নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে আলামিন হত্যার ঘটনায় মা এবং আপন ভাইসহ ৪ জনকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-১১। সোমবার রাতে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ের পূর্ব সনমান্দি এলাকা থেকে তাদের গেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃতরা হলো আল আমিনের মা নাসিমা বেগম, ভাই ইউসুফ, চাচাতো ভাই সৈয়দ হোসেন সাগর এবং প্রতিবেশী কবির হোসেন। র‌্যাবের দাবী পরিবারে সম্মান রক্ষার্থে হত্যা করা হয় আল আমিনকে। মঙ্গলবার র‌্যাব-১১ কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে অধিনায় লেঃ কর্ণেল তানভীর মাহমুদ পাশা এ তথ্য জানান।

সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব-১১ অধিনায়ক জানান, নিহত আলামিনের লাশ উদ্ধারের পর থেকে আমরা এই ঘটনাটি নিয়ে কাজ করছিলাম। কিন্তু এঘটনাটি নিয়ে আল আমিনের পরিবারের লোকজনদের অনিহা ও অসহযোগিতাা পরিলক্ষিত হয়। এতে করে তার মা নাসিমা বেগম এবং ভাই ইউসুফকে সন্দেহ হয় আমাদের।

পরবর্তীতে আমরা তাদেরকে ডেকে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করি। ‘আল আমিন চুরি ও ছিনতাই এর কাজে জড়িত থাকার কারণে তার প্রতি বিক্ষুব্ধ হয়ে চাচাতো ভাই সৈয়দ হোসেন সাগর এবং প্রতিবেশী কবির ও জহির তাকে হত্যার পরিকল্পনা করে। এরই প্রেক্ষিতে গত ১০ জানুয়ারী সন্ধ্যায় আল আমিনকে তার বাড়ি থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার দুরে একটি মাঠে সাগর, কবির, এবং জহির গামছা দিয়ে মুখ বেধে মারধর করে।

পরে সাগর, কবির, জহির এবং আল আমিনের মামা শহিদুল্লাহ আলামিনকে শ^াস রোধ করে হত্যা করে জমির আইলের উপরে রাখা ঘাসের স্তুপের মধ্যে লুকিয়ে রাখে। এই ঘটনা আল আমিনের মা নাসিমা বেগম এবং ভাই ইউসুফ দেখে ফেলায় তাদেরকে ঘটনা প্রকাশ না করার হুমকি দেয় সাগর, কবির, জহির এবং শহিদুল্লাহ। এমনকি তাদেরকে এ বিষয়ে মামলা না করার জন্যও পরামর্শ দেয় তারা। এবং এ ঘটনার তদন্তে কোন রকমের সহযোগিতা না করতে নানাভাবে চাপ প্রয়োগ করে। এমন বক্তব্যই দেয় আলামিনের মা এবং ভাই।

র‌্যাব-১১ অধিনায়ক আরো জানায়, আল আমিন নিহতের ঘটনার পর তার মা বাদী হয়ে অজ্ঞাত নামাদের আসামী করে নারায়ণগঞ্জে সোনারগাঁ থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। কিন্তু পরবর্তীতে আমাদের জিজ্ঞাসাবাদে নাসিমা এবং তার ভাই ইউসুফ ঘটনার যে বর্ণনা দেন তাতে আমাদের সন্দেহ হয় যে তারাও ঘটনার সাথে জড়িত। তাই প্রাথমিকভাবে আমরা তাদেরকে এই মামলায় আটক করি। পরবর্তীতে মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা এই বিষয়টি নিয়ে কাজ করবেন।

র‌্যাবের এই কর্মকর্তা আরো জানান, নিহত আল-আমিন (২২) মুলত এলাকায় চুরি এবং ছিনতাই কাজে জড়িত থাকায় তার পরিবারকে প্রায় সময়ই সমাজের কাছে বিব্রত হতে হতো এবং বারংবার জরিমানা দিতে হতো। এই নিয়ে গ্রামে স্থানীয় মেম্বারকে নিয়ে একাধিকবার সালিশও হয়। তার এরূপ আচরণের জন্য প্রায় সময়ই তার পরিবার তাকে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখতো।

গত ০৯ জানুয়ারী সে শিকল খুলে পালিয়ে গেলে তাকে আর খুঁজাখুঁজি করে পাওয়া যায়নি। আল-আমিন পালিয়ে যাওয়ায় তার পরিবার ও তার প্রতিবেশীরা পুনরায় চুরি ও ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটতে পারে ভেবে তার প্রতি ক্ষুব্ধ হয়। এবং এই ক্ষুব্ধতা থেকেই হয়তো আলামিনকে হত্যার ঘটনাটি তার মা এবং ভাই জেনেও প্রকাশ করে নাই। এবং আলামিনের মা নাসিমা লাশ উদ্ধারের পর অজ্ঞাত নামে মামলাটি করে। আমাদের কাছে প্রাথমিকভাবে মনে হয়েছে পরিবারের সম্মান রক্ষার্থেই এই হত্যা কান্ডটি ঘটানো হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *