি। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুললে এ চাষাবাদ করার সুযোগ ছিলো না।

করোনার কারনে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ থাকায় বেসরকারি এই মাদরাসা শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন দিতে পারছে না কর্তৃপক্ষ। তাই মাদরাসা সুপার নৈশ্য প্রহরী হামিদুর রহমানকে অনুমতি দিয়েছেন মাদ্রাসার মাঠে ধান চাষ করার। তবে উপজেলা প্রশাসন বলছে, এই কাজটি ঠিক হয়নি। মাদরাসার মাঠ শিক্ষার্থীদের খেলাধুলার জন্যই রাখতে হবে।

করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার সুযোগ নিয়ে শিক্ষার্থীদের খেলার মাঠে রোপণ করা হয়েছে ধান। এ কাজে সহায়তা করছেন মাদরাসার সুপার মমতাজ আলী নিজেই। অনুমতি দিয়েছেন মাদরাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতিও।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা ও জানা গেছে, এই চাষাবাদ মাদরাসাটি হলো ঠাকুরগাঁও রাণীশংকৈল উপজেলার নেকমরদ ইউনিয়নের চন্দনচহট আলহাজ্ব ইমারউদ্দীন দাখিল মাদ্রাসা। মঙ্গলবার দুপুরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মাদরাসাটি নেকমরদ থেকে বালিয়াডাঙ্গী মহাসড়ক ঘেঁষায় অবস্থিত।

দুর থেকে দেখে চেনার উপায় নেই এটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। মাদরাসাটির চতুর পাশে ধানের আবাদ এবং কি মাদরাসাটিতে প্রবেশের তেমন কোন পথও নেই। কারণ মাদরাসার প্রবেশ পথ এখন চাষাবাদের জায়গায় রুপান্তর হয়ে পড়েছে।

মাদরাসাটিতে একটি বাড়ীর পাশ দিয়ে পানি মাড়িয়ে প্রবেশ করে এ প্রতিবেদক। এ সময় দেখা যায়, মাদরাসাটির ৬টি কক্ষ রয়েছে তাতে দুটি কক্ষে কিছু টেবিল চেয়ার জটলা করে রাখা হয়েছে।

একটি রুমে মাদক সেবনের কিছু উপকরণ আর একটি রুমে ভুট্টার ডাটার স্তুপ করে রাখা হয়েছে। আরেকটি রুমে যাওয়া যায়নি মাদরাসার বারান্দায় খড়ির স্তপ করে রাখার কারণে। মাদরাসটির প্রায় প্রত্যেক রুমেই নেই দরজা জানালা।

এ সময় কথা হয় ঐ মাদরাসার নৈশ্য প্রহরী হামিদুর রহমানের সাথে তিনি বলেন, রোপা আমনে ধান চাষ করতে তেমন পানির প্রয়োজন হয় না। পানি সব সময় মাঠজুড়ে স্তুপ হয়ে থাকে। বিল বেতন নাই প্রায় ২২ বছর। মাঠটি পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে ছিল মাদরাসাও বন্ধ তাই সুপারকে বলে তিনি ধান চাষাবাদ করছেন। তিনি জানান মাদরাসা মাঠের ২৫ কাঠা জমিতে তিনি এ চাষাবাদ প্রায় চার বছর ধরে করে আসছেন।

মাদরাসার সুপার মনতাজ আলী কাজী মঙ্গল বার মুঠোফোনে জানান, মাদরাসার নৈশ্য প্রহরী হামিদুর রহমান গরীব মানুষ তাছাড়া মাদরাসার বিল বেতনও নাই। তাই সে রোপা আমন চাষাবাদ করতে চাইলে মাদ্রাসার মাঠের জমিতে এ চাষাবাদ করছে।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ১৯৯৫ সালে ১ একর ৪ শতক জমিতে স্থাপিত হয়েছে এ মাদরাসাটি, বর্তমানে প্রায় ২২৫ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। তাছাড়া প্রায় ১৬ জন শিক্ষক শিক্ষিকা ও কর্মচারী বিনা বেতনে প্রতিষ্ঠানে কর্মরত রয়েছে। আদৌ বিল বেতন হবে কিনা সন্দেহ রয়েছে।

আব্দুল কাদের নামে এক মাদরাসা শিক্ষার্থীর অভিভাবকসহ বলেন, দেড় বছর ধরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। ছেলে-মেয়েরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যেতে পারছে না। আর সেই সুযোগে মাদরাসার মাঠে ধান চাষ করছে কর্তৃপক্ষ। এতে মাদ্রাসার মাঠে খেলাধুলার পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। এটি মাদরাসা কর্তৃপক্ষের ঠিক হয়নি।

মাদরাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতি আনোয়ার হোসেনের কাছে ধান রোপণের বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি বলেন, মাদরাসাটি এমপিও ভুক্ত হয়নি। করোনার জন্য বন্ধও রয়েছে। তাই ফেলে না রেখে অফিস কর্মচারী ধান রোপণ করেছেন। এতে সমস্যা তো দেখছি না।

মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আলী শাহরিয়ার মুঠোফোনে বলেন, এই মাদরাসাটি চলমান কিনা আমার জানা নেই। তাছাড়া আলহাজ্ব ইমারউদ্দীন মাদ্রাসা নামে দাখিল মাদরাসা রয়েছে কিনা তাও আমার জানা নেই। এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, অব্যশই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাঠে চাষাবাদ করতে পারে না কেউ।

রাণীশংকৈল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সোহেল সুলতান জুলকার নাইন কবির স্টিভ বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মাঠে ধান চাষ করার কোনো বিধান নেই। মাঠটি খেলার জন্য শিক্ষার্থীদের জন্য উম্মুক্ত থাকবে। বিষয়টি আপনাদের মাধ্যমে জানলাম। এবিষয়ে মাদরাসার সুপারকে ডেকে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *