মোঃআবু কাওছার মিঠু
রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) প্রতিনিধিঃ

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ, আড়াইহাজার, সোনারগাঁও ও বন্দর থানার আংশিক এলাকায় গত সোম, মঙ্গল ও বুধবার বিকেল ৫টা পর্যন্ত গ্যাস সরবরাহ বন্ধ থাকায় গ্রাহকরা চরম ভোগান্তিতে পড়েছে। জাপানি অর্থনৈতিক অঞ্চলের (জাইকা) পাইপ লাইন সংস্কারের জন্য গ্যাস লাইন সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।

তাতে ২০ হাজার আবাসিক গ্রাহক, ৮টি সিএনজি পাম্প, ২০টি রেষ্টুরেন্ট ও ২৫০টি শিল্প কারখানার মালিকরা ভোগান্তিতে পড়েছেন। কারখানাগুলো স্থবির হয়ে পড়েছে। সন্ধ্যার পর কোন কোন কারখানায় ভূতুরে পরিবেশে পরিণত হয়েছে।

তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিসন এন্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানী লিমিটেড জাতীয় পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে গত ২৩ এপ্রিল রাত ১২টা ১মিনিটে গ্যাস শাট-ডাউন করে। এ সময় মাধবদী, পাঁচদোনা, নারায়ণগঞ্জ, ফতুল্লা, শ্যামপুর, কদমতলী, কেরাণীগঞ্জ, জিঞ্জিরা এলাকা সহ ঢাকা মহানগরীর দক্ষিণ অংশে গ্যাসের স্বল্পচাপ বিরাজ করে।
সরেজমিনে গিয়ে জানাগেছে, রূপগঞ্জের রূপসী, গোলাকান্দাইল, ভুলতা, কর্ণগোপ, বরপা, মৈকুলী, তারাবো, কাঁচপুর, মুড়াপাড়া, সিটি ইকোনোমিক জোন, মেঘনা এনার্জি, সামিট পাওয়ার আরইবি, সিটি সুগার ইন্ড্রাসট্রিজ, গাজী গ্রুপ, মাহবুব গ্রুপ, আব্দুল্লা স্পিনিং সহ আড়াই শতাধিক শিল্প কারখানার গ্যাস বন্ধ থাকায় উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। কারখানার শ্রমিকরা অলস সময় পার করছেন। অর্থ সংকটে পড়ে নিন্ম আয়ের শ্রমিকরা খাবার সংকটে পড়েছেন। আবাসিক গ্রাহকদের কেউ মাটির চুলায়, কেউবা সিলিন্ডারের গ্যাস ক্রয় করে রান্না করেছেন।

আবার কেউবা, রুটি, কলা, চিড়া, সহ শুকনো খাবার খেয়ে সময় পার করেছেন। গ্রাহকদের কেউবা ঝামেলা এড়াতে মাটির চুলায় সবজি খিচুরি রান্না করেছেন। আবার কেউ কেউ সপরিবারে অন্যত্র বেড়াতে গিয়েছেন। সুযোগ পেয়ে বিদ্যুৎ চালিত রান্না করার পাত্র রাইচকুকার ও গ্যাস সিলিন্ডারের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে বিক্রেতারা।

গতকাল ২৬ এপ্রিল বুধবার দুপুরে আবাসিক গ্যাস সরবরাহের পাইপ লাইন সংস্কার কাজ সম্পন্ন হয়েছে এবং গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে মর্মে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিসন এন্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানী লিমিটেড দাবি করলেও বাস্তবে তার মিল নেই। গতকাল বুধবার ৫টা পর্যন্ত তারাবো পৌরসভা এলাকায় আবাসিক লাইনের গ্যাস সরবরাহ বন্ধ ছিল বলে দাবি করেছেন রূপসী এলাকার গৃহবধূ সাবিনা ইয়াসমিন।

রবিন টেক্সটাইলের এক কর্মকর্তা নাম না প্রকাশের শর্তে বলেন, ঈদের ছুটির পর শ্রমিকরা ফিরে আসলেও গ্যাস সংকটের কারনে তারা অলস সময় পার করছেন। মুড়াপাড়ার হাওলিপাড়া এলাকার বাসিন্দ আব্দুল আজিজ বলেন, গ্যাস সংকটে পড়ে ইট দিয়ে চুলা তৈরি করে ঝামেলা এড়াতে খিচুড়ি রান্না করছি। কাহিনা গ্রামের গৃহবধূ হালিমা আক্তার বলেন, গ্যাস সংকটে রান্নাবান্না বন্ধ। বাজার থেকে কেনা শুকনো খাবার খেয়ে দিন পার করছি।

তিতাসের সোনারগাঁও আঞ্চলিক বিপনন বিভাগের ব্যবস্থাপক মেজবাউর রহমান বলেন, গ্রাহকদের নিরবিচ্ছিন্ন সেবা দিতেই গ্যাস লাইনের এ সংস্কার কাজ চলছে। সিলেটের বাখরাবাদ থেকে ও ব্রা²ণবাড়ীয়ার থেকে তিতাস নামের ২টি পৃথক পাইপ লাইনে এই অঞ্চলের গ্যাস সরবরাহ করা হয়। এদের মধ্যে ১৪ ইঞ্চি ব্যাসের পাইপ লাইনটি ইতি মধ্যে সংস্কারের পর আবাসিক গ্রাহকদের জন্য গতকাল ২৫ এপ্রিল দুপুরে গ্যাস সংযোগ দেওয়া হয়েছে।

শিল্প কারখানায় সরবরাহকারী ২০ ইঞ্চি ব্যাসের পাইপ লাইনের সংস্কার কাজ দ্রুতগতিতে চলছে। সার্ভিস লাইনে গ্যাসের প্রেসার রয়েছে ১ হাজার পিএসআই(গ্যাসের চাপের পরিমাপের একক)। আংশিক শাট-ডাউন দেওয়া সম্ভব নয়। তাই নরসিংদীর সোর্স থেকে পুরো অঞ্চলে শাট-ডাউন দেওয়া হয়েছে। গত ২৩ এপ্রিল রাত ১২ টা ১মিনিট থেকে গতকাল ২৬ এপ্রিল বুধবার রাত ১২ টা পর্যন্ত মোট ৭২ ঘন্টা গ্যাস সরবরাহ বন্ধ থাকার কথা ছিলো।

দিন রাত কাজ চলছে তাই ৬০ ঘন্টার মধ্যে সংস্কার কাজ শেষ হবে বলে আশা করছি।
তিতাসের প্রকল্প পরিচালক আনম সালেহ বলেন, জাপানি অর্থনৈতিক অঞ্চল ছনপাড়া এলাকায় গ্যাস পাইপ লাইনের সংস্কার কাজ চলছে। ৭২ ঘন্টার মধ্যে সংস্কার কাজ শেষ হবার কথা ছিলো। গ্যাস লাইন সংস্কার কাজের জন্য শ্রমিক বৃদ্ধি করা হয়েছে। এখন দিন রাত কাজ চলায় তা ৬০ ঘন্টার মধ্যে শেষ হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *