সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইল মোড়ে ফুটপাত থেকে শীর্ষ চাঁদাবাজ রিপন ওরফে ‘মুরগী রিপন’ প্রকাশ্যেই উত্তোলন করছে চাঁদা। তার এ কাজে সহযোগী হিসেবে নিয়োজিত রয়েছে শিপন ব্যাপারী, নাসির, শাকিল, ও ফয়েজ।
তারা দীর্ঘদিন ধরে সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইল এলাকায় ফুটপাতের দোকানদারকে ভয়ভীতি ও হুমকি প্রদর্শন করে জোরপূর্বক দোকান হতে দৈনিক ২০০ টাকা থেকে ৫০০ টাকা করে অবৈধভাবে চাঁদা আদায় করে আসছে এবং বড় দোকান প্রতি ১ লক্ষ টাকা থেকে ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত অগ্রীম চাঁদা আদায় করে।

এক শ্রেনীর প্রভাবশালী ব্যক্তি, এক জনপ্রতিনিধি, স্বেচ্ছাসেবকলীগের এক নেতা ও এ কাউন্সিলরের শেল্টাওে এই চাঁদাবাজ চক্র এসব দোকানপাট থেকে দৈনিক ২০০ টাকা থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত চাঁদা আদায় করে থাকেন।
দোকান প্রতি ১ লাখ টাকা থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত অগ্রিম নেয় এ চক্র। ফুটপাতে গড়ে উঠা অবৈধ দোকান নির্বিঘ্নে চালাতে তারা দৈনিক পুলিশকে ম্যানেজ করার কথা বলে দোকান প্রতি এক’শ, সওজ কর্মকর্তাদের জন্য ৫০ ও বিদ্যুৎ বিল বাবদ ৩০ টাকা করে মোট ১৮০ টাকা বরাদ্দ রাখেন। বাকী টাকা মুরগী রিপন নিজের জন্য ও তার সহযোগী চাঁদাবাজদের জন্য রাখেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যবসায়ী জানান, মুরগী রিপন ও তার সহযোগীরা প্রতিদিন পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক বিভাগের নাম করে এ টাকা উত্তোলন করেন।
মুরগি রিপনকে চাঁদা না দিলে তিনি ও তারা বাহিনীর সদস্যরা আমাদেরকে শারীরিক নির্যাতনের পাশাপাশি উচ্ছেদের হুমকিসহ পুলিশ দিয়ে হয়রানি করার হুমকি দেয়। ফলে বাধ্য হয়ে আমরা তাকে ও তার নিয়োজিত ব্যক্তিদের প্রতিদিন চাঁদা দেই। তবে এ চাঁদাবাজির বিষয়টি জানা নেই সিদ্ধিরগঞ্জ থানা পুলিশের।

গত বছরের ২০ ডিসেম্বর সিদ্ধিরগঞ্জ থানা পুলিশের সহায়তায় সওজের কর্মকর্তারা এসব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে অভিযান পরিচালনা করে। এছাড়া ৩০ ডিসেম্বরও শিমরাইল মোড়ের ফুটপাতে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা পুলিশ অভিযান চালিয়ে ৩ শতাধিক দোকান উচ্ছেদ করে।
তবে পুলিশ স্থান ত্যাগ করার কিছুক্ষণ পরই চাঁদাবাজ রিপন বাহিনী রিক্সা লেনের ঐ জায়গা তার দখলে নিয়ে নেয়। সে থেকে অদ্যবধি পূর্বের ন্যায় রিপন চালিয়ে যাচ্ছে তার চাঁদাবাজী।

এ রাস্তায় নিয়মিত চলাচল করা দিদারুল আলম নামে এক পথচারী জানান, মহাসড়কের এসব দোকানপাট গড়ে উঠায় পথচারীদের চলাচল বিঘ্নিত হচ্ছে। প্রতিনিয়তই মানুষের জটলা লেগে থাকে। এতে বখাটে, পকেট মার ও ছিনতাইকারীরা থাকে সক্রিয়। বিশেষ করে সন্ধ্যার পর নারী পথচারীরা হয়ে পড়ে অরক্ষিত।
এলাকাবাসী জানান, মুরগী রিপনের চাঁদার একটি অংশ পুলিশ, প্রশাসনের একাধিক ব্যক্তি, স্বেচ্ছাসেবকলীগের এক নেতা ও স্থানীয় কয়েকজন বিশেষ পেশার কথিত লোকজনের নিকটও যায় তাই তিনি নির্বিঘ্নে শিমরাইল মোড়ের অবৈধ ফুটপাতে চাঁদাবাজী করতে পারেন।

তাদের দাবি, জনস্বার্থে শিমরাইল মোড়ের ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের দুপাশ দখল মুক্ত করে পথচারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
এ বিষয়ে জানতে রিপনের মোবাইলে ফোন দিলে তিনি এ প্রতিবেদককে জানান, আমার শরীরটা ভালোনা। হঠাৎ করে পেশার উঠেছে। ডাক্তারের কাছে আছি। আমি আপনাকে পরে ফোন দিচ্ছি। আপনার অফিস কোথায়, আপনার সাথে দেখা করবো।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সাইফুল এ প্রতিবেদককে জানান, র‌্যাব, পুলিশ, ডিবিসহ বিভিন্ন সংস্থা তাকে একাধিকবার গ্রেফতার করেছে। সে আবারও পূর্বের মত টাকা তুলছে এমন অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
শিমরাইল মোড়ে ফুটপাতে হকারদের বসতে নিষেধ করা হয়েছে। সেই সাথে হকারসহ ব্যবসায়ীদের জানিয়ে দেয়া হয়েছে পুলিশের নাম করে কেউ টাকা তুললে থানায় জানাতে। সাথে সাথে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

প্রসঙ্গত, চলতি মাসের ৩ মে (সোমবার) সিদ্ধিরগঞ্জের হীরাঝিল আবাসিক এলাকা থেকে চাঁদাবাজ মুরগী রিপন তার সহযোগীসহ র‌্যাব-১১’র হাতে গ্রেফতার হয়। তবে গ্রেফতারের কয়েকদিনের মধ্যেই তিনি জেল থেকে বেরিয়ে এসে ফের চাঁদাবাজি শুরু করে।
এর আগে ২০১৯ সালের ১১ মে সিদ্ধিরগঞ্জের হীরাঝিল আবাসিক এলাকায় পতিতা নিয়ে ফূর্তি করতে গিয়ে পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়েছিলেন “মুরগি রিপন”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *