নিজস্ব সংবাদদাতাঃ শুক্রবার ( ১৮ নভেম্বর ) বেলা ৩ টায় আলী আহাম্মদ চুনকা নগর পাঠাগার ও মিলনায়তনে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির পলিটব্যুরোর সদস্য ও জাতীয় শ্রমিক ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক কিংবদন্তি শ্রমিক নেতা কমরেড শফিউদ্দিন আহমেদের দ্বিতীয় মৃত্যু বার্ষিকী উপলক্ষে নারায়ণগঞ্জ জেলা ওয়ার্কার্স পার্টির উদ্যোগে এক স্মরণ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

জেলা ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি কমরেড হাফিজুর রহমানের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক কমরেড হিমাংশু সাহার সঞ্চালনায় এ স্মরণ সভায় বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির পলিটব্যুরো সদস্য কমরেড আনিসুর রহমান মল্লিক, বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ নারায়ণগঞ্জ মহানগর কমিটির সভাপতি ও ১৪ দলের জেলা সম্বনয়ক জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আলহাজ্ব আনোয়ার হোসেন, সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চের আহ্বায়ক সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রফিউর রাব্বি, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির জেলা সভাপতি কমরেড হাফিজুল ইসলাম, ন্যাপের শহর সাধরণ সম্পাদক এড. আওলাদ হোসেন, জাসদ মহানগর সভাপতি মোসলেম উদ্দিন, নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি ভবানী সংকর রায়, সমমনার সাধারণ সম্পাদক গোবিন্দ সাহ, জেলা ওয়ার্কার্স পার্টির সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য কমরেড গোলাম মোস্তফা সাচ্ , জাতীয় শ্রমিক ফেডারেশনের জেলা সদস্য সচিব এইচ রবিউল চৌধুরী, বাংলাদেশ যুব মৈত্রীর জেলা যুগ্ম আহ্বায়ক মাইন উদ্দিন বারী সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন কমরেড শফিউদ্দিন আহমেদের বড়ছেলে মোহাম্মদ রফিক।
প্রয়াত কমরেড শফিউদ্দিন আহমেদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে স্মরণ সভায় কমরেড আনিস বলেন, কমরেড শফিউদ্দিন ষাটের দশকে রাজনীতিতে প্রবেশের পর থেকে মৃত্যুর পূর্ব মূহুর্ত পর্যন্ত সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের জন্য ছিলেন অবিচল, কখনো দায়িত্বে অবহেলার নজির নেই উল্লেখ করে বলেন, অর্থ – ব্যক্তিস্বার্থ কোন কিছুই তাঁকে স্পর্শ করতে পারেনি। আজকের দিনে সমাজতান্ত্রিক আন্দোলন বেগবানে ঐক্য গড়তে কমরেড শফিউদ্দিনের মতো আদর্শিক নেতৃত্বের খুবই প্রয়োজন। এছাড়াও নারায়ণগঞ্জের স্থানীয় রাজনীতিতে সন্ত্রাস – খুনীদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে অবিরাম সংগ্রামের জন্য সিটি মেয়র আইভীকে ধন্যবাদ জানিয়ে ত্বকী হত্যার বিচারেরও জোর দাবি জানান।
আলহাজ্ব আনোয়ার বলেন, বর্তমানে রাজনীতিতে নিরলস অবদান রাখলেও মৃত্যুর পরে খুব একটা সময় মনে রাখেনা উল্লেখ করে বলেন, আজীবন সংগ্রামী কমরেড শফিউদ্দিন আহমেদের এই স্মরণসভার আয়োজনের জন্য জেলা ওয়ার্কার্স পার্টির নেতৃবৃন্দদের ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, মানুষের কল্যাণের জন্যই রাজনীতি হওয়া উচিত।

যে রাজনীতি মানুষকে উগ্র বানায়, সেই রাজনীতি মানুষের রাজনীতি হতে পারে না। আসলে স্বাধীনতার পরবর্তীকালের রাজনীতি আর আগের রাজনীতিতে অনেক পার্থক্য। একসময় রাজনীতি মানুষের কল্যাণে রাজনীতি হতো। আজকে রাজনীতিতে হানাহানি, মারামারি, সন্ত্রাস। রাজনীতিতে জিম্মি করে আমরা নিজের আখের গোছানোর জন্য ব্যস্ত। এখন রাজনীতির যে অবস্থা দেখতেছি সেই অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার জন্য শফি ভাইয়ের মতো নেতৃত্ব আমাদের দরকার। দেশপ্রেমিক মানুষগুলো দূরে যাওয়ার ফলে দেশ ও জাতির এই করুন অবস্থা। এই অবস্থার পরিবর্তনের জন্য ভালো মানুষের নেতৃত্ব দরকার। কিছু মানুষের কারণে ভালো মানুষেরা রাজনীতি থেকে দূরে সরে যাচ্ছে।
রফিউর রাব্বি বলেন, শফি ভাই রাজনীতির পাশাপাশি নারায়ণগঞ্জের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনের আন্দোলনে যথেষ্ট ভূমিকা রেখেছেন, তাঁর এ অবদানের কথা নারায়ণগঞ্জ বাসী চিরস্মরণে রাখবে।

হাফিজুল ইসলাম বলেন, কমরেড শফিউদ্দিন আহমেদকে আমি ছাত্র জীবন থেকেই একজন আদর্শ নেতা হিসেবে জানি, আমি রাজনীতিতে আসার পর শ্রমিক আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় বিভিন্ন জোটগত আন্দোলনে শ্রমিক কর্মচারী ঐক্য পরিষদ ( স্কোপ ), জেলা শ্রমিক কর্মচারী সংগ্রাম পরিষদসহ বিভিন্ন যৌথ আন্দোলনে একসাথে থেকে খুব কাছ থেকে দেখেছি, তাঁর সাথে আন্দোলন করতে গিয়ে আমার কখনোই মনে হয়নি তিনি অন্য সংগঠনের নেতা।

বিশেষ করে ২০০৩ সালে বিসিকে গার্মেন্টস শ্রমিক অভ্যুত্থানের সময় তাঁর দৃঢ়তা দেখে মুগ্ধ হয়েছি।
স্মরণ সভায় বক্তারা আরো বলেন, কমরেড শফিউদ্দিন আহমেদ এর প্রত্যাশিত শ্রমজীবী মানুষের জনগনতান্ত্রিক রাষ্ট্র গঠনে সকল বামপন্থী এবং প্রগতিশীল শক্তি একত্রিত হয়ে লড়াই সংগ্রামকে আরো জোরদার করার মধ্য দিয়ে কিংবদন্তি এই নেতার স্মৃতির প্রতি প্রকৃত শ্রদ্ধা নিবেদন করা হবে। উল্লেখ্য ২০২০ সালের ১৫ নভেম্বর ঢাকায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তিনি বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির আজীবন সম্মানিত সদস্য পদে ছিলেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *