আহসান হাবীব স্টাফ রিপোর্টারঃ
লক্ষ্মীপুরের প্রবীণ সাংবাদিক মরহুম এম এ মালেক এর ৩য় মৃত্যু বার্ষিকী ৯ এপ্রিল । গত- ৯ এপ্রিল ২০১৮ইং সালের এই দিনে তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু বরণ করেন । মৃত্যু কালে তিনি ৮ ছেলে ৩ মেয়ে রেখে যান । এম এ মালেক ছিলেন এক সময়ের তুখোড় বক্তা, ও তীক্ষ্ণ মেধার অধিকারী । প্রবীণ সাংবাদিক এম এ মালেক “দৈনিক কিষান” পত্রিকার তৎকালীন ষ্টাফ রিপোর্টার, “দৈনিক আজাদী” পত্রিকার লক্ষ্মীপু্র জেলা প্রতিনিধি, দৈনিক স্ফুলিঙ্গ পত্রিকার জেলা প্রতিনিধি, নোয়াখালী জেলা সাংবাদিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক এর দ্বায়িত্বে ছিলেন, তিনি ১৯৮১ইং সালের ৫ জানুয়ারি বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ মনির বিদ্যুৎ এর প্রস্তাবনায় লক্ষ্মীপুর প্রেসক্লাব প্রতিষ্ঠা করেন । প্রতিষ্ঠাতা আহবায়ক ও সাধারণ সম্পাদক মরহুম এম এ মালেক সাহেবের ব্যাক্তিগত চেয়ার ও টেবিল দিয়েই রহমানিয়া প্রেসে প্রেসক্লাব কার্যালয় স্থাপন করা হয় । শুধু প্রেসক্লাব প্রতিষ্ঠা করেই ক্ষান্ত হননি পরবর্তীতে ধীরে ধীরে সাংবাদিক সৃষ্টির কাজেও আত্মনিয়োগ করতঃ দৈনিক সংগ্রাম এর ফখরুল ইসলাম জেহাদী, সাপ্তাহিক সোনার বাংলার হাসানুজ্জামান মাস্টার, অধ্যাপক নাসির উদ্দিন এদের সকলকেই অনুপ্রেরণা ও উৎসাহ প্রদানের মাধ্যমে সাংবাদিকতায় প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়েছিলেন । তৎকালীন সময়ে লক্ষ্মীপুরে শুধুমাত্র ২টি সাপ্তাহিক পত্রিকাই ছিল । মরহুম এম এ মালেক সাহেবের নেতৃত্বে তখন লক্ষ্মীপুর প্রেসক্লাবের প্রথম সংবিধান রচিত হয় । এছাড়াও মালেক ছিলেন লক্ষ্মীপুর জেলা রিপোর্টাস ইউনিটির সভাপতি, লক্ষ্মীপু্র জেলা চেম্বার অব কমার্সের সাধারন সম্পাদক, লক্ষ্মীপু্র কলেজিয়েট উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির একাধারে ২৩ বছরের সাবেক সভাপতি, লক্ষ্মীপু্র প্রগতি স্কুল এন্ড কলেজের প্রতিষ্ঠাতা প্রধান শিক্ষক, বাংলাদেশ মানবাধিকার উন্নয়ন কমিশন এর লক্ষ্মীপু্র জেলা শাখার সাবেক ৩ বারের সফল সভাপতি, মৃত্যু কালীন সময় পর্যন্ত তিনি এসব সংগঠনের সাথে জড়িত ছিলেন । এছাড়াও তিনি মৃত্যু কালীন সময় পর্যন্ত জাতীয় দৈনিক ভোরের পাতা পত্রিকার ব্যুরো প্রধানের দায়িত্বে ছিলেন । লক্ষ্মীপুর জেলা বাসীর কাছে তিনি ছিলেন একজন প্রিয় মানুষ ও সাংবাদিকতার জগতের সাম্যবাদী বিদ্যাসাগর কলম সৈনিক । সাংবাদিকতা জগতে বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ প্রকাশে তিনি ছিলেন সাহসী কলম সৈনিক । খুব সহজে সাধারন মানুষের হৃদয়ে স্থান করে নিতেন এ সাহসী বীরপুরুষ । মরহুম এম এ মালেক লক্ষ্মীপুর রিপোর্টাস ক্লাবের সদস্য, জাতীয় দৈনিক “মাতৃভূমির খবর” পত্রিকার লক্ষ্মীপুর জেলা প্রতিনিধি আমজাদ হোসেন এর পিতা । মরহুম এম এ মালেকের সাংবাদিকতা ও পারিবারিক সংক্ষিপ্ত বিবরণ, প্রবীণ সাংবাদিক মরহুম এম এ মালেক লক্ষ্মীপুর প্রেসক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা আহবায়ক ও সাধারণ সম্পাদক পদে ছিলেন । লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার সমসেরাবাদ গ্রামের হাজী চুন্নি হাওলাদার বাড়ির এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন । তার পিতা ছিলেন সরকারি রেজিষ্ট্রেশন বিভাগের কর্মকর্তা, তারা ৬ ভাই, এবং, ২ বোন, ভাইদের মধ্যে মরহুম এম এ মালেকের অবস্থান ছিল ৩য় । তার সব ভাই-বোন উচ্চ শিক্ষিত বলেও জানা যায় । বড় ভাই মরহুম আবদুল গোফরান ছিলেন সরকারী রাজস্ব কর্মকর্তা । ২য় ভাই এম এ মতিন ছিলেন ১ম শ্রেণীর ম্যাজিষ্ট্রেট ও মুক্তিযোদ্ধা । ৪র্থ ভাই বর্তমানে প্রকৌশলী মো. শাহজাহান বিটিএমসির একজন জেনারেল ম্যানেজার ও চিফ উপদেষ্টা । ৫ম ভাই ডাঃ মো. জাকির হোসেন লক্ষ্মীপুর জেলা সদর হাসপাতালের আরএমও দায়িত্বে ছিলেন । এবং, লক্ষ্মীপুর জেলা (স্বাচিপ) ও বি.এম.এ সভাপতি । বর্তমান আশুরা জেনারেল হাসপাতাল এন্ড মেডিকেল সার্ভিসেস (প্রা:) এর চেয়ারম্যান । ছোট ভাই আবুল আহসান (টেলু) একজন ক্যামিকেল বি.এস.সি ইঞ্জিনিয়ার । মরহুম এম এ মালেক শিক্ষা জীবন শুরু করেন লক্ষ্মীপুর সমসেরাবাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে । প্রাইমারী শেষ করে তিনি ভর্তি হন লক্ষ্মীপুর মডেল হাইস্কুলে । হায়স্কুলে অধ্যয়নরত থাকা অবস্থায় সাংবাদিকতা শুরু করেন ‘দৈনিক আজাদী’ পত্রিকার মাধ্যমে । পরবর্তীতে চৌমুহনী এস এ কলেজে অধ্যয়নকালীন সময়ে দৈনিক পূর্বদেশ, দৈনিক বাংলা, দৈনিক কিষাণে, দৈনিক দেশ বাংলায় ও লেখালেখি করেন । এবং, লক্ষ্মীপুর থেকে প্রকাশিত দৈনিক আল চিশ্ত ও দৈনিক লক্ষ্মীপুর কন্ঠে দীর্ঘদিন সম্পাদনের দায়িত্ব পালন করেন । ষাট দশকের তুখোড় ছাত্র নেতা হিসেবে কেন্দ্রীয় ভাবে নেতৃত্ব প্রদান করেন । মরহুম এম এ মালেক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ঢাকা টিটি কলেজ থেকে বি.এড সমাপ্ত করেন । দীর্ঘ ১৫ বছর সিলেটের ছাতক, এবং, সাভারের দোসাইদ এ.কে. হাইস্কুলে পর্যায়ক্রমে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বে ছিলেন । বি.এড অধ্যায়ন কালীন সময়ে ১৯৭৫-৭৬ সালে ঢাকা টিটি কলেজের ছাত্র সংসদ এর নির্বাচিত জি.এস ছিলেন । তিনি সাংবাদিকতা জীবনে অসংখ্য প্রশিক্ষণ ও কর্মশালায় অংশগ্রহণ করেছিলেন । এবং, মৃত্যু কালীন সময় পর্যন্ত তিনি লক্ষ্মীপুর জেলার সকল সাংবাদিকদের বিপদে আপদে সহযোগিতা করেছেন ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *