এস.এম রুবেল আকন্দ,
ত্রিশাল ময়মনসিংহঃ

লিসা কালাম। একজন নামকরা সঙ্গীত শিল্পী, একজন সুমধুর কন্ঠের যাদুকর, একজন অন্যতম ক্লীন ইমেজের রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, একজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান সব মিলিয়ে একজন আদর্শ ও পরিপূর্ণ মানুষ।

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার সুযোগ্য উত্তরসুরী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার আদর্শ বাস্তবায়নে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করা ছাড়াও লিসা কালাম সেই বাল্যকাল ১৯৯২ সাল থেকেই সঙ্গীতের মাধ্যমে নিজেকে আত্মনিয়োগ করে আজ সফলতার উচ্চ শিখরে আরোহন করেছেন।

১৯৯২ সালে তিনি সর্বপ্রথম একুশে ফেব্রুয়ারি উপলক্ষে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউস্থ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আয়োজিত অনুষ্ঠানে সঙ্গীত পরিবেশন করে উপস্থিত জাতীয় নেতৃবৃন্দকে তাক লাগিয়ে দেন। উক্ত অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন জননেত্রী শেখ হাসিনা ও জাতীয় সব নেতৃবৃন্দ। ঐ অনুষ্ঠানে জননেত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর উপর তার পরিবেশন করা গান শুনে মুগ্ধ হয়ে তাকে কাছে নিয়ে অনেক উৎসাহ দেন ও পুরস্কৃত করেন।

সেই থেকে জননেত্রীর উৎসাহে তার যাত্রা শুরু করে তার ধারাবাহিকতায় বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সঙ্গীত পরিবেশন ও মর্যাদা অক্ষুন্ন রেখে চলেছেন। এ সময়ের মধ্যে তার একক কন্ঠে অদ্যবধি বঙ্গবন্ধুর উপর অনেকগুলো গানের ক্যাসেট ও সিডি-ভিডিও প্রকাশ করে তার গানের মাধ্যমে নতুন প্রজন্মকে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানাতে চেষ্টা করেছেন।
লিসা কালামের উল্লেখযোগ্য ও অন্যতম এ্যালবামগুলো হলো:
১. এ লাশ ঢাকা আসবেই (১৯৯১)
২. বঙ্গবন্ধুর সাড়ে তিন বছর (১৯৯৫)
৩. নৌকা (১৯৯৬)
৪. জয় আসবে (২০০৬)
৫. নৌকাই শক্তি (২০০৮)
৬. MUJIB 100 SONGS(২০২২)

এ ছাড়াও দেশের বিভিন্ন স্থানে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনগুলো আয়োজিত বড় বড় বিভিন্ন অনুষ্ঠানে সঙ্গীতের মাধ্যমে তিনি তার কর্তব্য ও দায়িত্ব পালন করেছেন। যার ফলশ্রুতিতে খালেদা জিয়ার সরকার তাকে একাধারে পাঁচ বছর বাংলাদেশ টেলিভিশনে গান গাইতে নিষেধ করে দেয়, আবার ২০০১ সালে বিএনপি জামাত জোট সরকার ক্ষমতায় এসে পুণরায় বাংলাদেশ টেলিভিশনে তার গান গাওয়া নিষিদ্ধ করে দেন।

তিনি সরকারি তালিকাভূক্ত একজন নিয়মিত কণ্ঠশিল্পী। বিএনপি-জামাত জোট সরকার তাকে বাংলাদেশ টেলিভিশনে সুদীর্ঘ ১২ বছর গান গাওয়া নিষেধ করে তার অধিকার খর্ব করেছে। যার ফলে তিনি সব দিক দিয়েই ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন এবং তার পরিবারের প্রতি নানা রকম অত্যাচার নির্যাতন করেছে।

লিসা কালামের বাবা একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল কালাম বিএনপি-জামাত জোট সরকারের অত্যাচারে দীর্ঘ দুই বছর দেশের বাইরে আত্মগোপনে ছিলেন। তাদের ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। তবুও তাকে বঙ্গবন্ধু ও জননেত্রীর আদর্শ থেকে বিচ্যুত করতে পারেনি।
বিশেষ ভাবে উল্লেখ্য যে লিসা কালামই সর্বপ্রথম ১৯৯২ সালে শিশু বয়সে বাংলাদেশ সফররত এ্যামনেষ্টি ইন্টারন্যাশনালের চেয়ারম্যান প্রফেসর মিঃ রস ড্যানিয়েলের নিকট বঙ্গবন্ধু হত্যার সুষ্ঠ বিচারের দাবি করে একটি স্মারকলিপি প্রদান করেন।

যা ঐ সময়ের দেশের শীর্ষ স্থানীয় বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল। এছাড়াও বিশ্ব শান্তি পরিষদের চেয়ারম্যান, ভারত, রাশিয়া, বৃটেন, জার্মান রাষ্ট্রদূতের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের দাবীতে বিশ্ব জনমত গঠনের উদ্দেশে স্মারকলিপি প্রদান করেছেন।
তিনি বর্তমানেও সঙ্গীতের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধ এবং বঙ্গবন্ধু ও জননেত্রীর আদর্শ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে জননেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশিত পথে নিজেকে আত্মনিয়োগ করেছেন।

বিগত সময়ে তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির অন্যতম সদস্য হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা পালন করেছিলেন। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে সঙ্গীত পরিবেশন করায় তিনি সঙ্গীতে বঙ্গবন্ধু পুরস্কার পেয়েছেন। লিসা কালাম বহুবার বঙ্গবন্ধুর মাজার জিয়ারত করেছেন, তার মধ্যে ১৯৯২ সালে সর্বপ্রথম জননেত্রী শেখ হাসিনার সাথে টুঙ্গীপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর মাজার জিয়ারত করেছেন।

১/১১ এর পূর্বে অনেকবার তিনি ঢাকার রাজপথের বিভিন্ন মিছিলে অত্যাচারের শিকার হয়েছেন এবং ঐ সময়ে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনসমুহের বিভিন্ন মঞ্চে দেশাত্মবোধক প্রতিবাদী ও জ্বালাময়ী সঙ্গীত পরিবেশন করে স্বৈরশাসকদের বিরুদ্ধে আন্দোলনকে বেগবান করেছেন।

লিসা কালাম বঙ্গবন্ধু ও জননেত্রী শেখ হাসিনার উপর গানের যে ক্যাসেট ও ভিসিডিগুলো প্রকাশ করেছেন সেগুলো উদ্বোধন করেছেন জাতির জনক, বঙ্গবন্ধুকন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বর্তমানে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় উপ কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

এক প্রশ্নের উত্তরে আওয়ামী লীগ নেত্রী ও বিখ্যাত সঙ্গীত শিল্পী লিসা কালাম বলেন, আমি জননেত্রী শেখ হাসিনা ও জাতীয় নেতৃবৃন্দের উপস্থিতিতে বিভিন্ন বড় বড় অনুষ্ঠানে সঙ্গীত পরিবেশন করেছি যা সবাই অবগত আছেন। আমি পারিবারিকভাবেই বঙ্গবন্ধুর আদর্শের একজন সৈনিক। আমার দাদা আওয়ামী লীগের রাজনীতি করতেন। আমার বাবা জেলা ছাত্রলীগের তুখোর ছাত্রনেতা ছিলেন।

তিনি ১৯৬৪ সাল থেকে ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন। যার কারনে ময়মনসিংহ জেলার ত্রিশাল উপজেলার কানিহারীতে সর্বপ্রথম পাকিস্তান সেনাবাহিনী আমাদের বাড়ীঘর লুটপাট করে ও পুড়িয়ে দেয়। আমার বাবা মুক্তিযোদ্ধে যাওয়ার কারণে আমাদের সহায়-সম্পত্তি রাজাকাররা দখলে করে নিয়েছিল। দেশ স্বাধীনতার পরে আমার বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ আবুল কালাম জেলা ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতৃত্ব দেন।

তিনি ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী যুবলীগের সংগঠনিক ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন দীর্ঘ পাঁচ বছর। স্বাধীনতার পর ১৯৭৪ সালে সিরাজ সিকদার বাহিনী আবার আমাদের বাড়ি লুটপাট, ভাংচুর, মারধর, নির্যাতন করে ও অবশেষে বাড়ী ঘর পুড়িয়ে দেয়। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু আমার বাবাকে খুব আদর স্নেহ করতেন। যার ফলে আমাদের পরিবার এবং এলাকার মানুষকে চরমপন্থীদের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য আমাদের বাড়ীতে পুলিশ ও রক্ষীবাহিনীর ক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছিল। যার জন্য পারিবারিকভাবে আমরা সবাই বঙ্গবন্ধুর কাছে ঋণী ও কৃতজ্ঞ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *